শহীদ আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কয়েকদিন ধরে উত্তাল দেশ। হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা হত্যা করে আবরারকে। এই হত্যাকাণ্ডের অনেক বিবরণ এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। আবরারকে হত্যার পর মাদক দিয়ে গণপিটুনির নাটক সাজিয়ে লাশ পুলিশের হাতে উঠিয়ে দিতে চেয়েছিল আওয়ামী গুণ্ডারা। সেই সাথে প্রকাশিত হয়েছে হত্যাকাণ্ডের দিনের শেরে বাংলা হলের সিসিটিভি ফুটেজের একাংশ।
তবে অনেক প্রশ্নের উত্তর উঠে আসলেও একটি রহস্যের জট একেবারেই খুলছে না। অমিত সাহা কোথায়? কেন তার ব্যাপারে এতো লুকোচুরি? মিলছে না এ প্রশ্নগুলোর জবাব। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ হত্যাকাণ্ডের শুরুটা করে অমিত সাহা। আবরারের সহপাঠী শেরে বাংলা হলের আরেকজন আবাসিক ছাত্রের কাছ থেকে মেসেজে এই অমিত সাহাই জানতে চেয়েছে আবরার হলে আছে কি না? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুয়েটের বিভিন্ন ছাত্রদের সূত্রে প্রকাশিত হয়েছে এই মেসেজ আদানপ্রদানের স্ক্রিনশট। স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে, অমিত সাহা প্রশ্ন করছে, ‘আবরার ফাহাদ কি হলে আসে?’ স্ক্রিনশটটি নিচে যুক্ত করা হল-
হত্যাকাণ্ডের পরদিন থেকে হত্যায় অমিত সাহার কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালনের যে বর্ণনা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এই স্ক্রিনশটের মাধ্যমে আবারো তা প্রমাণিত হল। এই মেসেজের মাধ্যমে শহীদ আবরার হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হবার পরই তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে আসে ছাত্রলীগের খুনীরা। তারপর তাঁকে জেরা করা হয় অমিত সাহার নেতৃত্বে, অমিত সাহার রুমে। চেক করা হয় তার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ। তারপর শুরু হয় নির্যাতন।
অদ্ভূত বিষয়টি এতো সবকিছুর পরও অমিত সাহার নামটি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, এজাহারে, এবং মিডিয়াতে। এমনকি ছাত্রলীগ থেকে যেসব সদস্যকে এ ঘটনায় যুক্ত থাকার কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে, সেখানেও নেই এই রহস্যময় অমিত সাহার নাম। ওদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সাংবাদিক তাদের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে জানাচ্ছেন, সরকারের উপরতলা থেকে মিডিয়াতে অমিত সাহাকে নিয়ে কোন রিপোর্ট করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অমিত সাহার ব্যাপারে ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও, রহস্যজনকভাবে অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই তা উধাও হয়ে যায়।
পাশাপাশি গতকাল রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ৮ বুয়েট শিক্ষার্থীর সমিলিত এক বক্তব্য। এই ৮ জন প্রাথমিক পর্যায়ে আবরারের হত্যার সঙ্গে অমিত সাহার সম্পৃক্ততা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। নির্দোষ দাবি করেছিলেন অমিত সাহাকে। কিন্তু স্ক্রিনশটসহ হত্যাকাণ্ডে অমিত সাহার সম্পৃক্ততার বিভিন্ন প্রমাণ হাতে আসায়, তারা বিবৃতি দিয়ে পূর্বের অবস্থানের জন্য একান্ত লজ্জিত ও দুঃখিত হবার কথা জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্যের স্ক্রিনশট নিচে যুক্ত করা হল।
কিন্তু এতো কিছু সত্ত্বেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে অমিত সাহা। এজাহারে দেয়া হয়নি তার নাম। ডিবি পুলিশ নাকি এখনো হত্যাকাণ্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি! ঘোলাটে পরিস্থিতির মধ্যেই আবার শুরু হয়ে গেছে অমিত সাহাকে বাঁচানোর জন্য প্রচারণা। সাংবাদিক নামের বিভিন্ন লোকেরা হাজির হচ্ছে নানান অজুহাত নিয়ে। অনেক যুক্তি দিচ্ছে! প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে অমিত সাহাকে দেখা যাচ্ছে না। অথচ মোট দশ ঘন্টার ভিডিও ফুটেজের মাত্র ১৫ মিনিট বের হয়েছে। এ থেকে কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এই পুরো সময়ে অমিত সাহা কোথাও ছিল না?
পুলিশের পক্ষ থেকে অজুহাত দেয়া হয়েছে তদন্তে অমিত সাহার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে পরে তার নাম আসবে। অথচ কোন মামলার এজাহারে যদি কোন আসামীর নাম দেয়া না হয়, তাহলে পরবর্তী চার্জশিটে নাম দেয়া হলেও, সেই আসামীর শাস্তি হবার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়। তার বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। অর্থাৎ অমিত সাহার নাম এজাহারে না থাকায় এরই মধ্যে তার শাস্তির সম্ভাবনা কমে গেছে। অথচ এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন করলেই একদল ভারতীয় দালাল ছুটে আসছে সাম্প্রদায়িক ট্যাগ নিয়ে। যেন হিন্দু অমিত সাহার অপরাধী হবার ব্যাপারে প্রশ্ন রাখাটাই এক অপরাধ!
সবচেয়ে বড় কথা হল, অমিত সাহার সংশ্লিষ্টতার কথা হত্যাকারীরা স্বীকার করেছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা স্বীকার করেছে এবং সে যে আবরারকে হলে খুঁজছিল তার স্ক্রিনশটও প্রকাশিত হয়েছে। তার সহপাঠীদের মধ্যে যারা প্রথমে তাকে সমর্থন করেছিল, তারাই এখন বলছে সে দোষী। তবুও কেন এখনো অমিত সাহাকে নিয়ে লুকোচুরি? কোন মহলের পক্ষ থেকে চলছে আবরার হত্যাকাণ্ডের সূচনাকারী অমিত সাহাকে বাঁচানোর চক্রান্ত? কেন তার ব্যাপারে মিডিয়া সাইলেন্স?
অনেকে অভিযোগ করছেন অমিত সাহা ইসকন সদস্য। বিভিন্ন প্রতিবেদনের ফুটেজে তার রুমে এবং তার পড়ার টেবিলে ইসকন সদস্যদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ছবিও দেখা যাচ্ছে। আবার ছাত্রলীগের কথিত তদন্ত কমিটির সদস্যরাই মিডিয়াতে স্বীকার করেছে যে পূজা দেখে আসার পর আবরারকে হত্যা করা হয়। পুরো দেশের মানুষ যখন আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এক বিন্দুতে, তখন এতো প্রমাণ থাকার পরও কোন শক্তির জোরে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে অমিত সাহার অপরাধ?
বর্তমান বাস্তবতায় কেউ যদি এই উপসংহার টানতে বাধ্য হয় যে, আবরার ফাহাদকে হত্যাকারী অমিত সাহাকে তার হিন্দু পরিচয়ের কারণেই বাঁচিয়ে দেয়া হচ্ছে, তবে কি সেটা সাম্প্রদায়িকতা হবে? ইসকন কানেকশনের কারণেই ভারতীয় দূতাবাসের নির্দেশে আড়াল করে রাখা হচ্ছে অমিত সাহাকে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর কি বাংলার মুসলিমরা আদৌ পাবে?