দেশে সরকারি, বেসরকরি, বিশেষয়াতি ও বিদেশী মিলে ৫৯টি তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। এ ৫৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৪০টিই খেলাপি ঋণের ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয়ের ওপর ব্যাপক হারে প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, খেলাপি ঋণ বেশি হলে ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো ঋণঝুঁকি বেড়ে যায়। খেলাপি ঋণ বেশি হলে, ব্যাংকগুলোর বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর এক সাথে আয় কমে যায়। অপর দিকে আয় কুলাতে না পারলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। আর প্রভিশন ঘাটতির পাশাপাশি মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। আর মূলধন ঘাটতি হলে সামগ্রিক ঝুঁকির মুখে পড়ে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এ কারণে দেশের পেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্থাৎ ব্যাসেল ৩ অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে থাকলে এটাকে সহনীয় ধরা হয়। কিন্তু ৫ শতাংশের ওপরে হলেই সেটাকে অসহনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন অনুযায়ী বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাংক সরবরাহকৃত খেলাপি ঋণের তথ্যের সাথে গরমিল দেখা দেয়। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির করে খেলাপিঋণ কম দেখায়। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বছর শেষে ব্যাংকগুলোর আর্থিক মানদণ্ড নিরূপণ করা হয়। এটাকে ব্যাংকিং ভাষায় ক্যামেলস রেটিং বলা হয়।
খেলাপি ঋণের সর্বশেষ প্রতিবেদন করা হয় গত সেপ্টেম্বর-ভিত্তিক তথ্য নিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের ৫৯টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে খেলাপি ঋণের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ৪০টি ব্যাংক। এর মধ্যে সরকারি ও বিশেষায়িত ৯ ব্যাংকের মধ্যে ৯টিই খেলাপি ঋণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। অপর দিকে ৪১টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ২৯টিই খেলাপি ঋণের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আর বিদেশী ৯টি ব্যাংকের মধ্যে দু’টি ঋণ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। অর্থাৎ আলোচ্য ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের উপরে রয়েছে। ঝুঁকির মুখে পড়া ২৯টি বেসরকারি ব্যাংকের কোনো কোনোটির খেলাপি ঋণ ৪০ থেকে ৮৫ শতাংশ রয়েছে।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত