ভারতের পানিতে আকস্মিক বন্যায় ডুবল বাংলাদেশ

0
279

ফেনী জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যার তাণ্ডব চলছে। টানা বৃষ্টি আর ভারতের ছেড়ে দেওয়া পানির প্রবাহে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে লক্ষাধিক মানুষের জীবন ভোগান্তিতে পড়েছে।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) জেলায় ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী আবহাওয়া অধিদফতরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, গতকাল পরশুরামে রেকর্ড করা বৃষ্টিপাত ছিল ৩০০ মিলিমিটার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২ আগস্ট বৃষ্টি এবং উজানের অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৭টি অংশে ভাঙনের ফলে লোকালয় প্লাবিত হয়েছিল। গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের ছেড়ে দেওয়া পানি আবার বেড়ে যাওয়ায় গতকাল দুপুর থেকে ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতে পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম অলকার মাস্টারবাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ, মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউতলি কাশিনগর ও চম্পকনগর এলাকায় বাঁধের দু’টি অংশ, চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন, দক্ষিণ শালধর, কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেটেশ্বর ও সাতকুচিয়া এলাকার ভাঙন অংশ এবং পশ্চিম মির্জানগর এলাকার সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে দুই উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন।

পরশুরামের কালীকৃষ্ণনগর এলাকার বাসিন্দা মো. শাহীন বলেন, অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে ঘরবাড়ি তিনবার পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকার সব মানুষ কষ্টে আছে। বাড়িঘর সব ডুবে গেছে।

এদিকে টানা বৃষ্টি ও ভারতের ছেড়ে দেওয়া পানিতে কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল( ২০ আগস্ট) রাত থেকে বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। আজ (২১ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত নদীটির পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করলেও দ্রুতই দুকূল ছাপিয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গোমতীপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে নদীটিতে এত পানি দেখেননি তারা। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলাটিতে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরও বৃষ্টি হতে পারে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অভিন্ন নদীগুলোতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাঁধ দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে রাখে ভারত সরকার। কিন্তু ভরা মৌসুমে পানি বেড়ে গেলে বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে আকস্মিক বন্যায় ডুবাতে ভূমিকা রাখে ভারত। বহু বছর ধরে ভারতের এই আগ্রাসী নীতির কবলে পড়ে বাংলাদেশের মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।


তথ্যসূত্র:
১. ভারত থেকে হু হু করে আসছে পানি, সঙ্গে বৃষ্টি, কুমিল্লায় বন্যার শঙ্কা – https://tinyurl.com/2fxcty74
২. ফেনীতে বন্যায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ – https://tinyurl.com/stayh966

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসার্জেন্ট নিয়োগে ৬ ছাত্রলীগ নেতার জন্য নওফেলের সুপারিশ
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী সরকারের প্রতিমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেড় কোটি টাকা জব্দ