আফ্রিকান ইউনিয়নের ছেড়ে যাওয়া শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে আশ-শাবাব

ত্বহা আলী আদনান

0
934

পশ্চিমা সমর্থিত সামরিক জোট ‘এইউ’ (আফ্রিকান ইউনিয়ন) গত মাসে সোমালিয়ার ৭টি শহর থেকে নিজেদের সৈন্য প্রত্যাহার করেছে।প্রত্যাহারের সময় শহরগুলো সোমালি বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের কথা জানানো হয়। তবে পরবর্তীতে জানা গেছে যে, ঐ শহরগুলো থেকে সোমালি বাহিনীকে হটিয়ে এখন এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেছেন হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন।

গত ১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার ভোরে এইউ’র ছেড়ে যাওয়া গেরিলি সামরিক ঘাঁটিতে অতর্কিত সামরিক অভিযান শুরু করেন আশ-শাবাবের ইসলামি প্রতিরোধ যোদ্ধারা। এখানে সোমালি সেনাবাহিনী ও হারাকাতুশ শাবাবের মাঝে তীব্র লড়াই সংঘটিত হয়, এক পর্যায়ে সোমালি বাহিনী নিজেদের জীবন বাঁচাতে সামরিক ঘাঁটি ও শহরটি ছেড়ে পালিয়ে যায়। তবে ততক্ষণে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে অনেক সৈন্য হতাহত হয়। সেনাদের পলায়নের পর সামরিক ঘাঁটি ও পূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নেন হারাকাতুশ শাবাবের প্রতিরোধ যোদ্ধারা।
শহরটি থেকে গত জুন মাসের শেষ দিকে সেনা প্রত্যাহার করেছিল পশ্চিমা সমর্থিত সামরিক জোট।

সূত্র মারফত জানা যায়, সোমালিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় জিঝু রাজ্যের এই শহরটি কেনিয়ার সীমান্তবর্তী এবং কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। শহরটিতে কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে, যেগুলো শহরটিকে সোমালিয়ার জিঝু, জুবা এবং কেনিয়ার মান্দিরা জেলার সাথে যুক্ত করেছে।

দুই দেশের সীমান্তের কৌশলগত এই শহরটি আশ-শাবাবের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর শহরটি শাবাবের নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় অস্বস্তিতে রয়েছে সোমালি সরকার। কেননা হারাকাতুশ শাবাব ‘এইউ’ এর ছেড়ে যাওয়া ঘাঁটিটি ব্যবহার করে এই অঞ্চলে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করবে এবং জিঝুর প্রাদেশিক রাজধানী ও জুবা জেলা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করবে।

একই সাথে, শহর শাবাবের কাছে চলে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পরে গেছে কেনিয়ান সেনাবাহিনীও; কেননা এই সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করে মান্দিরায় সামরিক অপারেশন জোরদার করবে আশ-শাবাব। ইতিমধ্যে এই মান্দিরা অঞ্চলে গত ১৪ দিনে শাবাবের পৃথক অভিযানে ৫০ এরও বেশি কেনিয়ান সৈন্য হতাহত হয়েছে।

ম্যাপ – আশ-শাবাবের দখলকৃত শহর

এমনিতেও কেনিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং উপকূলীয় অঞ্চলে সম্প্রতি সামরিক অপারেশন বাড়িয়েছে আশ-শাবাব। এমনকি গত ১৩ জুলাই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় লামু অঞ্চলের সামিও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন শাবাব যোদ্ধারা।
এলাকাটিতে প্রথমে স্থানীয় খৃষ্টান মিলিশিয়াদের সাথে লড়াই শুরু হয় শাবাব যোদ্ধাদের। পরে এই সংবাদ এলাকাটির নিরাপত্তায় থাকা কেনিয়ান সেনাদের কাছে পৌঁছালেও, তারা মিলিশিয়াদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। উল্টো, তটস্থ কেনিয়ান সেনারা আশ-শাবাবের উপস্থিতি জানতে পেরেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে সোমালি বাহিনী গত মঙ্গলবার সকালে শাবাব নিয়ন্ত্রিত আফমাদো অঞ্চলের হাগার জেলা দখল নেওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই আবারো শহরটি ছেড়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয়। জেলাটি গত ১৬ বছর ধরে আশ-শাবাব নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল।
সোমালি সেনারা ১১ জুলাই মঙ্গলবার সকালে শহরটির দিকে অগ্রসর হতে থাকলে শাবাব যোদ্ধারা কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই শহরটি ছেড়ে চলে যান। কিন্তু ১২ ঘন্টার ব্যবধানেই সোমালি সেনারা জানতে পারে যে, আশ-শাবাব যোদ্ধারা শহরটি চতুর্দিক থেকে অবরোধ করতে শুরু করেছেন। পশ্চিমা সমর্থিত সোমালি সেনারা তখন তাদের অনেক সংখ্যক সাঁজোয়া যান আর ভারী অস্ত্র-শস্ত্র ফেলে রেখেই পলিয়ে যায়।

সোমালিয়ার যুদ্ধপরিস্থিতি এখন ঠিক এমন পর্যায়ে অবস্থান করছে যে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যুদ্ধের সময় এবং স্থান নির্ধারণ করছে আশ-শাবাব, আর যুদ্ধ শুরু করছে পশ্চিমা সমর্থিত বাহিনী। এভাবে পশ্চিমা সমর্থিত বাহিনীগুলো নিজেদেরকে শাবাবের পরিকল্পিত ফাঁদে ফেলে দেয়, আর তখন সবকিছুই যেন চলতে থাকে শাবাবের পরিকল্পনা অনুযায়ী। আবার যুদ্ধ শেষও হয় শাবাবের ইচ্ছা অনুযায়ীই, সোমালি বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় বা পলায়নের মধ্য দিয়ে।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধহরিদ্বারে মুসলিম দম্পতির গাড়ি ভাংচুর করে আগুন দেওয়ার চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধকেন বাংলাদেশের ইতিহাসে টাকার সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন? মূল্যস্ফীতি কেন লাগামছাড়া?