করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ভারতে পৃথক দুটি ঘটনায় চিকিৎসার অভাবে দুই শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের ঝারখান্ড প্রদেশের জামশেদপুরে এমজিএম হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয় সদ্য জন্ম নেয়া এক শিশুর। শিশুটির মাকে হাসপাতালে ভর্তি করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই গর্ভবতী মায়ের অপরাধ ছিল তিনি মুসলিম। যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যম দ্যা টেলিগ্রাফে এক রিপোর্টে রোববার এ তথ্যটি প্রকাশিত হয়।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে করোনা মহামারিতে মালাউন প্রশাসন ও হিন্দুত্ববাদী মিডিয়ার মুসলিম বিদ্বেষী অপপ্রচারে সবার মাঝে তৈরি হয়েছে ‘ইসলামআতঙ্ক’। যা ধীরে ধীরে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
রেজওয়ানা খাতুন নামে ৩০ বছরের ওই গর্ভবতী নারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। হাসপাতালে অবস্থানরত সময় তার ব্লিডিং (গর্ভকালীন রক্তপাত) শুরু হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রেজওয়ানাকে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে উল্টো করোনা আক্রান্তের অভিযোগে তাকে দিয়েই তার রক্ত পরিষ্কার করায়।
এদিকে এপ্রিলের শুরুতে রাজস্থান রাজ্যের ভারতপুর জেলায় আরো এক মুসলিম মাকে তার সন্তান হারাতে হয়েছিল। কারণ যথাসময়ে সরকারি হাসপাতাল ওই গর্ভবতী মহিলাকে ভর্তি নেয়নি।
ভারতের ক্ষমতাসীন সন্ত্রাসী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজিপি) গত মার্চে রাজধানী দিল্লিতে তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে করোনা সংক্রমণের মিথ্যা অভিযোগ তোলে। দেশটিতে গত মাসে দিল্লিতে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে মুসলিম তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেয়া ও কিছু সাথী করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাকে মালাউনরা ভারত জুড়ে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াতে থাকে। যার ফলে এই ক্রোধ সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে হওয়া একই ধরনের সমাবেশ নিয়ে কোনো সমালোচনা নেই।
সংবাদ মাধ্যম দ্যা টেলিগ্রাফের রিপোর্ট মতে, দেশটিতে উত্তর প্রদেশের মেরুতের এক হাসপাতালে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে মুসলিমদের কোভিড-১৯ টেস্ট ছাড়া ভর্তি করা হবে না। অপরদিকে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের থেকে এ ধরনের কোনো প্রমাণপত্র চাইছে না।
তেলেঙ্গানা রাজ্যের হাসপাতালগুলোও মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়াও অনেক মুসলমানদের ফার্মাসি ও মুদি দোকানেও প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ভারতে সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৭ হাজার ৬১৫ ও মৃতের সংখ্যা ৫৫৯ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন আক্রান্ত ধরা পড়েছে এক হাজার ২৫০ জন।
সূত্র : দ্যা টেলিগ্রাফ