বগুড়ার গাবতলী পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে ভোট না দিলে কেন্দ্রে আসার দরকার নেই বলে ‘হুমকি’ দিয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর রহমান। এ জন্য তিনি নেতা–কর্মীদের ভাগ হয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের ‘নির্দেশ’ বলেছেন, ধানের শীষ নিয়ে যে কথা বলবে তাঁর ওপর গজব হবে।
সাজেদুর রহমান জেলার শাজাহানপুর উপজেলার খড়না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও। তিনি ভিপি সাহিন নামেও পরিচিত। গত শনিবার সন্ধ্যায় গাবতলী পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে দাঁড়ইল বাজারে অনুষ্ঠিত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মোমিনুল হকের নির্বাচনী কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন নির্দেশ দেন। ঘরোয়া ওই সভায় উপস্থিত কর্মীরা সাজেদুর রহমানের বক্তব্যের ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনার পর গাবতলী পৌরসভায় বিএনপির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ভোটারদের হুমকি দেওয়ার ভিডিওর সিডিসহ আজ মঙ্গলবার রিটানিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রওনক জাহান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেয়র প্রার্থী মোমিনুল হকের নির্বাচনী সভায় তাঁর পক্ষে একজন নেতার ভোটারদের হুমকি দিয়ে বক্তব্যের সিডিসহ লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা ভঙ্গের দায়ে নৌকার প্রার্থীসহ বক্তব্যদাতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে।
২ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আপনারা প্রত্যেকটা ইউনিটের নেতা-কর্মীদের আনে সেন্টার ভাগ করে দিবেন। সেখানে একজনকে কমান্ডার ব্যানা (বানিয়ে) দিবেন। সেই কমান্ডারের নেতৃত্ব চলবে, সেখানে শিলুক (নৌকার প্রার্থীর ডাক নাম শিলু) ভোট দিলে সেই লোক আসবে, শিলুক ভোট না দিলে তাঁর আসার দরকার নাই।’ এ সময় নেতা-কর্মীরা ‘ঠিক ঠিক’ বলে সমস্বরে চিৎকার করেন। এরপর সাজেদুর রহমান বলেন, ‘ঘরের লোক ঘরতই থাক।’
এরপর সাজেদুর রহমান বলেন, ‘কথাটা যেহেতু ঘরের ভিতর, সবাই আমার কর্মী, কর্মীদের এই কথাটা ম্যাসেজ দিলাম। এটা করবেন আপনারা?’ এ সময় নেতা-কর্মীরা সমম্বরে ‘হ্যা’ ও ‘অবশ্যই’ বলে উত্তর দিলে সাজেদুর প্রশ্ন করেন, ‘এখন কী মার খাওয়ার সময় আছে?’ নেতা-কর্মীরা ‘না’ বলে জবাব দিলে তিনি বলেন, ‘মার দেওয়ার সময় আছে। আমরা মারব ধানের শীষের মার্কা লিয়্যা যে কথা বলবে, তাঁর ওপর গজব হবে। কথাটা বুঝাতে পারছি?’
নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে এই নেতা আরও বলেন, যেভাবে গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করেছেন, সেভাবেই পৌরসভার মেয়রও করা হবে। তাঁরা মেয়রে দাঁড়িয়েছেন, মেয়র নেবেন। কথা একটাই। তারেক জিয়া এখানে দাঁড়াল, না খালেদা জিয়া দাঁড়াল, সেটা দেখার বিষয় না। নেতা–কর্মীরা যদি তাঁর নির্দেশমতো কাজ করতে পারেন তাহলে মেয়র হবে। না হলে এই গাবতলীতে কোনো প্রতিনিধি (আ. লীগ থেকে) হওয়ার সুযোগ নেই। প্রথম আলো