বাংলাদেশের একটি মন্দিরে হামলা চালানো হচ্ছে, এমন একটি ভিডিও ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন দেশটির বিজেপি সন্ত্রাসীরা।
গত কয়েক দিন ধরেই ওই ভিডিওটি অনেক ভারতীয়র ফেসবুক টাইমলাইন ও টুইটার হ্যান্ডেলে ভাসছে।
এসব ভারতীয়র দাবি– বাংলাদেশে হিন্দু মন্দিরে ‘মুসলিম জিহাদি বাহিনী’ এই বর্বর আক্রমণ চালিয়েছে।
দেশটিতে মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী পাস নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
এবং তা পরিস্থিতির আগুনে ঘি ঢালছে।
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ধর্মীয় নির্যাতন এখনও অব্যাহত রয়েছে এমন খবর প্রচার করে ভিডিও শেয়ার করে অনেকেই মোদি সরকারের এনআরসিকে সমর্থন জানিয়েছেন।
অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিষয়টি আদৌ তেমনটি নয়। মুসলিম জিহাদি বাহিনী নামে কোনো গ্রুপের অস্তিত্ব ছিল না ওই ঘটনায়। ভিডিওতে দেখা সংঘর্ষটি ছিল ওই মন্দিরের অন্তর্দ্বন্দ্বীয় কলহ। গত ১৭ জানুয়ারি নেত্রকোনার এক ইসকনের মন্দিরে এ ঘটনাটি ঘটে।
এ বিষয়ে ওই মন্দিরের প্রেসিডেন্ট জয়রাম দাস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হামলাটিকে নিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো হচ্ছে ভারতে। বিষয়টি আদৌ তেমনটি ছিল না। একটি দেবোত্তর সম্পত্তির জবরদখল ঠেকানোর জন্য মন্দিরের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে এ হামলার ঘটনা ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘২৫ হিন্দু ও তাদের মদদদাতা কয়েকজন মুসলমান মিলে ওই জমিটি জবরদখল করে রেখেছে। সেই বিষয়টি নিয়েই ঘটনাটি আবৃত। এখানে বাইরের কোনো গোষ্ঠী এসে হামলা চালায়নি। এটি মূলত হিন্দুদের নিজেদের মধ্যে জমিসংক্রান্ত একটি গণ্ডগোল মাত্র।’
ভিডিওটি নিয়ে গবেষণা করেছে ভারতে দুটি নির্ভরযোগ্য মিডিয়া ফ্যাক্ট চেক টিম- ‘দ্য কুইন্ট’ ও ‘অল্ট নিউজ’।
তাদের বক্তব্যও ওই মন্দিরের প্রেসিডেন্ট জয়রাম দাসের সঙ্গে মিলে গেছে।
দল দুটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বলে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ওই ভিডিওটির সঙ্গে ইসলামী জিহাদি হামলার দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। একটি জমির দখল কেন্দ্র করে স্থানীয় হিন্দুদের সঙ্গে মন্দির কর্তৃপক্ষের সংঘর্ষ ঘটে। হামলাকারীরা প্রায় সবাই ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এ হামলার ঘটনা মন্দিরের কর্মকর্তারা স্বীকারও করেছেন। নেত্রকোনার থানা পুলিশের এজাহারেও একই বক্তব্য রয়েছে।
ওই ঘটনায় নেত্রকোনা পুলিশের কাছে দায়ের করা এফআইআরে মন্দির কর্তৃপক্ষ যাদের নামে অভিযোগ করেছে, তাদের বেশিরভাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীর।
তারা হলেন— শান্তা সরকার, ছায়া সরকার, রূপম চৌহান, রাজন চৌহান, মোহাম্মদ পরশ, হিমেল মিঞা, শরিফ আহওয়াল, বিশ্ব সরকার, তাপস সরকার, উজ্জ্বল সরকার।
উল্লেখ্য, জানুয়ারি মাসের এ ঘটনার সপ্তাহখানেক পর ‘এফএম হিন্দু’ নামে ভারতের দক্ষিণপন্থী হিন্দুদের একটি গ্রুপ ফেসবুকে সেই ঘটনার ভিডিওটি আপলোড করে ক্যাপশন দেয়– ‘বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার ইসকন মুক্তারপুর মন্দিরে হামলা চালিয়েছে মুসলিম জিহাদি বাহিনী। তিনজন ভক্ত মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে।’
গত ২০ জানুয়ারি জগদীশ মুরারি দাস নামে একজন ভারতীয় হিন্দু ধর্মপ্রচারক নিজের ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে একই গুজব ছড়ান।
তার ওই পোস্ট টুইট করেন বিজেপি সমর্থিত জনসঙ্ঘ দলের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের চয়ন চ্যাটার্জি।
নিজের টুইটার হ্যান্ডলে তিনি লেখেন– ‘ইসকনের নেত্রকোনা মুক্তারপুর মন্দিরে হামলা চালিয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। তিনজন কৃষ্ণভক্ত গুরুতর আহত। শুধু দেখুন– বাংলাদেশে হিন্দুরা আজও কতটা বিপদের মুখে। ভারতে যারা নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরোধিতা করছেন তারা জবাব দিন।’
একই বক্তব্য দিয়ে ২৩ জানুয়ারি সেই ভিডিও টুইট করেন বিজেপির যুব শাখার তথ্যপ্রযুক্তি সেলের আহ্বায়ক অভিজিৎ বসাক। সেখানে তিনি লেখেন– ‘হিন্দুরা বাংলাদেশে নিরাপদ নয়’।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি রিটুইট করে অভিজিৎ বসাকের সেই টুইট ।
এভাবেই বাংলাদেশকে দোষারোপ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের টুইট ঝড়ে মেতে ওঠেন বিজেপি ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।
সূত্র: যুগান্তর
Hmmmm