সমরবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, যারা সশস্ত্র জিহাদের খোঁজ খবর রাখেন, তারা সকলেই জানেন যে, গ্লোবাল জিহাদের মূল রণকৌশলই হচ্ছে গেরিলা যুদ্ধ। কিন্তু অনেকেই হিসাব মেলাতে পারেন না যে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কুফফার বাহিনীর বিপরীতে বাহ্যত জীর্ণ-শীর্ণ মুজাহিদ বাহিনীগুলো কীভাবে টিকে আছে। মুজাহিদগণ শুধু টিকেই আছেন তা নয়, বরং বর্তমান বিশ্বের সুপার পাওয়ারদের নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছেন।
এই আশ্চর্য্যজনক ও অবিশ্বাস্য সফলতার পেছনে রহস্য কী?
শাইখ ইউসুফ আল উ’য়াইরী (রাহঃ) বলেন, “তোমাকে এমন স্থানে এই যুদ্ধ শুরু করতে হবে, যেখানের বেশীরভাগ লোক তোমার সমর্থন করে। অথবা পরে তুমি তাদেরকে তোমার সমর্থক বানাতে পারবে।”
অর্থাৎ, গেরিলা যুদ্ধে সফলতা পেতে হলে যেসকল উপাদান প্রয়োজন, তার মধ্যে জনসমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। একটু চিন্তা করে দেখুন – আপনি কাদের ভূমিতে যুদ্ধ করছেন? কাদের জন্য যুদ্ধ করছেন? আপনি যে জনগণের ভূমিতে, যে জনগণের জন্য যুদ্ধ করছেন, তারাই যদি আপনাকে সমর্থন না করে, আপনি কীভাবে সে যুদ্ধে জয়লাভ করার চিন্তা করতে পারেন?
একটি যুদ্ধে জনসমর্থন কত বড় ভূমিকা রাখে, তার উদাহরণ আমাদের চোখের সামনেই আছে – আফগানিস্তান ও ইউক্রেইন। আফগান জনগণ যদি মুজাহিদদের সমর্থন না করতেন, জান-মাল দিয়ে সহায়তা না করতেন, প্রয়োজনে আশ্রয় না দিতেন, তাহলে কি এ যুগের হুবাল আমেরিকাকে হারানো সম্ভব ছিল? অপরদিকে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব যত ধরনের সাপোর্টই দিক না কেন, ইউক্রেইনের সাধারণ জনগণ যদি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর পাশে না দাঁড়াতো, তাহলে কি ইউক্রেইন রাশিয়ার বিরুদ্ধে এতদিন টিকে থাকতে পারতো?
একই রকম পরিস্থিতি আমরা পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়াতেও দেখতে পাচ্ছি। আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট হারাকাতুশ শাবাব আল মুজাহিদিন খুব সুচারুভাবেই শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম, শায়খ উসামা বিন লাদেন, শায়খ আইমান আল জাওয়াহিরি, শাইখ ইউসুফ আল উ’য়াইরী, শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল লিবি, শায়খ সাইফ আল আদল (রাহঃ) এর মতাদর্শ ও রণকৌশল অনুসরণ করে যাচ্ছেন। মহান আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছায় এর সুফলও তারা সেখানে পাচ্ছেন।
আপনি যদি একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন হারাকাতুশ শাবাব কিন্তু শুধু ময়দানে যুদ্ধ করছে, শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করছে, নতুন শহর বিজয় করছে- এমন নয়। বরং, তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ও বিজিত এলাকাগুলোর জনগণকে আপন করে নিচ্ছেন, নিরাপত্তা দিচ্ছেন, প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছেন – সর্বোপরী শরিয়াহ শাসনের অধীনে পরিচালিত করছেন।
আশ-শাবাব মুজাহিদদের সততা, দায়িত্বশীলতা, শরিয়াহ শাসনের কার্যকারিতা দেখে সাধারণ জনগণও মন থেকে মুজাহিদদের সমর্থন করা শুরু করেছেন। এমন নয় যে, শুধু মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের জনগণই শরিয়াহ শাসন চান। বরং, গাদ্দার সেক্যুলার ও পশ্চিমাদের দালাল শাসকদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের জনগণও বিচার আচারের ব্যাপারে আস্থা রাখেন শাবাব মুজাহিদিনের উপর।
২০২২ এর সেপ্টেম্বরে সেক্যুলার আল জাজিরাতে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে তারা স্বীকার করেছে যে, সোমালি জনগণ দেশের তথাকথিত বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, সুষ্ঠু বিচার পাবার জন্য মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের বাইরে থেকেও সোমালি জনগণ শাবাবের শরিয়া কোর্টে মামলা-মকদ্দমা নিয়ে হাজির হচ্ছেন।
