
দীর্ঘ ২০ বছর পর মার্কিন বাহিনীকে পরাজিত করে পুরো আফগানিস্তানের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান মুজাহিদরা। গত রোববার (১৫ আগস্ট) রাজধানী কাবুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। এদিকে কাবুলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার বিষয়টি তারা বারবার নিশ্চিত করেছে। নিশ্চিত করেছে ইসলামী শরীয়ার আলোকে সংবাদমাধ্যম ও নারী অধিকারে বিষয়টিও।
কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া তালিবানের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তালেবানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া। সাথে কম যাচ্ছেনা ভারতীয়দের একনিষ্ঠ দালাল বাংলাদেশের মিডিয়া। ভারতীয় মিডিয়া যেখানে রাতকে করছে দিন আর দিনকে করছে রাত সেখানে বাংলাদেশি মিডিয়া একধাপ এগিয়ে আকাশকে করছে জমিন আর জমিনকে করছে আকাশ। বিবিসি, ডয়েচভেলের মতো আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোও পিছিয়ে নেয় তালেবানদের বিরুদ্ধে প্রোপাগ্যান্ডা চালানোর ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল ২৪’ এর এক খবরে দেখা যায় একজন বিদেশি সাংবাদিক এক আফগানির সাথে কথা বলছেন। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তর দিচ্ছেন। তালেবান সম্পর্কে আফগানি ব্যাক্তির প্রথম কথাটা ছিল ‘দ্যা পিপল ইজ গুড উইথ দেম’ আর শেষ কথাটি ছিল ‘লাইফ ইজ নরমাল’। চ্যানেল ২৪ এর সাংবাদিক এ ব্যাক্তির কথা অনুবাদ করেছে এভাবে ‘The people is good with them’ আগামীতে কি হয় তা নিয়ে সবাই চিন্তিত। ‘Life is normal’ এখানে কি হয় তা নিয়ে সবাই ভয়ে দিন পার করছে। এই হচ্ছে আমাদের দেশের ভারতীয় দালাল মিডিয়ার প্রোপাগান্ডার নমুনা।
এসব হলুদ মিডিয়া আফগানের নারীরা মানবাধিকার, বা শিক্ষার অধিকার পাবে না কিনা সে ব্যাপারে উৎকণ্ঠামূলক একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
অথচ মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলায় হাজার-হাজার আফগান নারী-শিশু নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। মাদ্রাসায় হামলা করে শত-শত ছোট মাসুম বাচ্চাদের হত্যা করা হয়েছে। অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে বছরের পর বছর বন্দী করে রেখেছে। তখন মিডিয়া মানবতাবিরোধী এসব কাজের বিরুদ্ধে খুব বেশী সরব ছিলনা। দেশটিতে মার্কিন ন্যাটো জোটের হামলার বিরুদ্ধেও কাউকে তেমন কথা বলতে শোনা যায়নি। আমেরিকার পুতুল আশরাফ গনি সরকারের আমলে আফগান নারী কর্মকর্তা ,কর্মচারীদের উপর যৌন নিপীড়নের ব্যাপারেও মিডিয়া তেমন সরব ছিল না।
অথচ তালেবান মুজাহিদিনরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকেই নারী শিক্ষা ও নারী অধিকারে বিষয়ে স্পষ্ট বিবৃতি দিয়েছেন। রাজধানী কাবুল বিজয়ের পরেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিদেশি কূটনীতিক ও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সরকারি কাজে নিয়োজিত সব চাকরিজীবী কোনো ধরনের শঙ্কা ছাড়াই নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমনকি হিজাব রক্ষা করে নারী চাকরিজীবীদেরও কর্মস্থলে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত সোমবার (১৬ আগস্ট) কাতারের দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের উপপ্রধান আব্দুস সালাম হানাফি বলেছেন, সাবেক আফগান সরকারের হয়ে কাজ করতেন বলে কাউকে হেনস্তা করা যাবে না। কারও প্রতি অবিচার করা হবে না এবং নারীরা তাদের হিজাব রক্ষা করে কর্মস্থলসহ সব কাজ স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন।
গত মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন হাজির হয়ে পুনরায় এ ঘোষণা দিয়েছেন তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ। গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রাজধানী কাবুলে এই সংবাদ সম্মেলন শুরু করেছেন জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ।
তিনি বলেন, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করতে চাই যে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
তিনি জানান, আমরা শরিয়া ব্যবস্থার অধীনে নারীর অধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতীবদ্ধ। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চয়তা দিতে চাই যে, এখানে কোনো ধরনের বৈষম্য হবে না।
দেশটিতে ইতিমধ্যে এটা প্রমানিতও হয়েছে। গত (১৭ আগস্ট) আফগান টিভি স্টেশন শামশাদ নেটওয়ার্কে আফগান মেয়েদের স্কুলে পাঠরত ও স্কুলে যাওয়ার ছবি প্রকাশ করেছে।
এর আগে কয়েকজন আফগান বালিকার ‘স্কুলে যাওয়ার’ ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে।
ছবিতে দেখা যায়, সাত বালিকা স্কুলের ইউনিফর্ম ও স্কার্ফ পরে নির্জন সড়ক ধরে হেঁটে যাচ্ছে। ছবিটি সোমবার (১৬ আগস্ট) টুইটারে পোস্ট করা হয়। পরে তা ফেইসবুকেও ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, মুজাহিদরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণের পর নারীদের একটি ছোট দল তাদের অধিকারের জন্য প্লেকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করে যেন তালেবান তাদের স্কুলে যাওয়ার অধিকার রক্ষা করেন। এসব নারীদের উপর তালেবান হামলা করবে কিনা এ ব্যাপারেও উৎকণ্ঠা জানায় নিউ ইয়র্ক টাইমস। অথচ এ সময় বিক্ষোভরত নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছিলেন মুজাহিদরা।
এছাড়াও কাবুলের মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা গত ১৭ আগস্ট তালিবান কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন। তালেবানের পক্ষে আব্দুল হামিদ হামাসি সকল নারী শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছেন যে তারা স্বাধীনভাবে তাদের পেশায় দায়িত্ব পালন করতে পারবে এবং তালেবানরা নিরাপদ কর্মপরিবেশের জন্য নিরাপত্তা দেবে।
বার্তা সংস্থা ‘ডকুমেন্টস অপরেশন এগেইন্সট মুসলিম ‘ এ প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় দেখা যায়, আফগান নারী অধিকার কর্মী ‘জার্গুনা বালুচ’ সকল আফগান নারী ও মেয়েদের তাদের শিক্ষা, কাজ এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তালেবান তাদের জন্য কোন হুমকি নয়। এ সময় তিনি সকল আফগান মেয়েদের স্কুলে যেতে আহ্বান জানান। তালেবানদের সাথে মেয়েদের জোরপূর্বক বিয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা গুজব ও মিথ্যাচার। আফগানিস্তানে এমন কিছুই ঘটছে না।