দক্ষিণ ভারতীয় কর্ণাটকের সরকার সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে টিপু সুলতান ও তার বাবা হায়দার আলি সংক্রান্ত অধ্যায়টি বাদ দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
ওই রাজ্যের বিজেপি শাসিত সরকার এর আগেও পরিকল্পনা করেছিল টিপু সুলতানের বিষয়টি স্কুলের পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দিতে। তাই বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
সরকার বলছে, প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসের সিলেবাসই অন্তত ৩০ শতাংশ কমানো প্রয়োজন। সংক্ষেপিত সিলেবাস স্কুল শিক্ষা দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়ার পরেই জানা যায়, সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যক্রম থেকে বাদ পড়েছে মহীশুরের শাসক টিপু সুলতান এবং তার বাবা হায়দার আলি সংক্রান্ত অধ্যায়টি।
তবে এ শাসককে নিয়ে গবেষণা পিএইচডি করা মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সেবাস্টিয়ান যোসেফ বলেন, করোনা সংক্রমণকে সামনে রেখে আসলে যেসব বিষয় সরকারের পছন্দ নয়, সেগুলোকেই বাদ দেওয়া হয়েছে।
তার কথায়, ‘করোনা সংক্রমণের কারণে স্কুলের পাঠ্যক্রম কিছুটা কমাতে হবে বলা হচ্ছে। এটা তাদের কাছে একটা সুযোগ এনে দিয়েছে – যেসব বিষয়গুলো তাদের অপছন্দের, সেগুলো বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যেমন হায়দার আলি, টিপু সুলতান আছেন।
তিনি বলেন, বাদ দেওয়া প্রতিটি বিষয়ই কর্ণাটক এবং ভারতের ইতিহাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘স্বাধীনতার পর থেকেই স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস পাঠ্যক্রমে একটা সমতা ছিল। কিন্তু যখনই দলীয় চিন্তাভাবনা অনুযায়ী কিছু বিষয় বাদ দেওয়া হতে থাকবে, তখন তো ইতিহাস অধ্যয়নের বড় ক্ষতি করা হবে।’
কর্ণাটকের বিজেপি শাসিত সরকার এর আগেও টিপু সুলতানের বিষয়টি স্কুলের পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল।
টিপু সুলতান ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যেভাবে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাতে বিব্রত হয়ে ব্রিটিশরা টিপু সুলতানকে অত্যাচারী শাসক বলে প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলেন। সেই ধারাই এখন হিন্দুত্ববাদীদের গলায় শোনা যাচ্ছে বলে মনে করেন যোসেফের মতো ইতিহাসবিদরা।
এর আগে যখন ইতিহাস বই থেকে টিপু সুলতানকে বাদ দেয়ার প্রসঙ্গ এসেছিল, সেই সময়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয়, যার প্রধান ছিলেন হাম্পি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক টি. আর. চন্দ্রশেখর।
তিনি বলছিলেন, ‘আমরা সরকারকে স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছিলাম যে টিপু সুলতানের ইতিহাস পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেয়া যাবে না। কিন্তু এবারে করোনার জন্য সিলেবাসে যে কাটছাঁট করা হয়েছে তার আগে সরকার আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে বুধবার শিক্ষা দপ্তর থেকে ফোন করে বলা হয় যে তারা সংক্ষেপিত সিলেবাস আমাদের পাঠাবে। কিন্তু এখন সেটা পাঠিয়ে কী লাভ – সিদ্ধান্ত তো তারা নিয়েই নিয়েছে।’
ব্যাঙ্গালোরের আর্চবিশপ পিটার ম্যাকাডো মনে করেন, যে সব বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে, সেগুলো কমবয়সী ছাত্রদের মনে গেঁথে দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।
করোনার জন্য সিলেবাস কমাতে হবে, সেই যুক্তি ঠিকই আছে। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়গুলো পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া উচিত নয়। স্কুলের ছাত্রদের বয়সেই তাদের সব ধর্মের ইতিহাস জানা উচিত।