একুশে বইমেলায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ তথা ‘ইসকন’কে স্টল বরাদ্দ দেয়ার ঘটনাকে বাংলা একাডেমির উস্কানিমূলক পদক্ষেপ উল্লেখ করে অবিলম্বে এই বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদরাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
বুধবার এক বিবৃতিতে আল্লামা বাবুনগরী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইসকন উগ্র ও ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্ববাদের মতাদশের প্রচার প্রসারে জড়িত একটি বিতর্কিত আন্তর্জাতিক সংগঠন।
তিনি আরো বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়ন ও প্রসারের লক্ষ্যে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি এই বইমেলার আয়োজন করা হয়। বাংলা একাডেমি হওয়ার কথা বাঙালি মুসলমানের মননের প্রতীক। বাংলা একাডেমির মূল কাজ বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য, জীবনবোধ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করা। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতো একজন বুজুর্গ এই প্রতিষ্ঠান গড়ায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। আজ সেখানে আমরা দেখছি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের স্টল। এটা বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতাদের চিন্তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
হেফাজত মহাসচিব বলেন, বাংলা একাডেমি গড়ে উঠেছে এবং পরিচালিত হচ্ছে দেশের জনগণের অর্থে। এরকম প্রতিষ্ঠানের কাজে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সংস্কৃতি, জীবনবোধ ও সাহিত্য ঐতিহ্যের প্রতিফলন থাকার দায় রয়েছে। এরকম একটি প্রতিষ্ঠান কোনভাবেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ও মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো সংস্থাকে তার দর্শন প্রচারের জন্য জায়গা করে দিতে পারে না। এটা জনগণের অর্থে জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি আক্রমণ বৈ কিছু নয়।
তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইসকনের সাম্প্রদায়িক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তৌহিদী জনতার প্রতিবাদ ও অসন্তোষ দেখেছি আমরা। এখন বিস্ময়ের সঙ্গে আমাদের দেখতে হচ্ছে- বাংলা একাডেমির মতো সাহিত্য-সংস্কৃতির কেন্দ্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ইসলামের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ লালনকারী ইসকনের আদর্শের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ বসে আছে।
আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, মেলায় কেবল ইসকনের স্টল বাতিলই নয়, বাংলা একাডেমিকে অবিলম্বে ব্যাখ্যা দিতে হবে, ঠিক কী কারণে তারা হিন্দুত্ববাদ প্রচারকারী একটা সংস্থাকে স্টল দিয়েছে। কাদের তরফ থেকে এবং কাদের দ্বারা এই ঘটনা ঘটেছে।
হেফাজত মহাসচিব ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে যখন হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে তরুণ-তরুণীদের বিক্ষোভ হচ্ছে, খোদ সারা ভারতে যখন সাম্প্রদায়িক নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী আদর্শের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন চলছে, তখন ইসকনকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকে কী বার্তা দিতে চাচ্ছে?
বাংলা একাডেমির এই উস্কানিমূলক পদক্ষেপের জন্য জনগণের যেকোনো ক্ষোভের প্রকাশ ঘটলে তার দায়ভার বাংলা একাডেমির উপরই বর্তাবে উল্লেখ করে, বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য অনতিবিলম্বে ইসকনের স্টল বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানান হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।
সূত্রঃ নয়া দিগন্ত