ইয়েমেনি দ্বীপে ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠায় আমিরাতি পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে আল-কায়েদা শাখার বিবৃতি

3
1489
ইয়েমেনের দ্বীপে ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠায় আমিরাতের পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে আল-কায়েদা শাখার বিবৃতি

ইয়েমেনের সুকুত্রা দ্বীপে গোয়েন্দা ও সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল।

প্রস্তাবিত গোয়েন্দা ঘাঁটিটি দক্ষিণ ইয়েমেন থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে আরব সাগরের সুকুত্রা দ্বীপে স্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে ইসরায়েল ও আমিরাত প্রয়োজনীয় সব তথ্য সংগ্রহ করছে। সম্প্রতি ইসরায়েল ও আমিরাতের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল দ্বীপটি সফর করেছে এবং পরিকল্পিত গোয়েন্দা ও সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন স্থান যাচাই করেছে।

আমিরাত ও দখলদার ইসরায়েল ইয়েমেনের সুকুত্রা দ্বীপে গোয়েন্দা ও সামরিক ঘাঁটি স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে মিডিয়ার খবরের প্রেক্ষিতে আল-কায়েদা ইয়েমেন শাখা এরাবিয়ান পেনিনসুলা এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে হামদ ও সালাতের পর,মহান আল্লাহ্ তায়া’লার বাণী উল্লেখ করেন।

আল্লাহ্ তায়া’লা বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে নিজের বন্ধু ও রক্ষাকারী হিসাবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু এবং রক্ষাকারী।তোমাদের মধ্যে যে তাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে (বন্ধুত্বের জন্য)সে তাদের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত।নিশ্চয়ই আল্লাহ্ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না’। [আল-মায়েদা ৫ : ৫১]

‘যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা কাফিরদের দিকে (বন্ধুত্বের জন্য ইয়াহূদী, নাসারা মুশরিকদের) ছুটছে। তারা বলে, আমরা আশঙ্কা করছি যে, কোনো বিপদ আমাদেরকে আক্রান্ত করবে। সম্ভবত হতে পারে আল্লাহ্ দান করবেন বিজয় কিংবা তাঁর পক্ষ থেকে এমন কিছু, যার ফলে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তাতে অনুশোচনা করবে।’
[আল-মায়েদা ৫ : ৫২]

ঠিক এভাবেই ‘ইসরায়েলী আমিরাত’ দখলদার ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখছে। আমিরাত শুধুমাত্র ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘৃণ্য অপরাধই নয় বরং, পুরো মুসলিম ভূখণ্ডের বিপক্ষে ইহুদি ও আমেরিকার স্বার্থে কাজ করছে।

মিডিয়া সংস্থাগুলো জানিয়েছে যে, ‘আমিরাত ইয়েমেনি দ্বীপ সুকুত্রায় একটি গোয়েন্দা ও সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে পরিকল্পনা করেছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমিরাতের এ কাজে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। আমেরিকা ও ইসরায়েলের বিশ্বস্ত দালাল আমিরাত ইতিপূর্বে ‘ডিল অব দ্যা সেঞ্চুরি’র মাধ্যমে ইসরায়েলকে ক্ষমতাবান করেছে, মুসলিম ভূমি বিক্রি এবং ইরিত্রিয়ান দ্বীপপুঞ্জকে ইসরায়েলের জন্য মঞ্জুরের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলকে ক্ষমতা দিয়েছে। আগেও নিজ দেশ ইসরায়েলকে ব্যবহার করতে দিয়েছে, এখনও দিচ্ছে।

ইসরায়েল-আমিরাতের সম্পর্ক বহুকাল থেকেই ছিল। সম্প্রতি প্রকাশ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে। এমনকি আমিরাত এই চুক্তি নিয়ে গর্ববোধও করেছে।

আমরা প্রত্যক্ষ করছি, আমিরাত সুকুত্রা দ্বীপ ইহুদিদের ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। আমিরাত ট্রানজিশনাল কাউন্সিল গাদ্দারদের মতো সুকুত্রা দ্বীপ দখল করার পর ব্রিটেনের কুখ্যাত ক্রুসেডার বেলফোর নীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। ব্রিটেন ফিলিস্তিন দখল করার পর ইহুদিদের দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, অথচ তারা এটার অধিকারী ছিল না।

আমিরাতও একই নীতি অবলম্বন করে সুকুত্রা দ্বীপ দখল করে ইহুদীদের দিতে চাচ্ছে। ইহুদীদেরকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বাসঘাতক ইবনে জায়েদ।

