আরাকানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষ ছড়িয়েছিল উগ্র বৌদ্ধ সন্যাসীরা। এসব কথিত সন্ন্যাসীরা কয়েক যুগ ধরে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে প্রায় গোটা মিয়ানমারকেই ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী বানিয়েছে। মিয়ানমারকে বৌদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে মুসলিমদেরকে প্রধান অন্তরায় ভাবতে শুরু করে বৌদ্ধরা। ফলে, হিংস্র বৌদ্ধরা ‘শান্তি শান্তি’ আর ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ বলে স্লোগান দিলেও, রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহারে হত্যা ও দেশান্তর করে মিয়ানমারকে বৌদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা।
আর এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক কালে মূখ্য ভূমিকা পালন করে উগ্রবাদী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উইরাথু। উইরাথু দীর্ঘদিন ধরে তার অতি জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামবিরোধী বক্তব্যের জন্য পরিচিত। বিশেষ করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সে বিভিন্ন সভা সেমিনারে প্ররোচনামূলক বক্তব্য রাখে। মুসলিমদের বয়কটের আহ্বান জানিয়ে মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসা ও মুসলিম যুবকদের সাথে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মেয়েদের বিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর ফলে বর্তমান হিন্দুত্ববাদী ভারতের মতো সেখানেও ইসলাম বিদ্বেষ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং এক সময় তা গণহত্যায় রুপ নেয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছিল, তার মূলভিত্তি স্থাপন করেছিল এই উগ্রবাদী উইরাথু। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য ২০১৩ সালে ‘দ্যা ফেস অব বুদ্ধিস্ট টেরর’ বা বৌদ্ধ সন্ত্রাসের প্রতিচ্ছবি শিরোনামে তাকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিন প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
আর এমন বর্বর সন্ত্রাসীকে মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় সম্মাননা দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। সরকারী মুখপাত্রের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এমআরটিভি। এই সন্ত্রাসীকে সম্মাননা দেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমার সামরিক জান্তার ভাষ্য, ‘মিয়ানমার ইউনিয়নের কল্যাণের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছে সন্ন্যাসী উইরাথু।’ এর প্রতিদান হিসেবে তাকে সম্মানসূচক ‘থিরি প্যানচি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির সামরিক শাসক জেনারেল মিন অং হ্লাইং গত ৪ জানুয়ারি সন্ত্রাসী উইরাথুর হাতে “সম্মাননা” তুলে দিয়েছে।
মূলত এর মাধ্যমে আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যার ক্ষেত্রে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সম্মিলিত ঘৃণ্য প্রচেষ্টার প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিল মিয়ানমার জান্তা সরকার।
শুধু মিয়ানমার নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদে মাধ্যমে মুসলিমদের নিধন করা হচ্ছে। এভাবে কাশ্মীরে চলছে দখলদার ভারতীয় সন্ত্রাস, পূর্ব-তুর্কিস্তানে দখলদার চীনের সন্ত্রাস, ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলের সন্ত্রাস। আর এখন নতুন করে ভারতের অভ্যন্তরে শুরু হচ্ছে হিন্দুত্ববাদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।
এভাবে প্রতিটি ভূ-খণ্ডে রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলিমদের ওপর আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। আর মুসলিম ভূ-খণ্ডের নামধারী শাসকগোষ্ঠী এসবের প্রতিবাদ না করে উলটো- যেসব আলেম-উলামাগণ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সতর্ক করছেন, মুসলিমদ জাতিকে জালিমদের প্রতিরোধ করার আহ্বান জানাচ্ছেন- তাদেরকে জঙ্গী-সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে কারাগারে নিক্ষেপ করছে। আর এভাবেই প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী মুসলিমদের বিরুদ্ধাচরণ করে গাদ্দারের তালিকায় নাম লিখাচ্ছে। পাশাপাশি মুসলিমদের ওপর চলমান আগ্রাসনকে আরও দীর্ঘায়িত করছে।
এজন্য অমুসলিম জালিমদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রয়োজনেই নামধারী মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়ানোকে জরুরী হিসেবে দেখছেন হকপন্থী আলেম-উলামাগন।
তথ্যসূত্র:
——–
1. Myanmar’s military honours anti-Muslim monk, frees prisoners-
– https://tinyurl.com/2edxkv46