দোহা চুক্তি ছিল আফগানিস্তানে আমেরিকার পরাজয়ের লিখিত স্বীকৃতি: আনাস হক্কানী

0
109

দোহা চুক্তি স্বাক্ষর ছিল আমেরিকার নিজের পরাজয়ের লিখিত দস্তখত বলে মন্তব্য করেছেন ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের সিনিয়র নেতা ও দোহা সংলাপের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আনাস হক্কানী হাফিযাহুল্লাহ। তিনি বলেন, এখন এটিকে শান্তি চুক্তি হোক বা যেই নামেই ডাকা হোক না কেন এটি মূলত পরাজয় স্বীকারের দলিল।

গত ১১ আগস্ট টোলো নিউজের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনাস হক্কানী জানান তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা গতিপথ বদলে দেয়।

তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমেরিকা ইমারতে ইসলামিয়ার সাথে আলোচনায় বসতে শুরুতে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করলেও শেষে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়েছিলো।

সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাওয়ার স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে তিনি বলেন, আপনারা মুজাহিদ সাহেবের সেই সময়ের বক্তব্য দেখতে পারেন, যা ছিল সকালে, যখন কাতারে আমাদের সহযোগীরা একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য কাজ করছিলেন। লক্ষ্য ছিল নতুন সরকারের বৈধতা অক্ষুণ্ন রাখা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। এজন্যই আমাদের নেতারা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে কাবুলে প্রবেশের ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।

তবে মার্কিন সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির পলায়ন ঘটনাটির গতিপথ পাল্টে দেয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমেরিকা পূর্বে কয়েকবার আমাদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আলোচনায় বসার প্রস্তুতি জানিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই তাদের নীতি পরিবর্তন হয়ে সরে দাঁড়িয়েছে।’

দোহা আলোচনার সময় আফগানিস্তানে যুদ্ধ ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সেই তীব্রতা থেকেই আমেরিকা তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আফগানিস্তান থেকে সরে যেতে হবে, যদিও তখন পর্যন্ত তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেনি।

অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও আলোচনা বা সংলাপে বসার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের নেতারা কোনো কিছুতেই ভরসা পাচ্ছিলেন না। চুক্তি সাক্ষর সত্ত্বেও অপর পক্ষ এর থেকে পিছিয়ে যেতে পারে। কারণ এর কোনো নিশ্চয়তা ছিলো না। এমনকি মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোও আমাদের তেমন নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম, তারা যেনো সবার চোখের সামনে চুক্তিতে সই করে, যা হবে আদতে নিজেদের পরাজয়ে নিজেদের দস্তখত।

আনাস হক্কানী এই চুক্তিকে আফগান ইমারত সরকারের নিকট আমেরিকা কর্তৃক বৈধভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর প্রক্রিয়া বলেও বর্ণনা করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইদরিস মুহাম্মাদি জাজি তালিবান ও আমেরিকার মধ্যকার দোহা চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমেরিকা যে শর্ত, অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তা এখনো রক্ষা করেনি। তারা এখনো বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞা, তালিবান নেতাদের কালো তালিকাভুক্তি ও অন্যান্য বিধিনিষেধ বহাল রেখেছে, যা চুক্তির পরিপন্থী। আমেরিকার উচিত এবিষয়ে মনোযোগ দেওয়া।’

সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি, কাতারের দোহায় তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। যা দোহা চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি সাক্ষরের মধ্য দিয়ে কাগজে-কলমে আফগান যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয় ঘটে এবং সেনা প্রত্যাহার করতে শুরু করে।

তালিবান বা তাদের ইসলামি রাষ্ট্র কাঠামো ইমারতে ইসলামিয়ার পক্ষে এর বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী (অর্থ) মোল্লা আব্দুল গণী বারাদার হাফিযাহুল্লাহ এবং আফগানিস্তানে আমেরিকার সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি জালমী খলিলজাদ আমেরিকার পক্ষে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করে।

চুক্তিতে বলা হয়েছিলো, ইমারতে ইসলামিয়া কর্তৃক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দানের বিনিময়ে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনাদের সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হবে, যা আন্তঃআফগান আলোচনা শুরু করার পথ সুগম করবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির আনুষ্ঠানিক অবসান করেছিল।


তথ্যসূত্র:
1. Anas Haqqani: Doha Agreement Marked America’s Defeat
– https://tinyurl.com/ybe22cpj

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতে আমেরিকান পণ্য বয়কটের ডাক
পরবর্তী নিবন্ধগাজায় একদিনে শহীদ ৬৯, মোট প্রাণহানি ৬১ হাজার পেরিয়েছে