রমাদান এবং আমাদের করণীয়
___________________________
বছর ঘুরে আমাদের মাঝে উপস্থিত শাহরু রমাদান। রমাদানকে ফলপ্রসূভাবে কাটাতে প্রয়োজন পূর্ব পরিকল্পনা। তাই, এখনি ঠিক করে ফেলুন আপনার রমাদান-শিডিউল।
হাদিসের একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘ব্যবসায়ী মহলের বিশেষ একটি মৌসুম থাকে যখন তাদের ব্যবসা হয় খুব জমজমাট ও লাভজনক। সে মৌসুমে বৎসরের অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আয় হয়। আখেরাতের ব্যবসায়ীদের জন্য পরকালীন জীবনের জন্য সওদা করার উত্তম মৌসুম হল এই রমযান মাস। কেননা এ মাসে প্রতিটি আমলের অনেক গুণ বেশি ছওয়াব পাওয়া যায়। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘রমযানের ওমরা হজ্জ সমতুল্য।’ (জামে তিরমিযি, হাদিস ৯৩৯)
১. সিয়াম পালন করা :
এ পবিত্র মাসে আমাদের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হলো প্রতিটি সিয়াম ইমান ও ইহতিসাবের সাথে পালন করা। রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান এবং ইহতিসাবের সাথে রমাদানের সাওম পালন করবে, তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি : ৩৮)
ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ইহতিসাবের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ইহতিসাব মানে কেবল আল্লাহর কাছ থেকেই পুরস্কারের আশা করা।’
২. কুরআন-হাদিসের সাথে সম্পর্ক গভীর করা:
রমাদান মাস কুরআনের মাস; কুরআন নাযিলের মাস। কুরআনের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলুন। কুরআন তিলাওয়াত করুন, তাফসির অধ্যয়ন করুন। প্রতিদিন কুরআনের কিছু অংশ হিফয করুন। প্রতিদিন অন্তত একটি নতুন হাদিস পাঠ করুন; সম্ভব হলে মুখস্থ করুন। পারিবারিকভাবে কুরআন-হাদিসের দারস ও তা’লিমের আয়োজন করুন।
৩. কিয়ামুল লাইলে যত্নবান হওয়া:
কিয়ামুল লাইল বা তারাবিহ আদায়ে যত্নবান হোন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান এবং ইহতিসাবের সাথে রমাদানে কিয়াম করবে, তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি : ৩৭)
৪. তাওবা ইস্তিগফার বাড়িয়ে দেওয়া :
রমাদান মাস ক্ষমার মাস। মহান আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ এ মাস। আল্লাহ তায়া’লার ক্ষমা প্রাপ্তির আশায় আমাদের উচিত বেশি বেশি তাওবা ইস্তিগফার করা। যেখানে রাসুল সা. স্বয়ং দৈনিক ৭০ হতে ১০০ বার তাওবা করতেন, সেখানে আমাদের কতোবার তাওবা করা উচিত, তা নিশ্চয়ই অননুমেয় নয়।
হাদিস শরিফে এসেছে- ‘আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ হাদিস ২১৬৯৮)
তাই এমন মাস পেয়েও যে ব্যক্তি স্বীয় গুনাহ মাফ করাতে পারল না তার জন্য স্বয়ং জিবরাইল আ. বদদু’আ করেছেন এবং নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাহমাতুল্লিল আলামিন হয়েও আমিন বলে সমর্থন জানিয়েছেন।
