হিন্দুত্ববাদের দোসরদের দ্বিমুখী নীতি!

2
1851
হিন্দুত্ববাদের দোসরদের দ্বিমুখী নীতি!

অনেকে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বলে থাকেন, অনেকে আবার বলেন বাংলাদেশ হলো ভারতের সুন্দরী বউ। আবার কেউ কেউ বলেন বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে বৈধ স্ত্রীর মর্যাদা কখনোই পায়নি। বরং বাংলাদেশ হল ভারতের রক্ষিতা। আচ্ছা, বাংলাদেশ না স্বাধীন(!) রাষ্ট্র? তাহলে মানুষ এসব কথা কেন বলে? এর পেছনের কারণ উৎঘাটন করতে হলে ঘাটতে হবে ইতিহাস, দেখতে হবে অতীত। অবশ্য বর্তমানে চোখ বুলালেও আপনার সামনে উদ্ভাসিত হবে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের বাস্তবতা?
উপমহাদেশে হিন্দুত্ববাদীরা ‘রামরাজত্ব’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে। ভারতের মুশরিক সন্ত্রাসবাদী সরকার বিজেপি সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার কাজে এখন মনোযোগ দিয়েছে। হাতে তুলে নিয়েছে গেরুয়া সন্ত্রাসবাদের নেতৃত্বের ঝাণ্ডা। একদিকে আজ তারা কাশ্মীরে হিন্দুত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চূড়ান্ত আঘাত হেনেছে, অপরদিকে বন্ধুত্বের ছলে বাংলাদেশে চলছে তাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ শাসন। মুসলিমদের উপর চলছে হিন্দু্ত্ববাদের দোসরদের প্রকাশ্য নির্যাতন।
আজ বাংলাদেশ নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের কুচক্রান্ত আর অপ্রকাশ্য কোন বিষয় নয়। উগ্র সন্ত্রাসবাদী মুশরিক হিন্দুরা এদেশে বসেই আজ মুসলিমদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে চলেছে, মুসলিমদের হটিয়ে কায়েম করতে চাচ্ছে ‘রামরাজত্ব’। এ বিষয়টি বুঝতে এখন চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের কানে আজ হিন্দুত্ববাদীদের নিকৃষ্ট সেই বাক্যগুলো পৌঁছাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তারা আমাদের ভূমি নিয়ে, আমাদের ধর্ম নিয়ে প্রকাশ্য চক্রান্তে লিপ্ত। বুক ফুলিয়ে তারা বলে বেড়াচ্ছে তাদের চক্রান্তের কথা। আর, হিন্দুত্ববাদের দালাল এদেশীয় শাসকগোষ্ঠী সেসকল ব্যাপারে শুধু নিরব না, বরং হিন্দুত্ববাদীদেরকে সর্বপ্রকারের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
কিছুদিন আগে উগ্র হিন্দু মহিলা প্রিয়া সাহা সারাবিশ্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো বদমাশ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে সাহায্য প্রার্থনা করেছে। কথিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উপর বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপ কামনাকারী প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে ঐ দালাল শাসকগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
৭১’র যুদ্ধের দোহাই দিয়ে এতটা বছর যাবৎ দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনাকারী ঐসকল দালাল শাসকগোষ্ঠী দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে কী প্রতিক্রিয়া দেখালো? বললো, প্রিয়া সাহার বক্তব্য দেশদ্রোহিতা নয়! [১] আমেরিকার কাছে বাংলাদেশের ব্যাপারে মিথ্যা অভিযোগ করা প্রিয়া সাহাকে তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিবে! [২] ভালো কথা! হিন্দুত্ববাদীদের প্রকাশ্য অপরাধও তাদের কাছে মার্জনীয়, দেশের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট মিথ্যাচারও তাদের কাছে রাষ্ট্রদোহিতা নয়! রাষ্ট্রদ্রোহিতা আর জিরো টলারেন্স নীতি কেবল মুসলিমদের বেলায়! তাদের কাছে অপরাধী হলো মুফতি ছানাউল্লাহরা, হিন্দুত্ববাদের মুখোশ উন্মোচন করা মুসলিমরা!
