গোয়েন্তানামোর বন্দী আবু জুবাইদাহ, নিজ হাতে আঁকলেন মার্কিনীদের নির্যাতনের ছবি

6
3089
গোয়েন্তানামোর বন্দী আবু জুবাইদাহ, নিজ হাতে আঁকলেন মার্কিনীদের নির্যাতনের ছবি

ক্রুসেডার সন্ত্রাসী আমেরিকার নিকৃষ্ট চেহারা আজ বিশ্ববাসীর সামনে সুস্পষ্ট। গোয়েন্তানামো বে, আবু গারিব —এসকল কারাগারের প্রতিটি সেল সন্ত্রাসী আমেরিকার হিংস্রতার প্রমাণ বহন করে। কুখ্যাত মার্কিন সন্ত্রাসী প্রতিষ্ঠান সি.আই.এ তাদের গোপন টর্চারসেলে এমন সব পাশবিক অত্যাচার করে যা চিন্তা করাও কোন মানুষের পক্ষে হয়তো সম্ভবপর নয়।

সম্প্রতি গোয়েন্তানামো কারাগারের এক বন্দী মুসলিম, আবু জুবাইদাহ নামে পরিচিত জয়নাল আবেদীন মুহাম্মাদ হোসাইন (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ)-এর নিজের আঁকা ৮টি ছবি প্রকাশিত হয়। এসকল ছবিতে আবু জুবাইদার উপর মার্কিন সন্ত্রাসীদের নির্মম নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে।  সি.আই.এ-এর সদস্যরা কি আসলেই রক্তপিণ্ডে মানুষ নাকি মানুষরূপি জানোয়ার! সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া আবু জুবাইদার আঁকা নির্যাতনের চিত্রের ভিত্তিতে সি.আই.এ-কে ‘হিংস্র জানোয়ারদের সংস্থা’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

আবু জুবাইদাহ (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) এর আইনজীবী ‘স্যাটন হল ল সেন্টার এন্ড রিসার্চ’ এর পরিচালক Professor Mark P. Denbeaux এবং তার সহকর্মীরা আবু জুবাইদার আঁকা ছবিগুলোসহ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। ৯৫ পৃষ্ঠার ঐ রিপোর্টে সন্ত্রাসী মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সি.আই.এ-এর দশটি নির্যাতনপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর, দশ নির্যাতনপদ্ধতির সবগুলোই আবু জুবাইদাহ (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) এর উপর প্রয়োগ করে মার্কিন সন্ত্রাসীরা। আবু জুবাইদাহ তাঁর উপর চালানো নির্যাতনের সেই ভয়াবহ চিত্রগুলো ছবিতে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেন।

প্রকাশিত প্রায় সবগুলো ছবিতেই আবু জুবাইদাহকে নগ্ন অবস্থায় নির্যাতন করতে দেখা যায়।  এর মধ্যে, একটিতে দেখা যায় তাঁকে নগ্ন অবস্থায় বেধে রেখে ওয়াটারবোর্ডিং করানো হচ্ছে। তাঁর পুরো শরীর সমান্তরালভাবে পা থেকে মাথা অবধি বেধে ফেলা হয়েছে। বিশেষ ধরণের দড়ি দিয়ে এমনভাবে বাধা যে একটু নড়াচড়া করারও অবকাশ নেই। তারপর তাঁর মুখ বরাবর অনবরত পানি ঢেলে দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় একজন ব্যক্তির মনে হবে যেন তিনি পানিতে ডুবে যাচ্ছেন।
“যতোক্ষণ পর্যন্ত না আমি বেহুশ হয়ে যাই বা আমার মুখে ফেনা উঠে যায় ততোক্ষণ চলে এ পাশবিক লোমহর্ষক নির্যাতন।” – আইনজীবীকে বলছিলেন আবু জুবায়দা। আর, আবু জুবাইদাহকে ৮৩বার এরকম ওয়াটারবোর্ডিং করানো হয়েছে।

তাঁর শরীরে বিভিন্ন ক্ষত থাকা অবস্থাতেই এমন নির্যাতন করা হয়েছে। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, আবু জুবাইদাকে উপরে এমনভাবে বেধে রাখা হয়েছে যে, তাঁকে পায়ের আঙ্গুলের মাথার উপর ভর দিয়ে থাকতে হয়েছে।  হাত-পা বাধা এবং ঝুলন্ত অবস্থাতেই তাঁকে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে হয়েছে। আর, এসকল প্রস্রাব-পায়খানাও তাঁর দেহে শুকিয়েছে।

এভাবে নির্যাতনের পাশাপাশি আবু জুবাইদা (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) এর মত একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে ঠাণ্ডা পরিবেশে উলঙ্গ অবস্থায় রাখা হয় আবার ব্যবহারের জন্যও ঠাণ্ডা পানিই দেওয়া হয়। সি.আই.এ-এর নিকৃষ্ট সন্ত্রাসীরা কেবল এরকম পাষণ্ড কাজেই থেমে থাকেনি, তারা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত আবু জুবাইদাকে ঘুমোতে পর্যন্ত দেয়নি। আবু জুবাইদাহ (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) বলেছেন, তাঁকে সি.আই.এ-এর সন্ত্রাসীরা বহুদিন ধরে এক সেকেন্ডের জন্যও ঘুমোতে দেয়নি। যখনই তিনি ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে চেয়েছেন, মার্কিনী সন্ত্রাসীরা তাঁর দিকে পানি নিক্ষেপ করেছে, কখনো শরীরে নাড়া দিয়েছে। আবার, কখনো বা তারা আবু জুবাইদাহকে ঘুম থেকে বিরত রাখতে অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।
আবু জুবাইদার আঁকা আরেকটি ছবিতে দেখা যায় তার বাম পা-তে একটি দীর্ঘ ক্ষত সেলাই করা হয়েছে এবং তাঁর খোলা মুখ থেকে অসহনীয় চিৎকার বের হচ্ছিল। আর এক মার্কিন সন্ত্রাসী তাঁর মাথা দেওয়ালের দিকে ছুঁড়ে মারছিল।

আরেকটিতে দেখা যায়, আবু জুবাইদাহ (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ)-কে একটি ছোট বাক্সে ভরে রাখা হয়েছে। সেখানে নড়াচড়ার কোনো অবস্থা নেই।

এভাবে, প্রকাশিত রিপোর্টটির প্রতিটি পাতা জুড়েই আছে মার্কিন সন্ত্রাসীদের নির্মম নির্যাতনের বিভিন্ন পদ্ধতির বর্ণনা। আর, এসবগুলো নির্যাতনপদ্ধতিই আবু জুবাইদাহ (ফাক্কাল্লাহু আসরাহ) এর উপর প্রয়োগ করে মার্কিন সন্ত্রাসীরা।

২০০২ সালে সন্ত্রাসী ক্রুসেডার বুশের শাসনামলে মার্কিন সন্ত্রাসীরা পাকিস্তান থেকে ফিলিস্তিনী নাগরিক আবু জুবাইদাহ নামে পরিচিত জয়নাল আবেদীন মুহাম্মাদ হুসাইনকে গ্রেফতার করে। তারপর থেকেই আবু জুবাইদার উপর বর্বরতম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তারা। হক্বপন্থী সত্যবাদী আরো অনেক মুসলিমের উপরও মার্কিনী সন্ত্রাসীরা তাদের গোপন নির্যাতন কক্ষে এরকম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। আবু ‍জুবাইদাহ, রামযি ইউসুফ, আফিয়া সিদ্দিকা— ঐসকল কারাবন্দীদের মধ্য থেকেই কয়েকজন। তাঁদের উপর মার্কিন সন্ত্রাসীদের নির্যাতন চলছে, কারণ তাঁরা বলেন- আমাদের রব কেবলই আল্লাহ।

6 মন্তব্যসমূহ

Leave a Reply to হালিমা প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্পাদকীয় (Video) | যে কারণে মার্কিন নৌ-ঘাঁটিতে হামলা করেছেন হেজাযের বৈমানিক!
পরবর্তী নিবন্ধউত্তরপ্রদেশে পুলিশ সন্ত্রাসীদের গুলিতে একদিনেই নিহত ৯, গ্রেফতার ৩ হাজার