যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে শ্বেতাঙ্গ সদস্যদের অনুপ্রবেশ নিয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাঁদের অনুপ্রবেশ রোধে উদ্যোগ নিয়েছে আইনপ্রণেতারা।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডবে যোগ দেওয়া প্রতি পাঁচজনের একজনকে এমন সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সেনাবাহিনীর সদস্য বা সাবেক সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ছাড়পত্র থাকে। এই ছাড়পত্রের সুযোগে অনেকেই নিরাপত্তা স্তর অতিক্রম করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
ন্যাশনাল ডিফেন্স অথোরাইজেশন অ্যাক্ট (এনডিএএ) নামক মার্কিন নিরাপত্তা আইনে এ নিয়ে সংশোধনী আনার জন্য কংগ্রেস দ্রুত উদ্যোগ নিয়েছে। পেন্টাগন ও ফেডারেল সংস্থায় তাদের প্রবেশ রোধ করার জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
দ্য হিল নামের মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে কংগ্রেসম্যান অ্যান্টনি ব্রাউনের বক্তব্য রয়েছে। নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক পার্টির এই আইনপ্রণেতা বলেছে, ‘ক্যাপিটল হিলে হামলা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এই হামলায় যোগ দেওয়া উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোকজন মার্কিন বিভিন্ন বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্য বলে পরিচয় পাওয়া গেছে।’
শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থীরা নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজনকে দলে ভেড়ানোর কৌশল নিয়েছে বলে মনে করেন কংগ্রেসম্যান ব্রাউন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীকে চরমপন্থার প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যাতে নিজেদের নিরাপদ মনে করে, সে জন্য আমাদের এই সমস্যার গভীরে যেতে হবে।’
৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৭ জনই মার্কিন সেনা বিভাগ বা এমন কোনো বিভাগের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। সেনা, মেরিন, বিমানবাহিনীসহ সরকারের এমন বিভাগে শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে এখন উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এফবিআই এ নিয়ে তদন্ত জোরদার করেছে। আমেরিকান শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদী ও চরমপন্থীদের নির্মূল করার জন্য এখন উপায় খুঁজছে মার্কিন নিরাপত্তা বিভাগ।
মার্কিন নিরাপত্তা বিভাগের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দ্য হিল জানায়, গত বছর মার্কিন বাহিনীগুলোয় এমন ২৪৩টি তদন্তের সূত্র ধরে উদ্বেগজনক তথ্য পেয়েছে এফবিআই।
২০১৯ সালে পরিচালিত এক জরিপে এক-তৃতীয়াংশ কর্মরত সেনাসদস্য জানায়, কর্মরত অবস্থায় তাঁরা সাম্প্রতিক সময়ে কোনো না কোনোভাবে শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীলতার উপস্থিতি টের পেয়েছে।
পেন্টাগনের এক কর্মকর্তা সম্প্রতি সাংবাদিকদের কাছে এ নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। চরমপন্থীরা তাঁদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের সদস্যদের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বিভাগে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান করছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
পাশাপাশি কর্মরত বা চাকরি থেকে চলে যাওয়া সেনাসদস্যদের চরমপন্থীরা নিজেদের দলে যুক্ত করার প্রয়াস নিচ্ছেন বলে এই কর্মকর্তা জানিয়েছে।
এ সমস্যাকে সামনে রেখে পেন্টাগন এখন অভ্যন্তরীণ চরমপন্থা নিয়ে কাজ করছে।
প্রতিনিধি পরিষদের আর্মস সার্ভিস কমিটির প্রভাবশালী সদস্য অ্যান্থনি ব্রাউন বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থা, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের মনোভাবসহ অভ্যন্তরীণ চরমপন্থীদের দমাতে হবে। সব দলের সমঝোতার মাধ্যমে সেনা একাডেমিতে পরের প্রজন্মের আমেরিকার জন্য প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।’
এ নিয়ে নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে কংগ্রেসম্যান ব্রাউন জানিয়েছে।
সিনেটর মাইকেল ব্যানেট মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে বিদ্বেষমূলক মনোভাব নির্মূল করার জন্য প্রশাসন ও সিনেটে তাঁর সহযোগীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে।
ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য স্টেফানি মারফি ইতিমধ্যে কংগ্রেসে একটি আইন প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। এই আইন প্রস্তাব গৃহীত হলে ক্যাপিটল তাণ্ডবে যোগ দেওয়া লোকজনসহ চরমপন্থী দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়পত্র পাওয়ার অনুপযুক্ত বিবেচিত হবে।