আফগানদের মাছ দেওয়ার পরিবর্তে, মাছ ধরতে শেখান: জাবিহুল্লাহ্ মুজাহিদ

ত্বহা আলী আদনান

0
1507
সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ইসলামি ইমারতের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ্ মুজাহিদ, ইস্তাম্বুল।

গত সপ্তাহে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আয়োজিত একটি উলামা সম্মেলনে আলোচনার জন্য আহ্বান করা হয় ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মুখপাত্র মুহতারাম জাবিহুল্লাহ্ মুজাহিদকে (হাফিজাহুল্লাহ)। সেখানে তিনি অর্থনৈতিক সুযোগ ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। সম্মেলনে তুরস্কের প্রখ্যাত উলামা, অন্যান্য কর্মকর্তা এবং দেশটির জাতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন; যাদের বেশিরভাগই ইমারাতে ইসলামিয়ার প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেন।

জাবিহুল্লাহ্ মুজাহিদ তাঁর বক্তব্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিষয়ের উপর জোর দেন। তিনি এই উম্মাহর কর্ণধার আলেমদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ইসলামি বিশ্বের বাজার ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তাদের উপরই। আর তাদেরকে এ দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে হবে। কেননা তাঁরা যদি এর থেকে হাত গুটিয়ে রাখেন, তাহলে ইসলামি বিশ্ব পিছিয়ে যাবে। এসময় তিনি আফগান জিহাদে আলেমদের অবদান, মুসলিমদের বিজয় ও বর্তমান নিরাপদ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আলেমগণ যদি কঠোরভাবে ইসলামি শরিয়াহ্ অনুসরণ করেন, তাহলে জনগণ পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করবে এবং তারা আলেমদের থেকে উপকৃত হয়ে মুসলিম বিশ্বের বিজয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন।

তবে এক্ষেত্রে অত্যন্ত দৃঢ়তা, ধৈর্যশীলতা ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। আফগান মুজাহিদরাও এই বিজয়ের পথে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। আর এতে আলেম ও আমাদের জাতির পূর্ণ সহযোগিতা ছিলো। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আমাদেরকে সফলতা এনে দিয়েছে।

সর্বশেষ তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আফগানিস্তানের অবকাঠামোর উন্নয়নে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখানে আপনারা নির্মাণ প্রকল্পগুলোর পুনর্গঠন, খনি থেকে উত্তোলন, কৃষি এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারেন। সেই সাথে আফগানদের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারেন।
এরপর তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, আফগানদের জন্য মানবিক সাহায্য কোনো ব্যাথার প্রতিকার নয়। তাই আমি বলছি “আফগানদের মাছ দেওয়ার পরিবর্তে, তাদেরকে মাছ ধরতে শেখানো উচিত।”
তবে মানবিক এই সাহায্যগুলোও অনেকটাই লোক দেখানোর মতো। এটি নামধারী কথিত মুসলিম শাসকদের বিভিন্ন পদক্ষেপ থেকে স্পষ্ট। যেমন:

– সম্প্রতি সৌদি আরব ইউক্রেনকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছে, বিপরীতে এখন পর্যন্ত আফগানিস্তানে মাত্র ১১ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।

– সংযুক্ত আরব আমিরাত বর্তমানে খ্রিস্টান ও বিধর্মী দেশগুলোর অন্যতম প্রধান দাতা দেশ। দেশটি এই বছর ইথিওপিয়াকে ১৭১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু বিপরীতে আফগানিস্তানকে মাত্র ১.৯ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে৷

– কাতার, আরব আমিরাত এবং তুরস্ক, যারা মিডিয়াতে মুসলিম উম্মাহর প্রধান ঠিকাদার, আফগানিস্তানকে খাদ্য সহায়তা ছাড়া, আর্থিকভাবে সাহায্য করতে কোথাও দেখা যায় না, যদিও কাতার জিডিপি/ক্যাপিটা পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ। এই দেশগুলো আবার হিন্দু ও খৃষ্টানদের গীর্জা নির্মাণে এবং বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ক্রুসেড যুদ্ধে কাফেরদেরকে শত শত মিলিয়ন সহায়তা দিয়ে থাকে।
এগুলো তো মুসলিম বিশ্বের সামান্য চিত্র মাত্র, কুফফার বিশ্ব বা জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কী ধরনের সাহায্য আসতে পারে তা এগুলো থেকেই অনুমেয়।

তাছাড়া, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান পুনর্গঠনে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হওয়ার চেয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বাসনা থেকেই আফগানিস্তান ইসলামি ইমারতের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, “আফগানদের মাছ দেওয়ার পরিবর্তে, তাদেরকে মাছ ধরতে শেখানো উচিত।”

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসোমালিয়ায় তুর্কি হামলার পালটা জবাব শাবাবের: হতাহত ৪ শতাধিক গাদ্দার
পরবর্তী নিবন্ধএবার নেপালে মসজিদে হামলা করলো হিন্দুরা, লাগালো গেরুয়া পতাকা