পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলোতে কথা না বলায় মুসলিম-বিরোধী এজেন্ডাগুলো আরও জোরেসোরে প্রয়োগের ব্যাপারে শক্তি পেয়েছেন মোদি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) এ কথা বলেছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো চীনের শক্তি ও প্রভাব মোকাবেলার জন্য ভারতকে ব্যবহার করতে চায়, এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট মানবাধিকার ইস্যুতে যেভাবে নীতিহীনভাবে অগ্রসর হয়েছেন, সে বিষয়গুলো মুসলিম নাগরিকদের মানবাধিকার দমনের ক্ষেত্রে ভারতের নেতাকে শক্তি দিয়েছে।
নিউজউইকে দেয়া সাক্ষাতকারে এ সব মন্তব্য করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক।
পশ্চিমা দেশগুলোর নিরবতা মোদিকে শক্তি দিয়েছে
রথ আরও বলেন, “মোদি মূলত তার মুসলিম-বিদ্বেষী এজেন্ডা এবং বিক্ষোভ দমনের ইস্যুতে পার পেয়ে গেছেন। এই ইস্যুতে পশ্চিমাদের সমালোচনা না থাকায় সেটা তাকে আরও শক্তিশালী করেছে”।
তিনি বলেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে মোদির প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য এবং মুসলিম বিরোধী সহিংসতার ব্যাপারে তার সহিষ্ণু মনোভাবের কারণেই এগুলো এভাবে চলতে পারছে।
প্রতিবেদনে বলা হয় ২০০২ সালে গুজরাটে মুসলিম-বিরোধী গণহত্যায় ভূমিকার কারণে ব্রিটেন আর যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হন বিজেপির মালাউন মোদি। ওই গণহত্যায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।
এতে বলা হয়, “মোদি সে সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং মুসলিমবিরোধী গণহত্যা তিনি ঘটতে দিয়েছিলেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে”।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, মোদি যে নাগরিকত্ব আইন পাস করেছেন, জাতিসংঘ সেটাকে ‘মৌলিকভাবে বৈষম্যমূলক’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
ভারতের সেক্যুলার সংবিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে এই নাগরিকত্ব আইনে ভারতের প্রতিবেশী তিনটি দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান করা হয়েছে, কিন্তু মুসলিমদেরকে সেখানে বাদ দেয়া হয়েছে।
কাশ্মীর মোদির বিস্তৃত মুসলিম-বিদ্বেষী এজেন্ডার একটা অংশ মাত্র
কাশ্মীরে ভারতের পদক্ষেপের ব্যাপারে রথ বলেন, “কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, সেখানে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ষাঁড়াশি অভিযান, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, এই সব কিছুই বিজেপির আরও বড় মুসলিমবিরোধী এজেন্ডার অংশ মাত্র। মোদি হয় সক্রিয়ভাবে এতে অংশ নেন, অথবা এগুলোকে স্বাধীনভাবে ঘটতে দেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উল্লেখ করেছে যে, গো রক্ষার নামে ক্ষমতাসীন বিজেপি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হামলাকে উৎসাহিত করেছে।
রথ উল্লেখ করেন যে, মূলত পুঁজিবাদী কারণেই পশ্চিমা দেশগুলো এ ব্যাপারে ভারতকে কিছু বলেনি।
তিনি বলেন, “কাশ্মীর আরও বড় মুসলিম-বিরোধী এজেন্ডার একটা অংশ মাত্র, পশ্চিমারা যেটা অগ্রাহ্য করে যাচ্ছে। ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি, গুরুত্বপূর্ণ দেশ। চীনের সাথে পশ্চিমাদের উত্তেজনা বাড়ছে এবং চীনের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় যেহেতু ভারতকে মিত্র হিসেবে দেখা হচ্ছে, সে কারণে ভারতের ব্যাপারে সমালোচনার মাত্রা কমিয়ে এনেছে পশ্চিমারা”।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে মোদির সাথে কথা বলার ব্যাপারে ট্রাম্প পুরোপুরি অনাগ্রহী:
“হাতে গোনা কিছু প্রতিপক্ষ দেশ ছাড়া অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কথা বলতে ট্রাম্প মোটেই আগ্রহী নন। এই দেশগুলো হলো চীন, ভেনেজুয়েলা, ইরান, নিকারাগুয়া এবং কিউবা। মানবাধিকারের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান সম্পূর্ণ নীতিহীন”।