প্রণোদনার মেয়াদোত্তীর্ণ বীজে কৃষকের সর্বনাশ, চারাই গজায়নি

0
482
প্রণোদনার মেয়াদোত্তীর্ণ বীজে কৃষকের সর্বনাশ, চারাই গজায়নি

প্রণোদনার মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের বীজে সর্বনাশ হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের চাষীদের। কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বিতরণ করা বিভিন্ন ফসলের বীজে কোথাও ফসল হয়নি। তাছাড়া কিছু বীজ মৌসুম শেষ হওয়ার পর বিতরণ করায় চাষীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ জন্য চাষীরা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন। তারা বলছেন, এসব বীজ মেয়াদোত্তীর্ণ ও খুবই নিম্নমানের। সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয় করে এসব নিম্নমানের বীজ কিনে বিতরণ করা হচ্ছে। এতে সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে।

কৃষি প্রণোদনার অংশ হিসেবে রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের চার জেলায় প্রান্তিক চাষীদের মাঝে পেঁয়াজ, ভুট্টা, টমেটো, সরিষা, গম, খেসারি, সূর্যমুখী ও বাদাম বীজ বিতরণ করা হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। তালিকাভুক্ত চাষীদের প্রত্যেককে ২০ কেজি গম, ২৫০ গ্রাম পেঁয়াজ, আট কেজি খেসারি, ১০ কেজি ভুট্টা, দুই কেজি সরিষাসহ বিভিন্ন পরিমাণে বীজ দেয়া হয়। কিন্তু কোনো বীজেই চারা গজায়নি। আবার কালাই মুগ যখন জমিতে পাকতে যাচ্ছে তখন এসব ফসলের বীজ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের।

রাজশাহীর তানোর ও দুর্গাপুর উপজেলার কৃষকদের অভিযোগ, পেঁয়াজের যেসব বীজ দেয়া হয়েছে তাতে একটিতেও চারা হয়নি। ফলে কষ্ট করে জমি তৈরির পর পেঁয়াজ চারা না গজানোয় চাষীরা পেঁয়াজ আবাদ করতে পারেননি। তানোরের কামারগাঁও এলাকার কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে যেসব বীজ চাষীদের দেয়া হয়েছে, তা মেয়াদোত্তীর্ণ ও খুবই নিম্নমানের। এ কারণে এসব বীজে চারা হয়নি। কোনো কোনো কৃষক জমিতে এসব দিয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বোগলাউড়ি গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, যেসব ভুট্টা বীজ দেয়া হয়েছে সেগুলোর একটিতেও চারা ফোটেনি। কোনো কোনো চাষী ভুট্টা ভেজে খই করে খেয়েছেন। সরিষা বীজ এমন সময়ে বিতরণ করা হয়েছে যখন আবাদের মৌসুম পার হয়ে গেছে। আর বিতরণকৃত খেসারির বীজের ডাল করেও খেতে পারেননি অনেক কৃষক। কারণ, সেগুলো খুব শুকনো ও পচা ছিল। অন্যদিকে চীনাবাদামের বীজ বিতরণ করা হলেও রাজশাহী অঞ্চলের অনেক এলাকায় বাদাম চাষের উপযোগী জমি পাননি কৃষকরা। সূর্যমুখী বীজের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। মসুর বা মুগকালাই বপনের সময় দু’মাস আগেই পার হয়েছে; তবুও এখন কৃষি বিভাগ এসব ফসলের বীজ দিচ্ছে কৃষকদের। এসব অপচয় ছাড়া আর কিছু নয় বলে কৃষকরা মনে করছেন। বরং বীজ না দিয়ে টাকা দিলে কৃষকদের কিছুটা উপকার হতো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবাদ মৌসুম শেষ হলেও এখনও রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পেঁয়াজ বীজসহ অন্যান্য বীজ বিতরণের কাজ চলছে। মৌসুম শেষে এখন এসব বীজ দিয়ে কৃষকরা কী করবেন-সেটাও বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। নওগাঁর সাপাহার এলাকার কৃষক আনারুল ইসলাম বলেন, পুরো সাপাহারসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মাটি লাল ও শক্ত। সেখানে পেঁয়াজের কোনো আবাদযোগ্য জমি নেই। সূর্যমুখী বা চীনাবাদাম আবাদের মাটিও নেই। কিন্তু কৃষি বিভাগ এসব এলাকায়ও প্রণোদনার এসব ফসলের বীজ বিতরণ করছে, যা কোনো কাজেই আসছে না কৃষকের।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার মিউজিক কলেজের লাইসেন্স দিল সৌদি সরকার
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনে “নবী মুসা” মসজিদে মদ ও গানের আসর