ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনবিরোধী চলমান বিক্ষোভে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়িয়েছে। এ আইনের প্রতিবাদে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতার পর বিক্ষোভ গড়িয়েছে সপ্তম দিনে। বেশি উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে উত্তর প্রদেশ, আসাম ও দিল্লিতে। এ তিন রাজ্যে শনিবারও সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। উত্তর প্রদেশের রামপুরে বিক্ষোভ-সংঘর্ষে শনিবার আরও এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ নিয়ে এই রাজ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে ১৫ জন। এর আগে আসামসহ বিভিন্ন রাজ্যে সহিংসতায় মারা গেছে সাতজন।
গত ১২ ডিসেম্বর ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভরত অবস্থায় ২ জন প্রাণ হারায়। শুক্রবার জুমার নামাজের পর সংঘর্ষে নিহত হয় ৯ জন। শনিবার রাজ্যের রামপুরের ঈদগাহ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর সেখানে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে পাথর ছুড়লে তাদের লক্ষ্য করে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। সবমিলে উত্তর প্রদেশে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে।
বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে অন্তত এক হাজার জনকে। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশেই ৭০৫ জন আটক হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, বিহার, গুজরাট, কেরালা, মেঘালয়সহ বিভিন্ন রাজ্যে নাগরিক আইনের প্রতিবাদে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর উত্তর প্রদেশে সহিংসতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে বৃহস্পতিবার লক্ষ্ণৌ ও সামভালে একজন করে নিহত হয়। পুলিশ জানায়, মিরুত এলাকায় চারজন, ফিরোজাবাদ ও বিজনুর এলাকায় দুইজন করে, সামভাল, কানপুর, বারাণসী ও লক্ষ্ণৌতে একজন করে মারা গেছে। শনিবার সহিংসতার আবহেই নতুন করে বিক্ষোভ দেখা যায় উত্তর প্রদেশের রামপুরে। পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা এগোতে থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পুলিশের ওপর পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। সংঘর্ষের পর থেকে এখানে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ আছে।
এর আগে ১২ ডিসেম্বর আসামে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সে সময় পুলিশের গুলিতে তিন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরও দুই জনের।
১৯ ডিসেম্বর কর্নাটকের ম্যাঙ্গালুরুতে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীরা ম্যাঙ্গালুরু নর্থ থানা দখল করতে এলে ফাঁকা গুলি চালানো হয়। তবে সে সময় ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও বার্তায় পুলিশকে সরাসরি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে দেখা গেছে। ওই দিনের সংঘর্ষে ২ জন প্রাণ হারায়। (তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, এই সময়, এনডিটিভি)
এদিকে গত শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সন্ত্রাসী যোগী আদিত্যনাথ বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রতিশোধ নেয়া হবে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌ ও সামবালে বিক্ষোভে সহিংসতায় তিন জন মারা যাওয়ার পর শুক্রবার পুরো উত্তর প্রদেশই থমথমে হয়ে পড়ে। প্রায় ৩৫০ জনকে আটক করে পুলিশ।
জুমার নামাজ ঘিরে নেয়া হয় কড়া ব্যবস্থা। সভা সমাবেশের ওপর জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা। তা অমান্য করে নামাজের পর রাজ্যের ১৩টি জেলায় শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ। রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ।
উল্লেখ্য, ভারতে গত ১২ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) কার্যকর হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ)। এতে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনটিকে মুসলিমবিরোধী আখ্যা দিয়ে ভারতজুড়ে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ চলছে। বিক্ষোভের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে উত্তর প্রদেশ।
সূত্র: দ্যা ওয়াল।
গাজওয়াতুল হিন্দ শুরু হচ্ছে।
গাজওয়াতুল হিন্দ শুরু হচ্ছে।