অন্য হাদিসে এসেছে- ‘একদা নবি কারিম সা. জুমআর খুতবা দিতে মিম্বরে উঠে তিন তিনবার আমিন বললেন। খুতবা শেষে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে রাসুল, আপনি এমনটা কেন করলেন? ইতোপূর্বে তো এমনটা করেননি। তিনি উত্তরে বললেন, জিবরাইল এসে আমাকে বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। তখন আমি বললাম, আমিন। অতঃপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমযান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমিন। জিবরাইল আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যার নিকট আমার নাম আলোচিত হল অথচ সে আমার উপর দুরূদ পড়ল না। আমি বললাম, আমিন. (আল আদাবুল মুফরাদ : ২২৫)
৫. ইসলামি সাহিত্য অধ্যয়ন করা :
কুরআন হাদিসের পাশাপাশি ইসলামি সাহিত্য অধ্যয়নে মনোযোগী হোন। এ মাসে কতটি বই পড়বেন, কী কী বই পড়বেন, তার একটি লিস্ট তৈরি করে ফেলুন; একটি টার্গেট সেট করে ফেলুন। প্রতিদিন কতো পৃষ্ঠা পড়লে আপনার টার্গেট পূরণ করতে পারবেন, তা ঠিক করে নিন।
৬. দান সাদাকা বাড়িয়ে দেওয়া :
এ মাসে দান সাদাকা বাড়িয়ে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। দরিদ্রের ঘরে পৌঁছে দিন আপনার দান, সাদাকাহ ও যাকাতের টাকা। মনে রাখবেন, আপনার সম্পদে দরিদ্রদের হক রয়েছে। আর হ্যাঁ, যাকাত বা সাধারণ সাদাকা প্রদানের ক্ষেত্রে মুজাহিদ ভাইদের কথা ভুলে যাবেন না যেনো।
৭. আল্লাহর পথে দা’ওয়াহ প্রদান করা :
নিজে নেক আমল করার পাশাপাশি অন্যের নিকট সে আমলের দাওয়াহ পৌঁছে দেওয়া একজন মুমিনের ইমানি দায়িত্ব। তাই এ মাসে দাওয়াতি কাজের ব্যাপক প্রসার করুন। দাওয়াহ দিন তাওহীদের ; দাওয়াহ দিন ই’দাদের ; দাওয়াহ দিন কিতালের।
৮. ই’দাদকে আঁকড়ে ধরা :
১৭ই রমাদান।ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরের সেই ইতিহাস! আসলে ইসলামের ইতিহাসজুড়ে রমাদান বহু যুদ্ধ-জয়ের সাক্ষী হয়ে আছে। প্রস্তুতি নিন আপনিও। ই’দাদকে ভুলে যাবেন না যেনো। গাযওয়ায়ে হিন্দ কড়া নাড়ছে আপনার দোরগোড়ায়। সুতরাং প্রস্তুতি নিন—আত্মিক, মানসিক, শারিরীক, আর্থিক—সব ধরনের প্রস্তুতি।
৯. লাইলাতুল কদর খোঁজ করা :
রমাদানের শেষ দশকের রাত্রিগুলো—বিশেষকরে বিজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল কদরের খোঁজ করুন। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান এবং ইহতিসাবের সাথে লাইলাতুল কদরে সালাত আদায় করবে, তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি : ২০১৪)
১০. ই’তিকাফ করা :
শেষ দশকের মাসনুন ই’তিকাফ অত্যন্ত ফযিলতের আ’মাল। হাদিস শরিফে এসেছে- ‘নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন।’ (সহীহ বুখারি, হাদিস ২০২১)
১১. লিখিত পরিকল্পনা করা :
একটি লিখিত পরিকল্পনা করে নিন। সেই শিডিউল অনুযায়ী দিনগুলো কাটানোর চেষ্টা করুন। সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করার সর্বাত্মক চেষ্টা করুন।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে রমাদানের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের গুনাহগুলোকে মাফ করে দিন।
আগত রামাদান আপনার জীবনে বয়ে আনুক এক আমূল-পরিবর্তন; এই প্রত্যাশায়…
লেখক: আব্দুল্লাহ আবু উসামা, ইসলামী চিন্তাবিদ
অসংখ্য শুকরিয়া, জাযাকাল্লাহহু আহসানাল জাযা।
ভাই একটা পরমার্শ : রামাদান এবং আমাদের করনীয় শিরোনামটি হলুদ কালার না দিয়ে অন্য কালার দিলে ভাল হয়। পরমার্শ দিয়ে বেয়াদবি করার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।