ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখল ইহুদী সন্ত্রাসীদের বর্বর আগ্রাসনের আজ ১২তম বার্ষিকী। উক্ত আগ্রাসনের সময় ১ হাজার ৫ শত ফিলিস্তিনীকে শহিদ এবং ৫ হাজার ৫ শত ফিলিস্তিনীকে রক্তাক্ত (আহত) করেছিলো দখলদার ইহুদীরা।
সময়টা ছিল রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ঈসায়ী সনের দুপুর ১১:০০ টা। ঐদিন দখলদার ইহুদী সন্ত্রাসী বাহিনী বিভিন্ন ধরণের প্রায় ৮০ টি সামরিক বিমান দ্বারা একযোগে গাজা উপত্যকায় বর্বরোচিত বোমা হামলা চালায়। একদিনের বিমান হামলায় শাহাদাত বরণ করেন প্রায় ২২০ জন ফিলিস্তিনি। দখলদার ইহুদীদের এই আগ্রাসনকে ‘আল-ফুরকান যুদ্ধ’ নামে অভিহিত করা হয়। যা ২২ দিন ধরে স্থায়ী হয়েছিল।
দখলদার ইহুদীদের প্রথমদিনের হামলায় হতাহতদের বেশিরভাগই ছিল ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী দলের সদস্য। যাদের মাঝে গাজার ততকালীন গভর্নর আবু আহমেদ আশুরও ছিল।
প্রথমদিন ইহুদীদের এমন বর্বরোচিত আগ্রাসন ও বোমা হামলা তীব্র নিন্দা জানায় মুসলিম রাষ্ট্রগুলো, অপরদিকে বর্বরোচিত এই হামলার প্রতিশোধ নিতে মুক্তিকামী ছোট বড় সব দলগুলোই একযোগে ইহুদীদের লক্ষ্যবস্তুতে ঐদিন রকেট বৃষ্টি চালাতে শুরু করে। যার ফলে ইহুদীরা বাধ্য হয় ৪৮ ঘন্টার যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করতে। কিন্তু ইহুদীরা তাদের সভাব অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির ২৪ ঘন্টা না যেতেই, আন্তর্জাতিক সকল নিয়াম-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পূণরায় গাজায় হামলা চালাতে শুরু করে।
টানা আট দিন ধরে দখলদার ইহুদীদের যুদ্ধ বিমানগুলি গাজা উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে বর্বরোচিত বোমা হামলা চালিয়ে যায়, এসময় বাধ্য হয়ে ফিলিস্তিনী মুক্তিকামীরাও উপত্যকা সংলগ্ন ইস্রায়েলে রকেট ও বোমা হামলা চালিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়।
এরপর দখলদার ইস্রায়েলি ইহুদিরা সামরিক স্থাপনার পরিবর্তে দাতব্য সংস্থা, হাসপাতাল, মসজিদ, স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সহ বেসামরিক লোকদের বাড়িঘর লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাতে শুরু করে। অতঃপর ২০০৯ সালের জানুয়ারীর তৃতীয় দিন থেকে দখলদার বাহিনী গাজায় গ্রাউন্ড আক্রমণ শুরু করে, এসময় তারা কয়েকশো ট্যাঙ্ক, বোমারু বিমান, রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে।
ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞ ও সংস্থাগুলি জারি করা রিপোর্ট অনুসারে, দখলদার ইহুদীরা বিমান ও প্রচলিত অস্ত্রের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার পরে, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছিলেন, বিশেষত সাদা ফসফরাস এবং পাতলা ইউরেনিয়াম, এভাবে ২২ দিন যাবৎ বর্বরোচিত এই বোমা হামলা চালাতে থাকে দখলদার ইহুদীরা। আর এসব নিষিদ্ধ অস্ত্র প্রয়োগের প্রমাণ মিলে শহীদদের মৃতদেহ, এছাড়াও অনেক সাংবাদিক হামলার কিছু দৃশ্য তখন ক্যামেরায় ধারণ করেছিলেন।
ঐবছর গাজায় দখলদার ইহুদীদের আগ্রাসনের ফলে প্রায় ১,৫০০ জন মুসলিম শহিদ হয়েছিলেন, যাদের মাঝে ৪১২টি শিশু ও ১১১ জন মহিলাসহ বেশিরভাগই ছিলো বেসামরিক নাগরিক। এছাড়াও আহত হয়েছিল আরো ৫,৫০০ ফিলিস্তিনী নাগরিক, যাদের মধ্যে অনেকেই এখনো স্থায়ী অক্ষমতায় ভুগছেন। ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল ৩৪ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৬৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ২৭টি মসজিদ ও বেসমারিক নাগরিকদের বহু বাড়িঘর।