মুক্তিযুদ্ধে অবদানের কারণে এদেশে যা ইচ্ছে করার ম্যান্ডেট পেয়ে গেছে, এই ন্যারেটিভে ভর করে ৭১ পরবর্তী এদেশে অব্যাহত আগ্রাসন চালিয়ে গেছে ভারতের হিন্দুত্ববাদি প্রশাসন। ভারত বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী দুঃশাসনের পিছে প্রত্যক্ষ মদদদাতা। এদেশকে সিকিমের মত করদ রাজ্য কিংবা ভুটানের মত নিয়ন্ত্রিত দেশ বানানোর প্রচেষ্টায় খুনি হাসিনাকে ও তার দুর্নীতিগ্রস্থ আওয়ামী প্রশাসনকে দিয়ে ধ্বংস করেছে এদেশের রাষ্ট্র কাঠামোর প্রতিটি সেক্টর।
আজ তার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে এদেশের দলমত নির্বিশেষে আপামর জনগণ। এদেশে ভারতীয় আগ্রাসন থেকে মুক্তিকামী জনতার উত্তাল বিক্ষোভে নতি স্বীকারের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে হিন্দুত্ববাদি ভারত প্রশাসনের সাম্প্রিতিক বিবৃতি ও পদক্ষেপে।
উগ্র হিন্দুত্ববাদি চেতনা লালনকারি বিজেপি প্রশাসন বাংলাদেশসহ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের নতুন সংসদে স্থাপন করেছে অখণ্ড ভারতের কল্পিত মুর্যাল। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) পাস করে উপমহাদেশের সকল হিন্দুদের অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার জন্য উস্কে দিয়েছে। অর্থাৎ ‘তুমি হিন্দু যেখানেই থাকনা কেন, অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করো। যদি তাতে সমস্যায় পড়ো, তাহলে ভারতে তোমার নাগরিকত্ব সংরক্ষিত আছে’, এই বিল পাস করে এমন বার্তা দিতে চেয়েছে হিন্দুত্ববাদি প্রশাসন।
বিগত আওয়ামী প্রশাসনের দ্বারা ভারত তাদের কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নেই পরিচালিত করে যাচ্ছিল। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান। এদেশের বিপ্লবী জনতা যে বিষয়ের উপর ঐক্যমত্যে থেকে এই আন্দোলন পরিচালনা করে তাহল, ভারতের সেবাদাসী খুনি হাসিনাকে যেকোন মূল্যে হটাতে হবে।
৫ আগস্ট হাসিনার পতন পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেও দেখা যায় ভারতের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা। বৃষ্টিপাতের সিজনে বাঁধের পানি শুরুতে ধরে রেখে তারপর কোন পূর্ব সতর্কতা না দিয়ে বাঁধের পানি ছেড়ে পর পর কয়েকটি ভয়াবহ বন্যা সংগঠিত করে ক্ষমা চাওয়ার বদলে ‘বাঁধ অটোমেটিক খুলে গেছে’ বলে তাচ্ছিল্য করা। সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে বলে ভারতীয় মিডিয়ায় ক্রমাগত অপপ্রচার, নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে বিবৃতি প্রচারের মাধ্যমে ভারত এদেশের হিন্দুদেরসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এবং নিজ দেশের উগ্র হিন্দুত্ববাদিদের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তোলার ব্যাপক প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। এদেশে অস্থিরতা তৈরি করে আগের আওয়ামীলীগের মতই অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে চাপে ফেলে বশে আনার চেষ্টা দৃশ্যমান হয়ে উঠায় এদেশের মানুষ সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
সর্বশেষ সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের দেশদ্রোহী মামলায় গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ রহিমাহুল্লাহ কে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর পরিকল্পিত চেষ্টা চলে। যার ফাঁদে এদেশের আপামর মুসলিম জনসাধারণ পা না দিয়ে একদিকে যেমন এই ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেয়। অপরদিকে ভারতের রাষ্ট্রীয় ভাবে একটি উগ্রবাদী দলের বিতর্কিত নেতার পক্ষাবলম্বন করে দেয়া বিবৃতি এদেশের মুসলিম জনসাধারণকে আরও বিক্ষুব্ধ করে তোলে।
সংক্ষুব্ধ মুসলিম জনতার বিক্ষোভের পাশাপাশি এদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের বিবৃতিগুলোর পাল্টা বিবৃতি প্রকাশ, জাতিসংঘেও বিষয়গুলো তুলে ধরে ভারতীয় প্রোপাগান্ডা মেশিনকে দুর্বল করে দিয়েছে অনেকখানি।
এদিকে ভারতীয় প্রোপাগান্ডার শিকার হয়ে উল্টো ভারতেই উগ্র হিন্দুরা বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা করে, ফলে ভারত বাধ্য হয়ে এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় এবং হামলার ঘটনায় সাতজনকে আটক করে এবং তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে ও এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে।
এদেশের মানুষদের উইপোকা বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, সীমান্তে নির্বিচারে পাখির মত গুলি করে হত্যা করা হিন্দুত্ববাদি প্রশাসন আজ দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিচ্ছে। যাদের উস্কে দিয়ে হামলা করতে নামিয়ে দিয়েছিল, তাদেরকেই গ্রেফতার ও বহিষ্কার করা দেখে মনে হচ্ছে ভারত নতি স্বীকার করছে।
তবে এটা সাময়িক। এদেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও আন্দোলন, সচেতন প্রতিবাদ জারি রাখা এবং ভারতীয় ষড়যন্ত্রের জালগুলো থেকে বেচে থাকার মাধ্যমে আমরা এর দীর্ঘমেয়াদে সুফল পেতে পারি। আর তার জন্য দরকার আদর্শহীন সেকুলার রাজনীতিকদের ছেড়ে হক্কানি উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে দ্বীনের সুদৃঢ় ভিত্তির উপর ঐক্যবদ্ধ থাকা।