মুসলিমবিরোধী চরমপন্থী বক্তব্য-বিবৃতির জন্য পরিচিত ২৭ বছর বয়সী হিন্দু ধর্মগুরু ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীকে পুরস্কৃত করেছে লিচেস্টারশায়ার পুলিশ। গত ২২ জুলাই শহরের প্রজাপতি হলে একটি বিশাল সমাবেশে বক্তৃতা করেন শাস্ত্রী। সেখানেই লিচেস্টারের স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতি তার সমর্থনের জন্য লিচেস্টারশায়ার পুলিশ ‘পরিষেবার স্বীকৃতি স্বরূপ’ তাকে এনপিএ কমান্ডার পুরস্কার প্রদান করে।
২৭ বছর বয়সী এই হিন্দু ধর্মগুরু বাগেশ্বর ধাম বাবা নামে নামেও পরিচিত। কথিত এই হিন্দু গুরু নিয়মিতভাবে তার বক্তৃতায় মুসলমানদের লক্ষ্য করে বিদ্বেষমূলক কথা বলেন। তার ভক্তদের মধ্যে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ বিজেপি নেতা ও এর পাশাপাশি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের সংখ্যাই বেশি।
শাস্ত্রী প্রকাশ্যে “বুলডোজার রাজনীতি”কে সমর্থন করেছে, যা হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের মুসলিমদের বাড়িঘর ও স্থাপনা ধ্বংসের ‘চূড়ান্ত সমাধান’ হিসাবে প্রয়োগ ও পছন্দ করে। সে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের একত্রিত হতে, বুলডোজার কিনতে এবং পাথর নিক্ষেপকারীদের অর্থাৎ মুসলিমদের বাড়িঘর ভেঙে ফেলতে আহ্বান জানিয়েছে। সে এই বক্তব্যও দিয়ে থাকে যে ‘ভারত শুধুমাত্র হিন্দুদের’।
মধ্যপ্রদেশের খারগোনে মুসলিম বিরোধী সহিংসতার পর মুসলমানদের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলার সময় তাকে প্রফুল্লভাবে হাততালি দিতে এবং হাসতে দেখা গেছে।
অপর এক বক্তৃতায় সে হিন্দুদের সশস্ত্র হওয়াকে সমর্থন করে বলেছে, “হিন্দুদের প্রার্থনার মালার সাথে সাথে বর্শাও রাখতে হবে।”
ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করার বিষয়ে সে বলেছে, “হিন্দুরা এক হও! রামচরিতমানস (হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ) সংবিধান (ভারতের জন্য) তৈরি করা হবে এবং ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করা হবে।”
“যদি তোমরা (হিন্দুরা) ঐক্যবদ্ধ হও, তাহলে তোমরা ভারত ও পাকিস্তানকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করবে।”
এছাড়াও সে মুসলমানদেরকে হুমকি দিয়ে বলেছে, “যদি ভারতে থাকতে চাও তাহলে সীতা রাম বলো। নিজের ভালোর জন্য, সীমার মধ্যে থাকো।”
এরকম অসংখ্য সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক ও ঘৃণাসূচক স্পষ্ট বক্তৃতা দেওয়ার পরেও তাকে স্থানীয়দের সমর্থন দেওয়ার জন্য এনপিএ কমান্ডার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
এবিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে লিচেস্টারশায়ার পুলিশ ফাইভ পিলারসকে জানিয়েছে, “এমন একটি বড় ইভেন্টের পরে কিছু চ্যালেঞ্জিং লজিস্টিকাল সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সাথে সাথেই যার সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। ফলে স্থানীয় ইস্ট লিচেস্টারের চিফ ইন্সপেক্টর, ইন্সপেক্টর এবং পিসিএসও জনসাধারণের অব্যাহত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এই ইভেন্টে যে সহায়তা দেওয়া হয়েছিল, তার স্বীকৃতি প্রদান করতে চেয়েছিল। অতএব পূর্ব লিচেস্টারে এমন একটি জটিল এবং ব্যস্ত সমাবেশে প্রদত্ত সাহায্যের প্রশংসা হিসেবে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। লিচেস্টারশায়ার পুলিশ কর্তৃক জারি করা অন্য কোন আনুষ্ঠানিক পুরষ্কার বা প্রশংসার সাথে এটিকে তাই এক করে দেখা উচিত নয়। বরং এটির উদ্দেশ্য ছিল, যারা জনসাধারণকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করেছে তাদের ধন্যবাদ জানানো।”
তবে মুসলিম সংগঠন MEND লিচেস্টারশায়ার পুলিশের কাছে এবিষয়ে আরও তদন্তের দাবি করেছে।
মেন্ড বলেছে, “মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য তার প্রকাশ্য আহ্বান, মুসলমানদের বাড়িঘরকে বুলডোজার দিয়ে ধ্বংসের পক্ষে অবস্থান এবং একটি মুসলিম-মুক্ত ভারত-পাকিস্তান অঞ্চল গঠন সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি তার অতি-বিপজ্জনক মনোভাবের তীব্রতা প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে লিচেস্টার পুলিশের সমালোচনা করে বলা হয়, “লেচেস্টার পুলিশ শাস্ত্রীর আদর্শের চরমপন্থী প্রকৃতিকে চিনতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, যা উদ্বেগজনক। তার প্রশংসা করার মাধ্যমে তারা ইসলামফোবিয়া এবং মুসলমানদের কল্যাণের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করেছে, যা ভয় ও বৈষম্যের পরিবেশকে স্থায়ী করতে প্ররোচনা যোগাবে।”
লিচেস্টারের পুলিশকে শাস্ত্রীর প্রশংসাপত্র প্রত্যাহারের আহবান জানিয়ে মেন্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আমরা লিচেস্টারশায়ার পুলিশকে অবিলম্বে ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর প্রশংসা প্রত্যাহার করতে এবং তার আদর্শ ও প্রকৃতির একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শুরু করতে আহ্বান জানাচ্ছি। এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী একজন ব্যক্তিকে বরণ করে নেওয়া শুধুমাত্র আন্তঃসম্প্রদায়িক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং সামাজিক সম্প্রীতির জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।”
লিচেস্টারের হিন্দুদেরকেও ধীরেন্দ্র শাস্ত্রীর ইসলামফোবিক বক্তৃতাকে প্রত্যাখ্যান করার অনুরোধ জানানো হয় মেন্ডের পক্ষ থেকে।
তথ্যসূত্র:
1. Leicestershire Police give award to anti-Muslim Hindutva extremist
– https://tinyurl.com/3ppzrdar