
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে একটি রাসায়নিক কারখানায় বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস লিক করে দু’শতাধিক লোক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, নিহত হয়েছেন অন্তত আটজন।
এদিন (বৃহস্পতিবার) ভোররাতে গ্যাস লিকের এই ঘটনাটি ঘটেছে বিশাখাপত্তনম শহরে ‘এলজি পলিমারস’ নামে একটি সংস্থার রাসায়নিক কারখানায়। চিকিৎসকরা বলছেন, ওই এলাকার ‘শত শত লোক’ নানা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন – যাদের কারও চোখে অসম্ভব জ্বালা করছে, কেউ কেউ প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার অসংখ্য লোক আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।
বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে আসা মানুষজন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন, অচেতন হয়ে কেউ কেউ রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়ছেন – এমন নানা ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে।
কীভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা?
প্রশাসন ধারণা করছে, এলজি পলিমারসের ওই কারখানায় ঠিকমতো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই রাসায়নিক কারখানাটি গত ২৪ মার্চ ভারতে লকডাউন শুরু হওয়ার সময় থেকেই বন্ধ ছিলো – আর আজ দেড় মাস পর অবশেষে সেটি খুলবে বলে স্থির ছিলো।
অন্ধ্রপ্রদেশের শিল্পমন্ত্রী গৌতম রেড্ডি বলেছেন, “কারখানাটি নতুন করে চালু করার আগে সব পদ্ধতি ও নির্দেশিকা ঠিকমতো পালন করা হয়নি বলেই আমরা সন্দেহ করছি।” এদিন ভোররাতে সাড়ে তিনটে নাগাদ যখন এই দুর্ঘটনা ঘটে, তখন কয়েকজন কর্মচারী ওই কারখানার ভেতরেই ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। বিষাক্ত গ্যাসের ধোঁয়া কারখানাটিকে ঘিরে ৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষ এখন পুরো জায়গাটি থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে আনছেন।
জেলা প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গ্যাস লিক নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিকভাবে নানা চেষ্টা চালানো হলেও তা সফল হয়নি। অবশ্য অনেক পরে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলেই স্থানীয় সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করছে।
লিক হওয়া গ্যাসটি ছিল ‘স্টাইরিন’
এদিকে অন্ধ্রপ্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কর্মকর্তা রাজেন্দ্র রেড্ডি জানিয়েছেন, লিক হওয়া গ্যাসটি ‘স্টাইরিন’ – যা সাধারণত শীতল বা হিমায়িত আকারে থাকে। রাজেন্দ্র রেড্ডি আরও জানান, “লিকের কারণে যাদের শরীরে এই গ্যাস প্রবেশ করেছে, তাদের ওপর দীর্ঘমেয়াদে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে আমরা এখন সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি।” আপাতত, বিশাখাপত্তনমে প্রশাসন মানুষজনকে ভেজা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে। ভারতে রাসায়নিক কারখানা থেকে গ্যাস লিক করার ইতিহাস খুবই মর্মান্তিক।
১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে ভোপাল শহরে ইউনিয়ন কার্বাইডের সার কারখানা থেকে যে ‘মিক’ গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছিল তা থেকে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। সেই ‘ভোপাল গ্যাস ট্র্যাজেডি’কে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিল্প দুর্ঘটনা বলে বর্ণনা করা হয়। ভোপালে সেই গ্যাস লিকের এত বছর বাদেও ওই এলাকায় আজও শিশুরা পঙ্গুত্ব নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে বলে ভিক্টিমরা জানিয়েছেন। সূত্র: বিবিসি।