তাদের এসকল দ্বিমুখী নীতি কেবল এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়। হিন্দুত্ববাদীদের পদলেহনকারী এ গাদ্দারগোষ্ঠী প্রকাশ্যে মুসলিমদের উপর চালাচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। বাংলাদেশের মুসলিমদের উপর আরোপ করেছে নানা বিধি-নিষেধ, ধর্মীয় কার্যক্রমকে বলছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম। নাউযুবিল্লাহ। মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করেছে তারা, কেড়ে নিয়েছে কথা বলার অধিকার।
কাশ্মীরে হিন্দুত্ববাদী মুশরিক দখলদার ভারতীয়দের অমানবিক আগ্রাসনের ব্যাপারটি আজ কারো অজানা নয়। এত বেশি দখলদার হিন্দুত্ববাদী সেনা সেখানে মোতায়েন করা আছে যে, বিশ্বের আর কোথাও এর নজির নেই। সম্প্রতি মুশরিক হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকার অতিরিক্ত আরো প্রায় অর্ধলক্ষ সেনা কাশ্মীরে মোতায়েন করেছে, সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে সারাবিশ্ব থেকে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কারফিউ জারি করে কাশ্মীরি মুসলিমদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুমুখে। ঘর থেকে বের হলেই হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর এমন বর্বরোচিত অত্যাচারের প্রতিবাদে আজ সারাবিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় বিক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের মুসলিমগণও ভুলে যেতে পারেননি নির্যাতিত কাশ্মীরি মুসলিমদের। তাই, মুশরিক হিন্দুত্ববাদী ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, সহমর্মিতা জানাচ্ছেন নির্যাতিত মুসলিমদের প্রতি। কিন্তু, এতটুকুও সহ্য হয়নি হিন্দুত্ববাদের দালাল শাসকগোষ্ঠীর রক্ষীদের। কুখ্যাত সামরিক বাহিনী র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেছে, কাশ্মীর ইস্যু নাকি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কাশ্মীরি মুসলিমদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানালে নাকি কুখ্যাত বেনজির কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে! সে আরো দাবি করেছে, ‘দেশের আল্ট্রা ইসলামিকরা ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রয়েছে।’ [৩] মুশরিকদের দালাল এই সন্ত্রাসবাদী বাহিনীরা কি জানে না যে, মুসলিম উম্মাহ এক দেহের মত। এর কোন অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হলে সারাদেহ সেই ব্যাথা অনুভব করে। এই দালালদের জেনে রাখা উচিত, ইসলাম মানবতাকে জাতীয়তাবাদের নিকৃষ্ট বেড়াজালে আবদ্ধ করে রাখে না। এই দালালদের আরো জেনে রাখা উচিত, সাড়ে ১৪০০ বছর আগের ইসলামকেই মুসলিমরা দ্বিধাহীন চিত্তে ধারণ করে আছে । সেখানে তাদের আল্ট্রা নজরদারি কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না, বিইযনিল্লাহ।
হিন্দু্ত্ববাদীদের এই দালালরা তাদের প্রভু মুশরিকদের সন্তুষ্ট করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই, মুশরিক হিন্দুদের আগ্রাসী নীতি, প্রকাশ্য উগ্র বক্তব্য, হুমকি তাদের নজরে আসে না। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশের এক উগ্র হিন্দু তার পূর্বসুরীদের মতই বুক ফুলিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের ‘রামরাজত্বের’ অংশ হিসেবে দেখার বাসনা প্রকাশ করেছে। ঐ উগ্র মুশরিক হিন্দু বলেছে, তারা বাংলাদেশকে ভারতের অংশ করে ছাড়বে। [৪]
