আফগানিস্তানে নিরীহ বেসামরিক লোকদের হত্যাকাণ্ড শান্তিচুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করছে

1
1460
আফগানিস্তানে নিরীহ বেসামরিক লোকদের হত্যাকাণ্ড শান্তিচুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করছে

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সন্ত্রাসী কাবুল প্রশাসন এবং তাদের প্রধান বিদেশী সাহায্যকারী আমেরিকান হানাদার বাহিনী আফগানিস্তানজুড়ে বিভিন্ন প্রদেশে অনেক নিরীহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে চলেছে। এইসকল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হেলমান্দ, কান্দাহার, ফারাহ, কুন্দুজ, নানগারহার, পাকতিয়া, বাদাখশান, বলখসহ আফগানিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলে চালানো হচ্ছে। আমেরিকানদের সাথে এ বছর ২৯ ফেব্রুয়ারিতে ইসলামী ইমারতের শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চু্ক্তিটি হওয়ার পর থেকেই ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের মুজাহিদরা চুক্তির সমস্ত ধারা অনুসরণ করে পূর্ণ আন্তরিকতা প্রদর্শন করে চলেছেন। কিন্তু বিপরীতে আমরা দেখছি যে, আমেরিকানরা চুক্তিটিতে সম্মত হয়ে স্বাক্ষর করলেও তারা এখন চুক্তি মানতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমেরিকানরা তাদের পক্ষ থেকে চুক্তিটি বাস্তবিকভাবে মেনে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

বন্দীদের মুক্তিতে বিলম্ব, সাধারণ মানুষের  উপর রাত্রকালীন অভিযান, বর্বর বিমানহামলা, সাধারণ নাগরিকদের গণহত্যা—এসবগুলো যুদ্ধাপরাধই আমেরিকা তার কাবুলের পুতুল বাহিনীকে সাথে নিয়ে সংঘটিত করে চলেছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে শান্তি প্রক্রিয়াটি মারাত্মকভাবে ব্যহত হবে। আর, এর ফলে আফগানিস্তানের ইসলামী ইমারতের মুজাহিদিনও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য থাকবেন।

আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাতের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হলো—আফগানদের নিরাপত্তা, তাদের সম্পদ-সম্পত্তি, জীবন রক্ষা এবং আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব অর্জন করা। আর, এসকল বিষয়কেই যখন হুমকির সম্মুখীন করা হয়, তখন শান্তি, যুদ্ধবিরতি ও চুক্তি নিয়ে কারো সাথে কথা বলার কোনো মানে হয় না।
দুর্নীতিবাজ, অপরাধী এবং আগ্রাসী বিদেশী বাহিনীর প্রতিনিধি কাবুল সরকার যুদ্ধে টিকে থাকতে আগ্রাসী বিদেশী বাহিনীর নির্দেশ এবং ক্ষমতাতেই শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। মূলত, ঐ সকল আগ্রাসী বিদেশীরা আফগানিস্তানকে একটি স্থিতিশীল, সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় না। এ কারণেই তারা কাবুল প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে আফগানে শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে।

ইসলামী ইমারত সর্বদা আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য সংঘাতমুক্ত শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আফগানিস্তান থেকে হানাদার বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার করার জন্য জোর দিয়ে আসছে। যারা আফগানদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল এবং আগ্রাসী বিদেশীদের সমর্থন করেছিল তারা যদি তাওবা করে তাহলে ঐসকল ব্যক্তিদেরকে ইসলামী ইমারতের আমীর সম্মানিত আমীরুল মুমিনীন শাইখুল হাদিস মৌলবী হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (হাফিজাহুল্লাহ) ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মুজাহিদরা বারবার বলেছেন যে, দুর্নীতিবাজ নেতাদের কারণে বিভ্রান্ত হওয়া সরকারি কর্মকর্তারা যদি অনুশোচনা করে ফিরে আসে  এবং দালাল শাসকদের সমর্থন করা বন্ধ করে দেয় তাহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদের সবাইকে ক্ষমা করা হবে। মুজাহিদগণ সর্বদা ইসলামের শিক্ষা অনুসারে বন্দীদের সাথে উত্তম আচরণ ও  আহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন এবং তাদের মুক্তি দেন। এরকমভাবে দালাল সরকারের বিভ্রান্ত বন্দী সৈন্যদের প্রতি আফগানিস্তান ইসলামী ইমারত সবসময়ই দয়া দেখিয়েছেন।

