সারাদেশে ছাত্র-জনতার উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে কয়েকশত মানুষকে হত্যা করেছে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকার। গত ১৫ই জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যৌথভাবে সহিংস হামলা চালিয়ে আসছে সরকারদলীয় অঙ্গসংগঠন, যেমন- ছাত্রলীগ, যুবলীগ ইত্যাদি এবং পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ২০৩ জন মানুষ নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছে পত্রিকাটি। পত্রিকাটি জানিয়েছে, মৃত্যুর এই হিসাব কিছু হাসপাতাল, মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তি ও স্বজনদের সূত্রে পাওয়া। সব হাসপাতালের চিত্র পায়নি তারা।
তবে আন্দোলনকারীদের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তিন শতাধিক ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে সরকার। নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও অজানা। তবে কিছু সূত্রের হিসাবে সহস্রাধিক নিহতের কথা জানা যাচ্ছে। যদিও নিহতের এই সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
গত ১৫ই জুলাই দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদেরকে ছাত্রলীগই প্রতিহত করবে বলে উস্কানি দেয়। এরপর ১৫ই জুলাই বেলা ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে সহিংসতার সূত্রপাত করে। এভাবেই এতদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসা আন্দোলনকে দমন করতে প্রথমে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয় সরকার। এরপর ছাত্রলীগের সাথে একে একে যোগ দেয় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনী।
১৯ জুলাই শুক্রবার রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সরকার। এসময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সেই সাথে দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে জনগণকে তথ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। আর পরদিন সারাদেশে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর ভয়ানক আগ্রাসন চালায় সরকারের যৌথ বাহিনী। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেও নিরীহ মানুষদেরকে হত্যা করা হয়, এমনকি ঘরের ভেতরে জানালার পাশে পড়তে বসা এক বাচ্চাকেও গুলি করে হত্যা করেছে সরকারি বাহিনী। জনগণের কাছ থেকে এসব বর্বর আক্রমণের ঘটনা আড়াল করতে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রেখেছে সরকার।
এর মধ্যে ২১শে জুলাই কোটা প্রথা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে রায় দেয় আপিল বিভাগ। শত শত মানুষকে হত্যার পর দেওয়া এই রায়ের প্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৬ সমন্বয়ক ‘যৌথ বিবৃতি’ দেন। বিবৃতিতে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তিন শতাধিক ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু আদালতের রায়ের মাধ্যমে হত্যার দায় এড়াতে পারে না সরকার। যৌথ বিবৃতিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি আরও জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়। এর আগে আন্দোলনকারীরা ৯ দফা দাবি পেশ করে সেই ৯ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত ‘শাটডাউন’ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই নয় দফা দাবির মধ্যে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগ, ঢাকাসহ যত জায়গায় ছাত্র শহীদ হয়েছে সেখানকার ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের বরখাস্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগসহ দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনাসহ আরও কিছু দাবি তোলা হয়।
তথ্যসূত্র:
১. চিকিৎসাধীন আরও একজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ২০৩
-https://tinyurl.com/26pxt6sv