করোনা সংকটে গ্রাহকের বিদ্যুৎবিল প্রদানের সময়সীমা শিথিল করে সরকার। এ সুযোগে সরকারের আরেক চালে ইচ্ছেমাফিক ভুতুড়ে বিল করে গ্রাহকের কাছে পাঠাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। কোথাও ১০ গুণ, আবারও কোথাও ২০ গুণ পর্যন্ত বাড়তি বিল করা হয়েছে। এমনো গ্রাহক রয়েছেন, যার মাসে বিল আসত সর্বোচ্চ ৫শ টাকা; এবার মে মাসে তার বিদ্যুৎবিল এসেছে ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা!
এদিকে আগামী ৩০ জুন পরিশোধের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অন্যথায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণাও দিয়েছে। করোনার পূর্বে প্রতিমাসের ব্যবহৃত বিলের তুলনায় অতিরিক্ত কয়েকগুণ বিল (গত তিন মাস) পরিশোধে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ পরে তা সমন্বয়ের কথা জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ২-এর মাওনা জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক কামাল পাশা বলেন, এমন হওয়ার কথা নয়। যদি কারও কাছে এমন বিল যায়, তা হলে অফিসে এলে ঠিক করে দেব।
গাজীপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ১-এর মহাব্যবস্থাপক যুবরাজ চন্দ্র পাল জানান, অনেক স্থানে তিন মাসের বিল একসাথে করা হয়েছে বলে বেশি দেখা যাচ্ছে। যদি কেউ আগের বিল দিয়ে থাকেন, তা হলে তা সমন্বয় করে দেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, করোনাকালীন সময়ের কথা বিবেচনা করে সরকার মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের বিদ্যুৎবিল পরিশোধে শিথিলতা প্রদর্শন করে। পরে জুন মাসে তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল একসাথে পরিশোধের নির্দেশ দেয়। নির্দেশনা অমান্যকারীদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানায়। কিন্তু মে মাসের বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকের কাছে পৌঁছলে তাতে নানা ধরনের অসঙ্গতি দেখা যায়। একসঙ্গে তিন মাসের বিল, তার ওপর ভুতুড়ে বিলে তারা এখন নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় গাজীপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ১ ও ২ ও ময়মনসিংহ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অধীন এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকেই গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের মিটার রিডিং আনা সম্ভব হয়নি। এতেই তৈরি হয়েছে এ ধরনের ভোগান্তি।
গ্রাহকদের অভিযোগ মার্চ-এপ্রিলে তাদের গড় বিল দেওয়া হলেও মে মাসের বিলের সাথে আগের দুই মাসের বিল যোগ করা হচ্ছে। এতে বিলের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যাচ্ছে। আগের দুই মাসের বিল অনেক গ্রাহক পরিশোধ করলেও মে মাসের অসামঞ্জস্য বিল নিয়ে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে তাদের মধ্যে। কোথাও ১০ গুণ, আবারও কোথাও ২০ গুণ বাড়তি বিল করা হয়েছে। বিলের সাথে কোথাও নেই মিটার রিডিংয়ের মিল। মিটার রিডারদের গাফিলতি ও স্পটে না গিয়ে ইচ্ছেমতো বিল করা হয়েছে। নানা অমিলে ভুতুড়ে বিলে গ্রাহকদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। এ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস বন্ধ থাকার পরও তাদের বাড়তি বিলের বোঝা ঘাড়ে চেপেছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের আজুগীরচালা গ্রামের মাহিনুর আলম ময়মনসিংহ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির একজন গ্রাহক। প্রতিমাসে তার বিল আসত সর্বোচ্চ ৫শ টাকা। এবার মে মাসে তার বিদ্যুৎবিল এসেছে ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা। কোনোভাবেই তিনি এ টাকার হিসাব মিলাতে পারছেন না। যদিও তিনি আগের মিটারের ইউনিটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন মে মাসে তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন মাত্র ৭০ ইউনিট। অফিসে যোগাযোগ করলে তাকে অভিযোগ করার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে ৩০ জুন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে চিন্তায় পড়েছেন তিনি।
একই এলাকার আনোয়ার হোসেন জানান, ছয় মাসের বিলের সমান মে মাসের বিল তৈরি করে পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ অফিস। এ টাকা না দিলে আবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও দিচ্ছে।
গাজীপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির একজন গ্রাহক দক্ষিণ ছায়াবিথির ফেডরিক মুকুল বিশ্বাস জানান, তিনি মার্চ ও এপ্রিলের বিদ্যুৎ বিল আগেই পরিশোধ করেছেন। মে মাসের বিদ্যুৎ বিল দেখে তো চোখ ছানাবড়া। এখানে যোগ করা আছে আগের দুই মাসের বিলও। বয়স হয়েছে, করোনার এই সময়ে তিনি এমনিতেই ঘর থেকে বের হতে সাহস পান না। এর ওপর এখন দৌড়াতে হবে বিদ্যুৎ অফিসে। এ টেবিল ও টেবিল ঘুরে কতদিন লাগে এর সমাধান করতে তার হিসাব কে করবে?
গাজীপুর রাজেন্দ্রপুর এলাকার ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী জানান, তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিন গত ২৪ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ। এ সময়টাতে তিনি কোনো ধরনের বিদ্যুৎ ব্যবহার করেননি। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ তিন মাসের বিল করে পাঠিয়েছে ১০ হাজার টাকা। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আসলে মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সময়
এমনিভাবে জেলার ৩টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অধীন গ্রাহকরা নানা ভোগান্তি ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অনেকে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে বারবার ধরনা দিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। বিদ্যুৎ অফিসগুলো পরে সমন্বয়ের কথা বলছেন। একবার বিল দেওয়া হয়ে গেলে পরে সমন্বয় কীভাবে হবে এমন প্রশ্ন উঠছে। গ্রাহকদের আরও অভিযোগ রয়েছে, পল্লীবিদ্যুতের মিটার রিডাররা কাজে অবহেলা করে থাকেন। স্পটে না গিয়েই তারা গড় বিল করে পরে সমন্বয় করতে গেলে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়েন।