সম্প্রতি আমরা জানতে পারছি দালাল আমিরাত-দখলদার ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছে।  আমিরাতের এই ঘৃণ্য পদক্ষেপ এবং এ অঞ্চলে এর মতলব উম্মাহর কাছে স্পষ্ট। ইসরায়েল ও আমেরিকা প্রকাশ্যে বা গোপনে বহু গাদ্দার শাসকদের মাধ্যমে কাজ করছে। তারা শুধুমাত্র আড়ালেই নয়, প্রকাশ্যেই অবিরত মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা উম্মাহর শত্রু অভিশপ্ত ইহুদি এবং ক্রুসেডারদের শক্তিশালী করার জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে। এই ষড়যন্ত্রে আজ যা ঘটছে তার সবই কুফর ও ক্রুশের পতাকাতলে সংঘটিত হচ্ছে।

আমরা এই বিবৃতিতে ঘোষণা করছি যে, ইয়েমেনের জনগণ ইয়েমেনকে স্বার্থান্বেষী ষড়যন্ত্র এবং ইসলামবিরোধী এজেন্ডার বাস্তবায়ন কখনোই মেনে নেবে না। আমরা ইয়েমেনের সুন্নি মুসলিম ভাইদের আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন সংঘবদ্ধভাবে অথবা এককভাবে আমিরাত ও ইহুদি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আর যারাই আমিরাত ও ইহুদি দখলদারদেরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে চান, তাদেরকে যেন তা করতে দেন। আমাদের মনে রাখতে হবে মুসলিমদেরকে এবং মুসলিমদের ভূমিগুলোকে হেফাজত করার কথা, আর মনে রাখতে হবে আল্লাহর ওয়াদার কথা।

আমরা ইহুদিদের স্বাগত জানাচ্ছি যে, ফিলিস্তিনে তোমরা আমাদের বন্দুকের নল থেকে অনেক দূরে থাকলেও তোমরা যদি সুকুত্রা দ্বীপে এসে পৌঁছাও তবে তোমরা এবং তোমার আমিরাতি বন্ধু আমাদের দ্রোহের কবলে পড়বে। আমাদের দুর্বার সাহসী শাহাদাতপিয়াসী মুজাহিদিন থেকে তোমরা নিরাপদ থাকতে পারবে না ইনশাআল্লাহ্।

আমরা আল্লাহ্ তায়া’লার কাছে প্রার্থনা করছি, তিঁনি যেন আমাদেরকে তোমাদের বিরুদ্ধে সক্ষম করেন এবং তোমাদের প্রতিটি পাওনা যেন পরিপূর্ণভাবে বুঝিয়ে দিতে পারি সেই ক্ষমতা দান করেন।

আল্লাহ তাঁর কাজকর্মের উপর সর্বশক্তিমান এবং নিয়ন্ত্রণ রাখেন, কিন্তু আমার অধিকাংশই জানিনা। আমাদের সর্বশেষ প্রার্থনা আল্লাহ তায়ালার কাছেই যিনি সমস্ত বিশ্বের পালনকর্তা।

উল্লেখ্য যে, ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আগ্রাসন শুরুর তিন বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল সংযুক্ত আরব আমিরাত ইয়েমেনের সুকুত্রা দ্বীপ দখল করে নেয়।
এরপর গত ১৩ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পর প্রথমবারের মতো গত ৩১ আগস্ট সৌদি আরবের আকাশ পথ ব্যবহার করে বিমান চলাচল ও টেলিফোন যোগাযোগ শুরু করেছে আমিরাত ও ইসরায়েল।
প্রসঙ্গত, ইয়েমেন আল কায়েদা শাখা প্রায় ৫ বছর ধরে হুতি সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন। এই জোটবাহিনী যে মুসলিমদের শত্রু এবং ইসরায়েলের দালাল তা এখন মুসলিমদের কাছে সুস্পষ্ট।

3 মন্তব্যসমূহ

  1. প্রিয় দ্বীনি ভাই,আশা করি এ অধমের একটা প্রশ্ন আপনার দৃষ্টি এড়াবেনা ইন শা’ আল্লাহ।
    প্রশ্নটি হলো বেশ কিছু দিন ধরেই অনলাইনে “আগামী কথন” নামের এক ভবিষ্যৎবাণী পাওয়া যাচ্ছে…এটি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য বা এ ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টিভংগি কি,জানতে চাই প্লিজ 

Leave a Reply to Alfirdaws News প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলে মৃত্যু ১০ জনের
পরবর্তী নিবন্ধমাওলানা জালালুদ্দিন হাক্কানিকে নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছে তালিবান