২০১৯ সালের ১১ই ডিসেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে পাস হয় মুসলিমবিরোধী সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) বিল। এই আইন ছিল হিন্দুদের ইসলামবিদ্বেষের চরম বহিঃপ্রকাশ। দেশছাড়া হওয়ার হুমকিতে পড়া মুসলিমরা তাই আন্দোলন শুরু করেন ভারতজুড়ে।
তখন থেকেই সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে সরাসরি গুলি চালানোর হুমকি দিয়ে আসছে মালাউন হিন্দু নেতারা। সেই ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসী হিন্দু বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র গত ২৩শে ফেব্রুয়ারী দিল্লির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা জাফরাবাদে বিকাল ৩টায় জড়ো হওয়ার জন্য হিন্দুদের প্রতি আহ্বান জানায়। এরপরই, ইট-পাথর, লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুসলিমদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মুশরিক হিন্দুরা।
বেছে বেছে মুসলিমদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির গেট ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে মুসলিমদের উপর অত্যাচার চালায় এবং মুসলিম নারীদের সম্ভ্রমহানী করে মুশরিক বাহিনী। মুসলিমদের শরীরে এসিড নিক্ষেপ করা হয়। মুশরিক হিন্দুরা মুসলিমদের দোকানপাট ভাঙ্গচুর করে এবং সম্পত্তি লুট করে নিয়ে যায়। আগুন লাগানো হয় বহু মসজিদে, মসজিদের মিনারে উত্তোলন করা হয় হিন্দুদের হনুমান পতাকা।
‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় রাস্তায় নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় মুসলিমদেরকে। এখন পর্যন্ত পত্রপত্রিকার হিসাব মতে কমপক্ষে ৪২জন নিহত হয়েছেন, আর অন্যান্য সূত্রে এ সংখ্যাটা ৫০-এর উপর। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরো কয়েকশত মুসলিম।
ভাবছেন পুলিশ কী করেছে?
পুলিশও মুসলিমদের বুকেই গুলি চালিয়েছে। আর, হিন্দু সন্ত্রাসীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করে গেছে। হিন্দু সন্ত্রাসীদের পরিচয় গোপন করতে, সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গেছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী পুলিশ বাহিনী। ১৩ হাজার ২০০ ফোন পেয়েও নিষ্ক্রিয় ছিল দিল্লি পুলিশ! মূলত, রাজপথে পুলিশের সামনেই মুসলিমদেরকে হত্যা করেছে হিন্দুরা।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক সাংবাদিক হিন্দুদের হাত থেকে একজন মুসলিমকে বাঁচাতে পুলিশকে অনুরোধ করেন। কিন্তু, সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী কোনো ধরণের প্রতিবাদ না করে, নিশ্চুপ ছিল। অপর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ বাহিনী প্রথমে মুসলিমদের বাড়িঘরে ঢুকে নির্যাতন করেছে, আর পুলিশের পেছন পেছন হিন্দু সন্ত্রাসীরা মুসলিমদের ঘরে ঢুকে পড়ছে। হিন্দুত্ববাদী পুলিশের এরকম বহু ভিডিও ছড়িয়ে আছে অনলাইনজুড়ে।
সমাধান যে পথে
ভারতে মুসলিমদের উপর চালানো গণহত্যা এটাই প্রথম নয়। ভারতে মুসলিম গণহত্যার ইতিহাস বেশ পুরোনো। মুসলিমদের উপর এখনো চলছে গণহত্যা, চলছে গেরুয়া সন্ত্রাস। কিন্তু, হিন্দু সন্ত্রাসীদের কবল থেকে রক্ষা পেতে মুসলিমরা কী করছে? মুসলিমদের সমাধান কীভাবে আসবে?
আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে নববী সুন্নাহ অনুযায়ী যুদ্ধ করা ব্যতীত দুনিয়া-আখিরাতে সফলতা লাভ করা যাবে না। ‘রক্তের বদলে রক্ত, ধ্বংসের বদলে ধ্বংস। আর, এখন কথা হবে তরবারির ভাষায়’—এই কথার উপর আমল করতে না পারলে মুশরিকদের রুখতে পারা যাবে না। কিন্তু, এই সত্য মুসলিমদের কাছ থেকে মিডিয়া সন্ত্রাসের মাধ্যমে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, মুসলিমদের হৃদয়ে বপন করা হয়েছে সেক্যুলারিজমের বিষ। সেক্যুলারিজমের বিষাক্ততা মুসলিমদেরকে আজ কাপুরুষ বানিয়ে ছেড়েছে। কুতুবুদ্দীন আইবেকের দিল্লি তাই জ্বলছে।
মুশরিকদের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার সাহস করতে পারেনি মুসলিমরা। তাই বলে দিল্লি পরাধীন থেকে যাবে—এমনটা কল্পনা করা যায় না। কেননা, মুসলিমরা বীরের জাতি। ইতিহাস বলে, এ জাতি কেবল মার খেতে নয়, দিতেও জানে। কাপুরুষতার পোশাক ছিড়ে এ জাতির হুংকার দিল্লির আকাশ-বাতাসকে শীঘ্রই প্রকম্পিত করবে, দিল্লি ফের শুনবে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি, বিইযনিল্লাহ। দিল্লির মিনারে ইসলামের ঝাণ্ডা উড়াতে মাহমুদ গজনবীর উত্তরসূরীরা অস্ত্র তুলে নিবে—এই প্রত্যাশাতে বুক বেঁধে আছে মুসলিম উম্মাহ।
লেখক: আহমাদ উসামা আল-হিন্দ, সম্পাদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।