কিন্তু, এ কথা র্যাবের ডিজি বেনজিরের কানে পৌঁছে না, তাদের চোখ এগুলো দেখে না, দেশদ্রোহের সংজ্ঞার সাথে এ কথা মিলে না! তারা দেখে কোন হুজুর, কোন মুসলিম ফেসবুকে হিন্দুত্ববাদীদের চক্রান্ত সম্পর্কে কথা বলে, উন্মোচন করে দেয় হিন্দুত্ববাদের মুখোশ! যেন তাকে বন্দী করে রাখতে পারে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে!
এভাবেই, হিন্দুত্ববাদের দালাল শাসকগোষ্ঠী একদিকে মুসলিমদের বেঁধে রেখেছে নানা বিধি-নিষেধের বেড়াজালে, অপরদিকে নমনীয়তা প্রদর্শন করছে উগ্র সন্ত্রাসবাদী মুশরিক হিন্দু গোষ্ঠীর প্রতি।
হে প্রিয় উম্মাহ!
একটি মৌলিক কথা জেনে নিন, হিন্দুত্ববাদী ভারত বাংলাদেশের ভূমি চায়, এর মুসলিম অধিবাসীদের না। যে নীতি তারা কাশ্মীরে প্রয়োগ করছে, এখানে এর ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। আমরা মুসলিম অধিবাসীরা হিন্দুত্ববাদের বিষাক্ত ছায়াতলে আশ্রয় নিতে চাই না, মুশরিকদের হাতে আমাদের দায়িত্ব তুলে দিতে চাই না। কিন্তু, দেশের দালাল শাসকগোষ্ঠী তাদের প্রভু হিন্দুত্ববাদী ভারতের কাছে এ দেশকে তুলে দিচ্ছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের এজেন্ডা এদেশে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আর, মুসলিমদের উৎখাত করে ‘রামরাজত্ব’ প্রতিষ্ঠা করাই হলো তাদের সেই এজেন্ডা!
হে প্রিয় উম্মাহ! আজ শত্রু আপনাদের ঘিরে আছে, চূড়ান্ত আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যাদের হাতে আপনার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন, তারা তো আপনার শত্রুদেরই প্রকাশ্য দোসর। তারা আপনাকে উগ্র হিন্দুত্ববাদের কবল থেকে বাঁচাবে না, আপনার ঘরকে তারা নিরাপত্তা দিবে না, আপনার মসজিদের প্রতিরক্ষায় তারা এগিয়ে আসবে না। বরং, তারা সুস্পষ্টভাবেই ঘোষণা দিয়েছে, তাদের প্রভু হিন্দু্ত্ববাদী ভারতের প্রতিই তাদের সমর্থন থাকবে। [৫] সুতরাং, আপনার ঘর, আপনার পরিবার, আপনার ধর্ম, আপনার ভূমি রক্ষায় আপনাকেই নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ, দাঁড়াতে হবে হিন্দুত্ববাদের মোকাবেলায়। প্রস্তুত হতে হবে। এমন অবস্থায়ও আর কত গাফেল হয়ে থাকবেন? আজও কি আপনি জাগবেন না?
আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’য়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের তৌফিক দান করুন।

ফুটনোট:

[১] https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1605455/

[২] https://www.bbc.com/bengali/news-49062414

[৩] http://www.banglatribune.com/national/news/525009/

[৪] https://www.facebook.com/wahid.u.nabi.1/videos/10219467906078591/

[৫] https://www.tdnbangla.com/news/international/if-the-war-with-pakistan-goes-to-india-the-country-will-be-for-india-said-bangladeshs-home-minister/


লেখক: খালিদ মুন্তাসির, সম্পাদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।

 

2 মন্তব্যসমূহ

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধমালউন হিন্দুদের নিশানায় পবিত্র মুসলিমাহ!
পরবর্তী নিবন্ধমাজলুম উম্মাহর ঈদ উৎযাপন!