 

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জেনে রাখা উচিত, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর আফগানিস্তান ইসলামী ইমারত যুদ্ধমাত্রা হ্রাস করেছে সবাইকে দেখানোর জন্য যে, আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথেই ইসলামী ইমারত অগ্রসর হচ্ছে। তবে, আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের মুজাহিদ বাহিনীর এই অবস্থানকে তাদের দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করার কোনো সুযোগ নেই।

আমেরিকানদের এখন আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সময় হয়েছে, যে চুক্তিতে তারা সম্মত হয়েছিল এখন সেটি বাস্তবায়ন করার সময় হয়েছে। তাদের উচিত নিরপরাধ জনসাধারণের উপর হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা। নিরপরাধ জনগণের বিরুদ্ধে রাত্রকালীন হামলা এবং বিমান হামলা চালানো থেকে আমেরিকান দখলদারদের বিরত থাকা উচিত। যদি তারা বিরত না হয়, তবে বিপরীতমুখী জবাব দেওয়া হবে। এখন শান্তিচুক্তির প্রতি আমেরিকানদের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আন্তরিকতা প্রমাণ করার সময় এসেছে।

যেহেতু আফগান জনগণ কাবুল প্রশাসনকে পরিত্যাগ করেছে, তাই এই নিষ্ক্রিয় প্রশাসনের কোনো ধরণের বৈধতা নেই। বিদেশী সাহায্যকারীদের সমর্থন নিয়ে এই প্রশাসনের অবৈধ শাসনের ধারাবাহিকতা আফগানিস্তানজুড়ে সংঘাতকে কেবল বৃদ্ধিই করতে থাকবে। আফগান সমাজে কাবুলের দ্বৈত নেতৃত্বাধীন শাসন ব্যবস্থা এবং এর দ্বৈত পাসপোর্টধারী মানুষগুলোর কোনো শিকড় নেই। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো, সাধারণ আফগানদের কথা বিন্দুমাত্র বিবেচনা না করে আগ্রাসী বিদেশীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কাজ করে আফগানিস্তানের সম্পদ লুণ্ঠন করা।


আর্টিকেলটি ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের অফিসিয়াল ইংরেজী সাইটে গত ৭ই এপ্রিল প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে এটি অনুবাদ করেছেন ভাই ইউসুফ আল-হাসান। 

১টি মন্তব্য

  1. কাফেরদের প্রতি আস্থা রাখলে কোন লাভ নেই এটা কোরআনে স্পষ্ট করেই বলা আছে।
    তবুও কোরআনে কারীমই যেহেতু আবার বলেছে তারা চুক্তি করতে চাইলে তোমরাও সেদিকে সাড়া দিবে তাই মুজাহিদিনরা আমেরিকাকে সুযোগ দিয়েছে। এটাকে দুর্বলতা জ্ঞান করলে শেষ পরিণতি কী হবে আমেরিকার এটা ভালোভাবেই জানা থাকার কথা।

Leave a Reply to আম্মার আব্দুল্লাহ প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধদোহারে মুয়াজ্জিনসহ সাত মুসল্লীকে কুপিয়ে জখম করলো আ’লীগ সন্ত্রাসীরা
পরবর্তী নিবন্ধপাকতিকা প্রদেশে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন ইসলামী ইমারত কর্তৃপক্ষ