তুর্কিয়ে (তুরস্ক) ভিত্তিক বেসরকারী সামরিক কোম্পানি ক্যানিক একাডেমি ঘোষণা করেছে যে, কোম্পানিটি মালির জান্তা বাহিনীর সাথে যুক্ত এলিট ফোর্সকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
রাশিয়া এবং ভাড়াটে কোম্পানি ওয়াগনার দ্বারা সমর্থিত মালির জান্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করতে দেশটিতে উপস্থিত রয়েছে তুর্কি সামরিক প্রশিক্ষকরাও। এমন তথ্য নিশ্চিত করে সম্প্রতি “ক্যানিক একাডেমি” তাদের ইউটিউব চ্যানেলে দেড় মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
ক্যানিক একাডেমির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওটি সেই মুহূর্তগুলি ধারণ করে, যখন কোম্পানিটির প্রশিক্ষকরা মালিতে জান্তা বাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
মালির রাজধানী বামাকোতে রেকর্ড করা ভিডিওটিতে তুর্কি সামরিক প্রশিক্ষকদের দেখা যায় যে, তারা মালিয়ান সেনাবাহিনীর এলিট ফোর্সকে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ভিডিওটিতে সেই মুহূর্তগুলিও রয়েছে যখন ক্যানিক একাডেমির পরিচালক ইসমাইল দত্ত মালিয়ান সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল।
পূর্বে অভিযোগ ছিলো যে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতে, বিশেষ করে মালি এবং বুর্কিনা ফাসোতে ‘সাদাত’-এর মতো তুর্কিয়ে-ভিত্তিক বেসরকারী সামরিক সংস্থাগুলির সাথে যুক্ত প্রশিক্ষকরা রয়েছে৷ ক্যানিক একাডেমির প্রকাশিত ভিডিওর পর, এই অভিযোগগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো প্রেসে প্রতিফলিত হয়েছে।
এদিকে ভিডিওটি প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তুরস্ক। এসময় তুর্কি জনগণ ও সাংবাদিকরা মালির পাশাপাশি আফগানিস্তান ও সোমালিয়ায় তুরস্কের সামরিক পদক্ষেপগুলোর তীব্র সমালোচনা করেন। তুর্কিয়ে-ভিত্তিক বেসরকারি সংবাদ মাধ্যম “ম্যাপা নিউজ” এর সাংবাদিক মুহাম্মদ আনাস মালিতে তুরষ্কের সামরিক উপস্থিতি নিয়ে তাঁর অ্যাকাউন্টে লিখেন, “যে সৈন্যরা আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাব-কন্ট্রাক্টর হিসাবে বেসামরিক লোকদের হত্যা করেছিল তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া তুরস্কের যথেষ্ট ছিল না, তাই এখন রাশিয়ার সাব-কন্ট্রাক্টর হিসাবে বেসামরিক লোকদের হত্যাকারী সৈন্যদের মালিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও লিখেন, যদি ভবিষ্যতে মালিতে আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হয়, তবে তারা (তুর্কিয়ে সামরিক বাহিনী) বেরিয়ে আসবে এবং চিৎকার করবে “আমরা সর্বদা মালিয়ান ভাইদের সাথে আছি”।
তুর্কি জনগণ ও সাংবাদিকদের এমন সব সমালোচনার মুখে নিজেদের ইমেজ রক্ষা করতে, ক্যানিক একাডেমি তাদের ইউটিউব চ্যানেল ও টুইটার থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেয় এবং সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য যে, মালিতে বর্তমান সংঘাত ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে। এই সংঘর্ষে, মালিয়ান সেনাবাহিনী প্রথমে ফ্রান্স ও পশ্চিমাদের সমর্থনে এবং পরে রাশিয়ার সমর্থনে অনেক বেসামরিক গণহত্যা চালিয়েছে। ২০২০ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পরে দেশটির ক্ষমতায় আসা জান্তা প্রশাসন রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক সুদৃঢ় করে। তাদের মধ্যকার এই সম্পর্ক এবং তুরষ্কের সামরিক সহায়তা বিশেষ করে ড্রোন হামলাগুলো বেসামরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে। জান্তা এবং রাশিয়ান সৈন্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণে পরিচালিত এসব হত্যাযজ্ঞে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।