ভারতের কাটোয়ার করুই গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুনগ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে এনআরসি আতঙ্ক কাড়ল দুটি প্রাণ। এলাকাজুড়ে শোক। নতুনগ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার শেখ (৬৫) আর পশ্চিমপাড়ার আবুল কাশেম শেখের (৬৮) ভোটার কার্ডের নামের সঙ্গে আধার কার্ডের নামের মিল না থাকায় খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন দুজনেই। এনআরসি নিয়ে আলোচনা ও আতঙ্কে দুজনেই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। পঞ্চায়েত, বিডিও অফিসে ছোটাছুটি করেও কিছু কূলকিনারা করতে পারছিলেন না। ক’দিন ধরে ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়াও করছিলেন না। রাতের ঘুম পর্যন্ত ছুটে গিয়েছিল। শেষমেশ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঘণ্টাখানেকের ব্যবধানে দুজনেরই মৃত্যু হল। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় নমাজ পড়ে বাড়ি এসে সামান্য খাবার মুখে দেন আবুল কাশেম। কিছুক্ষণ পর থেকেই শরীর আনচান করতে থাকে। ঘামতে থাকেন। তারপর জ্ঞান হারিয়ে ঘরের মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন। আর জ্ঞান ফেরেনি। কাশেমের ছেলে হাসিবুল শেখ বলছিলেন, ‘বাবার আধার কার্ড আর ভোটার কার্ডের নামের বানান একরকম ছিল না। জন্ম সার্টিফিকেটও নেই। এনআরসি নিয়ে চতুর্দিকে গোলমাল হওয়ায় বাবা তাই খুব উদ্বেগে ছিলেন। কেবল বলতেন, তোদের নিয়ে এই বয়সে কোথায় যাব? শেষমেশ এনআরসি–র আতঙ্কেই বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল।’ মৃত আবদুস সাত্তার শেখের ছেলে মণিরুল ইসলাম, ভাইপো সফিকুল ইসলামরাও এই মৃত্যূর জন্য এনআরসি আতঙ্ককেই দুষছেন। তাঁদের বক্তব্য, এলাকার গোটা মুসলিম সমাজই এনআরসি নিয়ে চরম চাপে রয়েছে। রোজকার কাজকর্ম ভুলে নথিপত্র সংশোধন করতে পঞ্চায়েত অফিস–সহ বিভিন্ন সরকারি অফিস ঘুরে ঘুরে পায়ের শিরা ছিঁড়ে যাচ্ছে। অফিসগুলোও ঘোরাচ্ছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পরিবার, সন্তান বা আত্মীয়দের সঙ্গে আলাদা হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক কুরে কুরে খেত দুই বন্ধু আবদুস সাত্তার আর আবুল কাশেমকে। মসজিদে, ইদগাহতে, মাঠে–ঘাটে কারও সঙ্গে দেখা হলেই সেই দুশ্চিন্তাই উগরে দিতেন দুজনেই। কিছুদিন ধরে মানসিকভাবেও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ঘরের মধ্যেও একা থাকলে দু’চোখ বেয়ে জল গড়াত। এলাকার সংশ্লিষ্ট করুই গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সুখেশ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘এনআরসি–র শিকার হলেন আমাদের অঞ্চলের দুই বরিষ্ঠ নাগরিক। বিজেপি নেতৃত্ব দেখুন কী ভয়ঙ্কর আইন দেশে চালু করতে চলেছে।’
বিষয়টি জেনেছেন সংশ্লিষ্ট কাটোয়া ২নং ব্লকের বিডিও শমীক পাণিগ্রাহি। ঘটনাটি ‘খুবই দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বললেন, ‘শুনছি ওঁদের সরকারি নথিতে নামের গন্ডগোল ছিল। সেটা সংশোধনের জন্য ওঁরা ঘোরাঘুরি করছিলেন অনেকদিন ধরে। এনআরসি নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন।’