শুধু বিচার ব্যবস্থাই নয়, শাবাব মুজাহিদগণ নিজেদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে শরিয়াহ মোতাবেক দরিদ্র ও হকদার ব্যক্তিদের মাঝে সততার সাথে যাকাত বিতরণ করছেন। গত ডিসেম্বর মাসে আমরা দেখেছি, পশ্চিমা সমর্থিত গাদ্দার বাহিনীর সাথে তীব্র লড়াই চলমান থাকা সত্তেও মুজাহিদগণ যাকাত দিতে দেরি করেননি। হিরান রাজ্যের যাকাত বিভাগ হকদার ব্যাক্তিদের মধ্যে চলতি হিজরি সালের গবাদি পশুর যাকাত বিতরণ করেছেন।
এর বাইরেও, যখনই কোন নতুন এলাকা শাবাব কর্তৃক বিজিত হয়, তখনই মুজাহিদগণ যত দ্রুত সম্ভব সেসব এলাকার মানুষকে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেন। সাম্প্রতিক সময়ে এমন দুটি উদাহরণ আমরা দেখতে পাই।
গত বছরের ১ অক্টোবর শাবাব মুজাহিদগণ হিরান রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মোকাকোরি জেলার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এর পরের দিনই সেই জেলার ৪২০টি পরিবারের মাঝে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এরপর ২৮ নভেম্বর জালাজদুদ রাজ্যের বাহো শহরটি মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে আসে। বিজয়ের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই সেখানকার কমপক্ষে ৪৫০ টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। এগুলো শুধু মুখের কথা নয়, এর তথ্য-প্রমাণ ও ছবিও জিহাদি নিউজ মিডিয়াতে এসেছে।
বিপরীতে পশ্চিমাদের দালাল সোমালিয়ার গাদ্দার শাসকগণ কী করছে?
গত বছরের অক্টোবরে গাদ্দার প্রশাসন ঘোষণা করে যে, শাবাব মুজাহিদদের কোন ধরনের খবর প্রচার করা যাবে না। শাবাবের খবর প্রচার করে এমন সব গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন শুরু করে গাদ্দাররা। এমনকি এ ধরনের সংবাদ পরিবেশনকারী সাংবাদিকদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এতে ‘সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা’র বুলি আওড়ানো প্রতারকদের আসল চেহারা সোমালিয়ার জনগণ খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছে।
এই ঘটনার সপ্তাহ খানেক পরই হিরান রাজ্যের গভর্নর আলী জায়েতে ওসমান সবচেয়ে বর্বরতম, নিকৃষ্টতম ও কাপুরুষোচিত একটি ঘোষণা প্রদান করে। মোগাদিশুর গাদ্দার প্রশাসনিক বাহিনী ও এর “মাওয়ীদ” সম্প্রদায়ের মিলিশিয়াদের নির্দেশ দিয়ে এই কাপুরুষ বলেছে, “আমি চাই আপনি আশ-শাবাবের যোদ্ধাদের ভাই-বোন, স্ত্রী ও মায়েদের হত্যা করুন। এর জন্য প্রয়োজনে আপনাকে আপনার আত্মীয়দেরও হত্যা করতে হবে, যাদের সম্পর্কে আপনি জানেন যে, তারা আশ-শাবাবের সাথে রয়েছে।”
এরপর, মোগাদিশুর ডেপুটি মেয়র আলি ইয়ারে একটি ফেসবুক পোস্টে বলেছে, “আশ-শাবাব যোদ্ধাদের মা ও স্ত্রীদের হত্যার বিষয়ে হিরানের গভর্নরের সাথে আমি একই মত পোষণ করছি।”
স্বাভাবিক বোধ-বুদ্ধি-বিবেক সম্পন্ন মানুষ কখনও এ ধরনের কাপুরুষদের অনুসরণ করতে পারে না। আপনি অবাক হবেন, এই নির্দেশনা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসতে খুব বেশি দেরি হয়নি। মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় সোমালি সশস্ত্র উপজাতিরা গাদ্দার প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দেয় এবং শাবাব মুজাহিদদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। জানা গেছে, এমন ৯টি সশস্ত্র উপজাতি আশ-শাবাবের সাথে যোগদান করেছে।
এটা আজ প্রকাশ্য দিবালোকের মত স্পষ্ট যে, সাধারণ সোমালি জনগণও পশ্চিমাদের দালাল গাদ্দার প্রশাসনের প্রকৃত রূপ অনুধাবন করতে পেরেছে। একই সাথে শাবাব মুজাহিদিন ও শরিয়াহ শাসনের কার্যকারিতা স্বচক্ষে দেখতে পারছেন। ফলে, সাধারণ জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন পাচ্ছেন শাবাব মুজাহিদগণ।
আশা করা যায়, সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন সোমালিয়াতেও আমরা আফগানিস্তানের মতো আরেকটি সফল ইসলামি ইমারাতের উত্থান দেখতে পাবো ইনশাআল্লাহ।
লিখেছেন : আহমাদ ইউসুফ
ইনশাআল্লাহ