ভারতে ত্রাণে অনিয়ম নিয়ে আল জাজিরাতে একটি প্রতিবেদন লেখার পরে দেশটির বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী ও ব্যক্তির কাছ থেকে হুঁশিয়ারি ও প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত পাচ্ছেন রাকিব হামিদ নাইক নামে একজন মুসলিম সাংবাদিক।
তবে রবিবার (১৩ জুন) রাতে ওই মুসলিম সাংবাদিকের সমর্থনে আল জাজিরা একটি বিবৃতি জারি করে এবং বলিষ্ঠভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে।
বিবৃতিতে আল জাজিরা জানায়, তারা রাকিব হামিদ নাইকের সর্বোচ্চ মানের ত্রুটিহীন সাংবাদিকতার পাশে আছে এবং তাঁর পেশাদারি অবদানকে সর্বতোভাবে সমর্থন করছে।
এর আগে গত এপ্রিল মাসে আল জাজিরাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রাকিব হামিদ নাইক লিখেছিলেন, মার্কিন ফেডারেল সরকারের কোভিড ত্রাণ সে দেশের এমন কতগুলি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন পেয়েছে যারা ভারতের আরএসএসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনসহ আরও চারটি আমেরিকাভিত্তিক সংস্থা এভাবে প্রায় ৮ লক্ষ ৩৩ হাজার মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সোয়া ছয় কোটি রুপি) পেয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল। এরপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে ওই সাংবাদিক বিভিন্ন ধরনের হুমকি পেতে শুরু করেন।
রাকিব হামিদ নাইক বর্তমানে আমেরিকাতে আছেন। তিনি সে দেশের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছেও রিপোর্ট করেছেন যে তাকে নিয়মিতভাবে হত্যা করারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তিনি টুইটারে বেশ কয়েকটি আক্রমণাত্মক টুইটের স্ক্রিনশট পোস্ট করেছেন। যেখানে তাকে জিহাদি, সন্ত্রাসবাদী বা হিন্দুবিদ্বেষী বলে গালিগালাজ করা হয়েছে।
যেমন, শ্রীরামের কাঠবিড়ালি অ্যাকাউন্ট থেকে একজন লিখেছেন, রাকিব নাইক ও তার পরিবারের সকলের ভিসা স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হোক। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র কার্যালয়কে ট্যাগ করে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, ভারতে রাকিব নাইকের পরিবারে কজন সন্ত্রাসবাদী আছে খুঁজে বের করে সবার চিকিৎসা করা হোক!
ম্যায় ভি সুশান্ত নামের আড়ালে আরও একজন লিখেছেন, এই রাকিব একজন ভারতীয় মুসলিম, যে হিন্দু করদাতাদের পয়সায়-চলা মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেছে – এখন তার লক্ষ্য হল ভারতে ইন্তিফাদা ২.০ আর খিলাফতের জমি প্রস্তুত করা!
হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী অধিকর্তা সুহাগ এ শুক্লাও তার ভেরিফায়েড সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থেকে রাকিব নাইকের প্রতিবেদনটিকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন।
আল জাজিরার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রুগ্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে মহামারিতে কর্মীদের চাকরিতে বহাল রাখতে পারে সেই জন্য নির্দিষ্ট মার্কিন ত্রাণ পাঁচটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের হাতে পৌঁছেছে। হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন ছাড়াও ওখানে উল্লিখিত বাকি চারটি সংগঠন ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আমেরিকা, এ সকল বিদ্যালয় ফাউন্ডেশন অব ইউএসএ, ইনফিনিটি ফাউন্ডেশন ও সেবা ইন্টারন্যাশনাল।
ওই প্রতিবেদনে হিন্দুজ ফর হিউম্যান রাইটস নামে আর একটি মার্কিন গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সুনীতা বিশ্বনাথনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল, এই পাঁচটি সংস্থার হাতে আমেরিকার সরকারি সহায়তা যাওয়ার অর্থ হল ভারতে মুসলিমসহ অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা। ওই পাঁচটি সংগঠনই যে হিন্দু আধিপত্যবাদী আরএসএসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে কাজ করে, সেটি উল্লেখ করা হয়েছিল।
গত ৭ই মে তারিখে কলম্বিয়াতে মার্কিন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের তরফে একটি মানহানির মামলা করা হয়, যাতে সুনীতা বিশ্বনাথনকেও অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রাকিব হামিদ নাইকও মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে তার অভিযোগে বলেছেন, নিছক পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের দ্বারা অনলাইন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।