কিছুদিন ধরেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রন নিজেকে আফ্রিকার মানুষজনের কাছে সহানুভূতিশীল এবং বন্ধু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তাঁর এই ব্যবহার আপাতদৃষ্টিতে প্রাক্তন ফরাসি শাসকদের থেকে আলাদা। যারা দীর্ঘ সময় ধরে আফ্রিকাতে খুন জখম ,লুটপাট এবং রাহাজানি চালিয়ে গেছে এবং পুরো বিশ্ব যখন উন্নতি করছে টেকনোলজি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে, তখন এই সব ফরাসি শাসকরা আফ্রিকাকে ঠেলে দিয়েছে অজ্ঞতার অন্ধকারে।
প্রেসিডেন্ট মাক্রন ছদ্ম দাসব্যবস্থা FACA বা Francafrique এর বদলে আপাতদৃষ্টিতে অনেক আধুনিক পদ্ধতি আফ্রিকার মানুষজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যা বাহ্যিকভাবে চমৎকার মনে হলেও এটা দাসব্যবস্থার থেকেও ভয়ঙ্কর। তাই, আফ্রিকার সচেতন মুসলিম জনগণ এবং মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা ফ্রান্সের এই চেষ্টার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেছেন এবং আফ্রিকার মাটি থেকে ফরাসি ক্রুসেডার সৈন্যদের প্রত্যাহার করতে সংগ্রাম শুরু করে দিয়েছেন। মুসলিম জনগণের এই সংগ্রামে ভয় পেয়ে ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট মাক্রন মালি, নাইজার, বুর্কিনা-ফাসো ও সাহেলী দেশগুলোর ফরাসি দালাল শাসকদের নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। তাদের আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো – আফ্রিকার মাটিতে ফরাসি দখলদারদের সংখ্যা বাড়ানো এবং মুজাহিদদের আলোচনার টেবিলে বসিয়ে তাদের দুর্বল করা। আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান অত্যাচারীদের একটি পুরোনো ছল, যখন তারা বিপদে পড়ে তখনই তারা আলোচনার মাধ্যমে বিপক্ষকে দুর্বল করার চেষ্টা করে।
এই ধরনের আলোচনার আসল উদ্দেশ্য খুব দ্রুত সবার সামনে চলে আসে, যখন দখলদার ফরাসি সেনারা গণহত্যা এবং লুটতরাজে অংশ নেয়। গত বৃহস্পতিবার-শুক্রবারে, মুসলিম ফুলানি সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া হামলা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই হামলাতে ৪৮ জন ফুলানি সম্প্রদায়ের মানুষ মারা যান, যার মধ্যে মহিলা ও শিশুও আছে। ফরাসি সেনাদের পূর্ণ সহযোগিতায় এই গণহত্যা চালিয়েছে মালির সেনাবাহিনী। আর, ঐ সকল ফরাসী সেনাদেরকেই প্রেসিডেন্ট মাক্রন আফ্রিকার মানুষজনের কাছে সহানুভূতিশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরতে ব্যস্ত।
ফুলানি সম্প্রদায়ের ওপর চলা এই গণহত্যা আমাদের বিংশ শতাব্দীতে আলজেরিয়াতে চলা ফরাসি সমর্থিত গণহত্যার কথা মনে করিয়ে দেয়। সালেম ডিগলের মত ফরাসি শাসকরা, তাদের সমর্থিত আফ্রিকার পুতুল শাসকদের সাহায্যে কয়েক দশক ধরে আলজেরিয়ার মুসলিমদের উপর এই আক্রমণ চালিয়ে গেছে। মুসলিমদের অপরাধ ছিল কেবল এটাই যে, তারা শরিয়ার আলোকে জীবন অতিবাহিত করতে চেয়েছিলেন, বাঁচতে চেয়েছিলেন। এটাই প্রমাণ করে যে, ফরাসি দখলদারদের প্রকৃত উদ্দেশ্য আসলে কী।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রন বা তার পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট হোলান্দে, মালির মাটিতে পা রেখেই ভেবেছিল যে, মুসলিম জনগণকে পদদলিত করা খুবই সহজসাধ্য। কিন্তু বিষয়টা যখন বিপরীত মোড় নিল, তখন তাদের ব্যর্থতার ক্রোধ থেকেই তারা ফুলানি গণহত্যা চালিয়েছে। কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছে যে, এলিসি প্রাসাদের সব ধন-সম্পত্তি খাটিয়েও তারা আফ্রিকার মুসলিম জনসাধারণের ওপর অত্যাচার আর বেশি দিন চালাতে পারবে না। তারা কল্পনা এবং বুঝতেও পারেনি যে, জনগণের পক্ষ থেকে তারা এই ধরণের প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে। ইনশাআল্লাহ তাদের এই দুর্দশা চলতে থাকবে, যতদিন না তারা আফ্রিকার এই মাটি ছেড়ে চিরদিনের মতো বিদায় নেয়।
গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী আল-কায়েদার মালিভিত্তিক শাখা জামাআত নুসরাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এই বার্তাটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন ত্বহা আলী আদনান, প্রতিবেদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।