হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপির দীর্ঘমেয়াদী দুটি উদ্দেশ্য আছে। প্রথমটি হল ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। দ্বিতীয়টি হল অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা। এ লক্ষগুলো অর্জনের জন্য কয়েক দশক ধরে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি সাজিয়ে আসছে আরএসএস-বিজেপি। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে দ্রুতগতিতে একের পর এক চাল চেলে যাচ্ছে মোদি, যার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল হিন্দু রাষ্ট্র ও অখণ্ড ভারত। আসামের এনআরসি, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ এবং সারা ভারত জুড়ে একই সিভিল কোড – এসবগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো এ দীর্ঘমেয়াদী লক্ষগুলো অর্জন করা। এনআরসি হয়ে গেছে, সম্প্রতি হয়ে গেল নাগরিকত্ব বিলও। সামনে আসবে সিভিল কোড এবং সম্ভবত পশ্চিম বঙ্গে এনআরসির ডামাডোল।
আরএসএস -এর গেরুয়া-নকশা
কিছুদিন আগে এনআরসির মাধ্যমে বাতিল ঘোষণা করা হয় আসামের বিপুল সংখ্যক মুসলিমদের নাগরিকত্ব। কিন্তু এনআরসির শর্তের ফাঁদে পড়ে নাগরিকত্ব হারিয়ে ফেলে বহু সংখ্যক হিন্দুও। তারপর নিয়ে আসা হলো ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’। এর মাধ্যমে হিন্দুদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার রাস্তা খুলে গেলো। সেই সাথে তৈরি হলো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে হিন্দুদের সংখ্যা বাড়ানোর পথও। ভারতের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার জটিল হিসাবনিকাশে তৃতীয়বারের মতো জিততে হলে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতে জিতে আসতে হবে বিজেপির। নাগরিকত্ব বিলের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া হিন্দুরা হবে বিজেপির অনুগত ভোটার। তবে এই হিসাবে জিততে হলে সরিয়ে দিতে হবে বিপুল পরিমাণে মুসলিমকে, আর বিভিন্ন রাজ্যে বাড়াতে হবে বিজেপির অনুগত হিন্দু ভোটারের সংখ্যা। তাই একদিকে এনআরসির মাধ্যমে মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হলো, অন্যদিকে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন – এর মাধ্যমে সুগম হলো বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দুদের সংখ্যা বাড়ানোর পথ। এভাবে চতুর ও ধারাবাহিক পদক্ষেপে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আরএসএস। কিন্তু ঘুমিয়ে আছে উপমহাদেশের মুসলিমরা।
অবহেলা-উপেক্ষা
ভারতের পরিস্থিতি দিন দিন অশুভ মোড় নিচ্ছে। বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী ও পর্যবেক্ষক এরই মধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠায় বিজেপির কর্মকাণ্ড থেকে পাওয়া যাচ্ছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যার প্রস্তুতির ইঙ্গিত। তাদের মতে আসাম ও কাশ্মীরে সম্পন্ন হয়ে গেছে গণহত্যার সকল প্রস্তুতি। কিন্তু উপমহাদেশের মুসলিমরা এখনো বেখেয়াল। ইতোমধ্যে সীমান্ত দিয়ে শঙ্কিত মুসলিমদের বাংলাদেশে প্রবেশের খবর আসছে। কিন্তু গণহত্যা শুরু হলে এটি বন্যায় পরিণত হবে। কিছুদিন আগেই আমাদের চোখের সামনে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো হয়েছে গণহত্যা। সবগুলো তথ্য তখনো আমাদের সামনে ছিল, কিন্তু আমরা উপেক্ষা করে গেছি। আজ আরেক গণহত্যা কড়া নাড়ছে আমাদের দরজায়। দীর্ঘ নিদ্রার পর বাধ্য হয়ে হয়তো এখন ঘুম ভাঙবে ভারতের মুসলিমদের। কিন্তু বাংলাদেশ আমরা এখনো ব্যস্ত তুচ্ছ সব বিষয়ে। দুনিয়ার ভালোবাসা, আর সেক্যুলার রাষ্ট্রের ভরসায় আমরা আজ পরিণত হয়েছি নিশ্চিন্ত মনে জবাইয়ের জন্য অপেক্ষা করা ফার্মের মুরগীতে।
করণীয়
জাতীয়তাবাদের বিষে আসক্ত হয়ে আমরা ভাবছি, ভারতের এ সমস্যা আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। কিন্তু বাস্তবতা হল ভারতে বিপর্যয় শুরু হলে তা আমাদেরকে কেবল স্পর্শ করবে না, বরং ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলিম আর ভারতের ২৫ কোটির মুসলিমের ভবিষ্যৎ আলাদা নয়। বরং একই সূত্রে গাঁথা। একই কথা প্রযোজ্য পাকিস্তানের মুসলিমদের ক্ষেত্রেও। উপমহাদেশের সকল মুসলিমদের বাস্তবতা একই। তাই আগ্রাসী হিন্দুদের এ পরিকল্পনার আলোকে সাজিয়ে নিতে হবে আমাদের করণীয়। ব্রিটিশদের টানা সীমান্ত আর ৭১-কেন্দ্রিক স্বল্পমেয়াদী চিন্তার জগত থেকে বের হয়ে এসে আমাদের ভাবতে হবে বাস্তবতা নিয়ে। সেক্যুলার সংবিধান আর গান্ধীবাদের মিছে বুলি ছুড়ে ফেলে আকড়ে ধরতে হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর স্লোগান। গণতন্ত্র আর মিটিং মিছিলের পরিবর্তে বেছে নিতে হবে আত্মরক্ষা ও সংগ্রামের নববী পথ —জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। আর এ পথেই আছে মুক্তি, এ পথেই আছে সম্মান। এ সত্য আমরা যতো দ্রুত বুঝতে পারবো, ততোই আমাদের মঙ্গল।
আল্লাহ আমাদের বুঝ দান করুন, আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তুলুন।
জাযাকুমুল্লাহ প্রিয় শাইখ, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম জাযা দান করুন।
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন, এবং আমাদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তুলুন,
daly newspaper er moto eta soranor kono sistem thakle vaiera jene setar poise kaj koren
allah subhanahu taala vai der sokol procesta ke kobul korun . amin.