ফিলিস্তিনের উত্তর গাজার আল-শিফা হাসপাতালে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। আল-জাজিরাকে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুনির আল-বুরশ জানিয়েছেন যে, ইসরায়েলি বাহিনী বুধবার ভোরে (১৫ নভেম্বর) আল-শিফা হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি শুরু করেছে। এ অবস্থায় আল-শিফার ভিতরে অবস্থানরত রোগী, বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এর আগে গতকাল থেকে হাসপাতালটি চারপাশ থেকে ঘেরাও করে ট্যাংক থেকে বোমা বর্ষণ এবং স্নাইপাররা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গুলি করছে। ফলে হাসপাতালটিতে কেউ ঢুকতে বা সেখান থেকে বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এবং গত ৪৮ ঘণ্টায় কোনো লোকজন এবং কোনো ধরনের সাহায্য হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে চারজন বের হতে গেলে তাঁদের পায়ে গুলি করা হয়। তাঁরা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে প্রায় দুই ঘণ্টা পড়ে ছিলেন।
ইসরায়েলি অবরোধে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অভাবে সেখানে শিশুসহ একের পর এক রোগী মারা যাচ্ছেন। গতকাল থেকে হাসপাতালটির ৩২ রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল–কিদরা। হাসপাতালটিতে এখনো ৬৫০ রোগী ও হাসপাতাল প্রঙ্গনে অন্তত ৫ থেকে ৭ হাজার শরণার্থী রয়েছেন।
محمد زقوت مدير عام مستشفيات غزة يروي للجزيرة ما يجري بمجمع الشفاء بعد اقتحامه من قبل الاحتلال #الأخبار #حرب_غزة pic.twitter.com/Zatv61gwg3
— الجزيرة فلسطين (@AJA_Palestine) November 15, 2023
আল–শিফা হাসপাতালের অবস্থা কতটা শোচনীয়, তার একটি নমুনা দিয়েছেন হাসপাতালটির প্রধান মোহাম্মদ আবু সালমিয়াহ। তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের ঘেরাওয়ের ফলে মারা যাওয়া ১৭৯ জনকে হাসপাতালটির চত্বরে গণকবর দিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। হাসপাতালে জ্বালানি শেষ হওয়ার পর মারা যাওয়া ৭ শিশু ও ২৯ রোগীকেও সেখানে কবর দেওয়া হয়েছে।
দখলদার ইসরায়েল হাসপাতালটিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মুজাহিদরা লুকিয়ে আছেন এবং সেখান থেকে গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে দাবি করেছিল। তবে সন্ত্রাসী ইসরায়েলের এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা উল্লেখ্য করে হামাস বলেছেন, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গাজায় বর্বর গণহত্যাকে বৈধতা দিতেই হাসপাতালকে নিয়ে এই অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গাজী হামাদ বলেন, ‘ইসরায়েলের এই দাবি ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার’। দখলকারী এই বাহিনীর নিজেদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না। আমরা কখনো সাধারণ মানুষকে মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করিনি। কারণ, এটি আমাদের ধর্মের বিরোধী।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদ্রা বলেন, হাসপাতালের নিরপেক্ষতা যাচাই করতে বারবার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে; কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি।
উল্লেখ্য যে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ১১,৩০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ হাজার ১৩০ জন নারী ও ৪ হাজার ৬৩০ জন শিশু। আহত হয়েছেন অন্তত ৯ হাজার শিশু। এছাড়াও এখনো ধ্বংস্তুপের নীচে চাপা পড়ে আছে অনেক শিশু।