বিতাড়িত হওয়ার তিন বছর পূর্তিতে ঘরবন্দী রোহিঙ্গাদের নীরব প্রার্থনা

0
539
বিতাড়িত হওয়ার  তিন বছর পূর্তিতে ঘরবন্দী রোহিঙ্গাদের নীরব প্রার্থনা

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতনে রাখাইন থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার তিন বছর পূর্তি হচ্ছে আজ।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে তারা শরণার্থী ক্যাম্পে বাঁশের ঘরের ভেতরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।  নীরবেই এ দিনটিতে স্মরণ করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে গণহত্যার শিকার গোষ্ঠীটি।

২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। মিয়ানমারে গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ড, নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে।

সেবার সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে এসে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায়। এর আগে মিয়ানমার সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়ে  আসা আরও দুই লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করছিল।

কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গারা ঘরের মধ্যে নীরবে প্রার্থনায় আজকের এ দিনটিকে স্মরণ করবে। আজ কোনো সমাবেশ নেই, মসজিদে দোয়া মাহফিল নেই, স্কুল-মাদ্রাসায় কোনো ভিড় নেই, এনজিও বা সহায়তা কর্মসূচির কোনো খাদ্য বিতরণ নেই।

২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার দ্বিতীয় বছর পূর্তিতে তার নেতৃত্বে কুতুপালং ক্যাম্পে ২ লাখ রোহিঙ্গাদের সমাবেশ ঘটে।

এরপর শরণার্থী ক্যাম্পে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে দেয়া হয়েছে স্বাভাবিক চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা।

এ ছাড়া ক্যাম্পগুলোর চারদিকে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরাও দিয়ে থাকায় পুরো বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রোহিঙ্গারা।

এ তিন বছরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত ও নিরাপদ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি মিয়ানমার। দেশটির সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

ফলে রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে সম্ভাবনা এখনো ক্ষীণ। গত তিন বছরে কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। তাদের কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, শিশুদের জন্য যথাযথ পড়াশোনার ব্যবস্থা নেই। এখনো গণহত্যার দুর্বিষহ স্মৃতি তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়।

কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মহিব উল্লাহ বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদের ১০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। তারা নির্বিচারে হত্যা ও ধর্ষণ চালিয়েছে এবং ঘরবাড়ি থেকে আমাদের মানুষকে বের করে দিয়েছে।

২৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা সংগঠক খিন মং বলেন, আমরা ন্যায়বিচার চাই। আমরা আমাদের ঘরেও ফিরে যেতে চাই। কিন্তু শিগগিরই এমন কিছু ঘটার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। এটি অনেক বছর লেগে যেতে পারে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গারা ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা’ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আইনজীবী ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন করতে আন্তর্জাতিক একটি সমাধান গ্রহণ করা উচিত। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এসব রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের উচিত হবে না পরিবেশটা প্রতিকূল করে তোলা।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়কের বেহাল দশা, মানববন্ধনে সংস্কার দাবি জনগনের
পরবর্তী নিবন্ধঅবরুদ্ধ গাজায় আমদানি-রপ্তানির উপর ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা