সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের তথ্য শেয়ার করে ৩৬.৭০% মানুষ। গ্রাহকদের সংবেদনশীল তথ্য বেহাত করার অভিযোগ উঠেছে দেশের অন্যতম রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাওয়ের বিরুদ্ধে। গ্রাহকের স্মার্টফোনে থাকা তথ্য অনুমতি ছাড়াই ব্যবহারের অভিযোগে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা পাঠাও বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। শুধু রাইড শেয়ারিং অ্যাপই নয়, গ্রাহকের তথ্য অনুমতি ছাড়াই অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। এমন কর্মকাণ্ডকে সম্পূর্ণ অবৈধ বলছেন তথ্য-প্রযুক্তি এবং সাইবার বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এভাবে তথ্য বেহাত হলে একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবন উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারে। এর ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারেন গ্রাহক। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের তথ্য বেহাত হলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। এমন বাস্তবতায় মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক তথ্য সুরক্ষা দিবস (ডাটা প্রাইভেসি ডে)।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, স্মার্টফোনের কল্যাণে দেশে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ১০ কোটি। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেজিস্ট্রেশনের নামে নেওয়া হচ্ছে তথ্য। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করলেও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্যবহারকারীর কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছে নানা তথ্য। দেশে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় শক্তিশালী আইনের অনুপস্থিতিতে দেশি-বিদেশি অনেক কম্পানি তাদের ব্যবহারকারী ও ক্রেতাদের ব্যক্তিগত আচরণ পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পাচ্ছে। ভোক্তাদের এসব তথ্য কোনো কোনো কম্পানি বিক্রিও করে দিচ্ছে।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার বিষয়ে জানেন ৭৮.৫০ শতাংশ মানুষ। অপরিচিতদের থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেলে গ্রহণ করেন ২৪.১০ শতাংশ মানুষ। মোবাইল অ্যাপগুলো কোন তথ্য নিচ্ছে এবং তার সুরক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত নন ৫৯.৫০ শতাংশ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের শারীরিক সুস্থতা-অসুস্থতা, বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া ও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কিত তথ্য পাবলিকলি শেয়ার করেন (এটি মূলত অনুচিত) ৩৬.৭০ শতাংশ, কোনো পোস্ট শেয়ার দেওয়ার আগে সেটির সত্যতা যাচাই করেন ৮৭.৩০ শতাংশ, অনলাইনে প্রাইভেসি সেটিংসের বিষয়ে ধারণা ভালো ৪৪.৩ শতাংশ, মোটামুটি ৫০.৬ শতাংশ, বাকিদের কোনো ধারণাই নেই। এ ছাড়া বিভিন্ন কম্পানি গ্রাহকের ব্যক্তিগত যেসব তথ্য নিচ্ছে সেগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে জবাবদিহি চান ৮১ শতাংশ এবং ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ আইন বা নীতিমালা করার পক্ষে শতভাগ মানুষ।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যেসব ডিজিটাল সেবা দেওয়া হচ্ছে তাতে নানা তথ্য নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তথ্যটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। ভোক্তাদের বোঝা প্রয়োজন, তাঁদের তথ্যের সঠিক মূল্য আসলে কতটা এবং কিভাবে এই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তা শেয়ার করা হচ্ছে। এ ছাড়া তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্যের ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করা জানতে হবে।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