নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) এলাকার জীবনযাত্রা ভয়াবহ হয়ে পড়েছে। আজাদ কাশ্মীরে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়ে গেছে। ২০১৭ সাল থেকে এই মাত্রা আরও বেড়েছে। ২০১৩ সালে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন বেড়ে যাওয়ায় পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি তৈরি হয়েছিল। ভারত সে সময় ২০০০ বারের বেশি অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করেছিল, যেখানে ২০১৭ সালে তারা ১২৯৯ বা এবং ২০১৬ সালে ৩৮২ বার লঙ্ঘন করে। ২০১৮ সালে হতাহতের হার ২০১৭ সালের চেয়ে বেশি ছিল এবং ২০২০ সালে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে যায়।
অশুভ উদ্দেশ্য
নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করার পেছনে ভারতের অশুভ উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা নিয়ন্ত্রণ রেখায় অধিবাসীদের অবকাঠামো ও সম্পদ পুড়িয়ে দিয়েছে এবং অধিবাসীরা গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তারা সার্বক্ষণিক আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে। ভারত সবসময় নিরপরাধ মানুষকে টার্গেট করে হামলা করেছে। তারা শক্তি প্রয়োগ করে কাশ্মীরের মুক্তি আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। দখলকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনী মুজাহিদিনদের কাছে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে এবং এর প্রতিশোধ নিতে তারা নিয়ন্ত্রণ রেখায় বেসামরিক মানুষদের টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে।
বৃহত্তর ভারত গড়ার হিন্দু আদর্শ
এলওসিতে সীমা লঙ্ঘন জারি রেখে ভারত দখলকৃত কাশ্মীরের দুর্বিসহ অবস্থা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আড়াল করতে চায়। কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় বর্বরতা ও অপকর্মের মূল শক্তি হলো হিন্দু আদর্শ। নির্যাতন ও সঙ্ঘাতের হিন্দু আদর্শ ভারতকে তাদের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আলাদা করে ফেলেছে। মোদির হিন্দু মানসিকতা ও ভারতীয় ক্ষমতাকাঠামো ভারতকে তাদের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অনেক দূরে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে। হিন্দু দানবরা সহজেই অন্যান্য ছোট অ-নিউক্লিয় এশিয়ান দেশগুলোকে গিলে খেতে পারে। সোভিয়েত রাশিয়ার পরে মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় এশিয়ায় আধিপত্যের স্বপ্ন দেখছে ভারত।
পাক-চীনের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ভারতকে শক্তি যোগাচ্ছে যাতে তারা পাক-চীন সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং সিপিইসিকে অবজ্ঞা করতে পারে। মার্কিন-ভারত জোট চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারতীয় সেনাদেরকে সামনে ঠেলে দিয়েছে যাতে তারা অশুভ লক্ষ্য অর্জনের জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শীতল যুদ্ধ পরিস্থিতি বজায় রাখতে পারে। ভারত একই সাথে অস্থিরতা ছড়িয়ে এবং ত্রাস সৃষ্টি করে যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তানে ব্যস্ত রাখতে চাচ্ছে যাতে তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। কারণ ভারত ভালো করেই জানে যে, যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া থেকে সরে গেলে ভারতের প্রকল্প পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যাবে।
নিজেদের হাতে গড়া কুফরী সংবিধানকেও লঙ্ঘন করছে ভারত
ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে কাশ্মীর ইস্যুতে তাদের অবস্থানের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে তারা নিজেদের সংবিধানের উপর হামলা করে ২৭০ ও ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিলের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। সে জন্য এলওসি এলাকায় তারা সহিংসতার তীব্রতা বাড়িয়েছে যাতে পাকিস্তানের সাথে কোন ধরনের আলোচনায় বসা সম্ভব না হয়। একদিকে সংবিধানের ৩৫এ ও ২৭০ বাতিলের কোন যৌক্তিকতা ভারতের সামনে নেই।
এলওসিতে সীমালঙ্ঘন বিশ্বকে ঝুঁকিতে ফেলছে
এলওসি লঙ্ঘন করে ভারত শুধু নিরপরাধ বেসামরিক মানুষদেরকে হত্যাই করছে না, একই সাথে একটা পারমাণবিক সঙ্ঘাতের দিকে পরিস্থিতিকে ঠেলে দিচ্ছে, যেটা আঞ্চলিক বিপর্যয়ের সাথে সাথে বিশ্ব শান্তিকেও বিনষ্ট করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা ও যুদ্ধের মেঘ বিরাজ করলে বিশ্ব কখনই নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ হবে না। এ অঞ্চলে মার্কিন-ভারত সম্পর্ক তাদের ভারসাম্য হারাচ্ছে এবং মার্কিন-ভারতের স্বার্থের জন্য সেটা হবে মহা-বিপর্যয়কর। যে কোন যুদ্ধ লাগলে সঙ্ঘাতে জড়ানো দুই দেশের বাইরের অন্য দেশগুলোও কম দুর্ভোগ পোহাবে না। নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করে ভারত একইসাথে বিদেশী বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। যুদ্ধ লাগলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের বহু ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থে হুমকিতে পড়লে তারাই সবার আগে বোঝাপড়ার জন্য এগিয়ে আসবে। কিন্তু কাশ্মীরের পারমাণবিক ফ্লাশপয়েন্টের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে সত্যিকারের আন্তরিকতা নিয়ে তারা কেউই এগিয়ে আসছে না।
এলওসিতে জীবনযাত্রা
এলওসিতে ভারতীয়দের সীমালঙ্ঘনের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা আগুনের মধ্যে পড়ে গেছে। ভারতীয় বোমাবর্ষণে তাদের শীতকালিন জ্বালানি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অর্থাৎ অধিবাসীরা সেখানে ঠান্ডায় জমে মারা পড়বে। শুকনা যে ঘাস জমিয়ে রাখা হয়েছিল, ভারতীয় রকেটে সেগুলো পুড়ে গেছে। এর অর্থ হলো গবাদি পশু না খেয়ে মারা যাবে। নিলাম উপত্যকায় ঘর এবং জ্বালানি ছাড়া জীবনধারণ সম্ভব নয়। উপত্যকায় প্রচুর তুষারপাতের কারণে সেখানে তাবু টানিয়ে বা ক্যাম্প করে থাকার কোন সুযোগ নেই। স্থানীয়দের জীবিকার প্রধান উৎস গবাদিপশু ভারতীয় শেল আর বোমায় মারা পড়ছে।
বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা
স্থানীয় অধিবাসীরা উভয় সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। একদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী শেল নিক্ষেপ করছে। অন্যদিকে, ভারতীয় কামানের সামনে তারা উন্মুক্ত, অসহায়, যেখানে সেনাদের রয়েছে আশ্রয় আর শেলপ্রুফ বাঙ্কার। ভারতীয় অংশে জনগণকে এলওসি থেকে পাঁচ মাইল দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পাকিস্তানী অংশে বেসামরিক মানুষ ভারতীয় কামানের আওতায় রয়েছে। এলওসি এলাকার বাসিন্দারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর চাপিয়ে দেয়া শীতল যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের তাদের পরিবারের জন্য শেলপ্রুফ বাঙ্কার তৈরির মতো সামর্থ নেই।