খারাপ ব্যবহার নয়, তালেবান নিরাপত্তা দিয়েছে; ভারতীয় নাগরিক তমাল ভট্টাচার্য

1
1585
খারাপ ব্যবহার নয়, তালেবান নিরাপত্তা দিয়েছে; ভারতীয় নাগরিক তমাল ভট্টাচার্য

আফগানিস্তানের কাবুল থেকে দেশে ফিরে তালেবান সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য জানান ভারতীয় নাগরিক। দেশটির একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষকতা করতে গিয়ে সেদেশে আটকে পড়েন বলে জানিয়েছেন তমাল নামে ফেরত আসা একজন।

বিমান সেনাদের বিমানে দিল্লি হয়ে কলকাতায় ফিরেছে আফগানিস্তানে আটকে থাকা মোট ২ বাঙালি। তারা হল- স্থানীয় নিমতার বাসিন্দা তমাল ভট্টাচার্য এবং লেক ভিউয়ের বাসিন্দা স্মরজিৎ মুখোপাধ্যায়।

আফগানিস্তানে একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষকতা করতে গিয়ে সেদেশে আটকে পড়ে বলে জানিয়েছে তমাল ভট্টাচার্য। তবে, কী কারণে আফগানিস্তানে ছিল, সে ব্যাপারে মুখ খোলেনি লেক ভিউয়ের বাসিন্দা সরজিৎ মুখোপাধ্যায়।

এদিকে, কলকাতায় ফিরে তমাল জানায়, তালিবান তাঁদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছে। ভাল খেতে দিয়েছে। এমনকী, ক্রিকেটও খেলেছে।

তমাল বলেছে, কাবুলে কোনো যুদ্ধ হয় নি। তালেবান একটি গুলিও ছুঁড়েনি। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমেরিকানরা সেদিন এয়ারপোর্ট নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল তাদের নিজেদের ও সহযোগীদের নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমেরিকানরাই সেদিন গুলিটুলি কিছু করেছে। তালেবানরা কাউকে ডিস্টার্ব করেনি, কাউকে টাচও করেনি।

তালেবান নাগরিকদের নিরাপত্তা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তালেবানরা আমাদেরকে বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না, কোনো চিন্তা করবেন না, আপনারা সবাই নিরাপদ। আমরা আপনাদের খেদমতে আছি। তবে তৃতীয় পক্ষ যেন কোনো অঘটন ঘটিয়ে তালেবানের বদনাম না করতে পারে সেজন্য তারা সজাগ।

তিনি বলেন, তালেবানরা আমাদের ভরসা জুগিয়েছে। রাত্রিবেলা পাহারা দিয়েছে। বিশেষ করে খেয়াল রেখেছে আমাদের সাথে যেসব নারীরা ছিলেন, তাদের যেন কোনোরুপ সমস্যা না হয়। তারা সব রকমের সহযোগিতা করেছেন। আমাদের কোনো রকম সমস্যা হয়নি। বিশেষ করে ভারতীয়দের যে শঙ্কা ছিল, সেরকম কিছু হয়নি। তারা স্বাভাবিক ব্যবহার করেছেন।

নিজেদের চোখে দেখা কাবুলের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তমাল বলেন, আত্মীয়-স্বজনরা টেনশনে ছিলেন। মিডিয়াতে শুনছেন কাবুলে বোম ফুটছে, কিন্তু আমরা যারা ওখানে ছিলাম তারা জানি কাবুলের বাস্তব অবস্থা কী।

‘‘তালেবান আসার পরে কাবুলের দোকানপাট ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পুরো স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। বরং আমরা সেখানে কাবাব খেতাম ১৫০ টাকা দিয়ে নান কাবাব। তা মাংসের পরিমাণ ডাবল হয়ে গেছে তালেবান আসার পরে। কারণ স্ট্রিক্ট শরীয়া আইন যেহেতু ওরা ফলো করে, তাই কাউকে ঠকানো যাবেনা। সব জিনিসের সমান মাপ দিতে হবে।’’

তমাল আরও বলেন, অনেক ধরনের ল অ্যান্ড অর্ডার চেইঞ্জ হয়ে যায় আমি দেখেছি। যেহেতু ওরা একটা ধর্মালম্বী মানুষ এবং তাদের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তারা আমাদের সাথে চমৎকার আচরণ করেছে। এমনকি ওরা আমাদের ভারতীয় অ্যাম্বাসীকে নিরাপত্তা দিয়েছে।”

তালিবানরা বন্ধু

শনিবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয় তালিবানরা প্রায় দেড়শোজনকে অপহৃত করেছে। সেই দলে তমাল ভট্টাচার্যও ছিলেন। তিনি বলেছেন, কোনওভাবেই সেই ঘটনাকে অপহরণ বলা যাবে না। তাদের নিয়ে গিয়ে পাসপোর্ট-সহ সব নথি পরীক্ষার করা হয়েছে। তালিবানরা তাঁদের সঙ্গে ক্রিকেট পর্যন্ত খেলেছে। দলে থাকা মহিলাদের সঙ্গে কোনও খারাপ ব্যবহার তালিবানরা করেনি বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, কাবুলে কোনও সমস্যা নেই। সব দোকান-বাজার খোলা। তালিবানদের আন্তরিকতা, ভালবাসা, সহযোগিতায় তিনি কিংবা তাঁদের অন্য সহকর্মীরা আশ্বস্ত বলে জানিয়েছে তমাল। তবে তিনি সেখানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কাছে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তালিবানরা কি নারী বিদ্বেষী? তমালের স্পষ্ট কথা, তালিবানরা ইসলামি শরিয়তি আইন মেনে চলে। সেখানে কোথাও বলা নেই মেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে না। আফগানিস্তানে প্রচুর শিক্ষিত মহিলা আছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। মহিলারা বিভিন্ন জায়গায় কাজও করেন। প্রচুর মহিলা শিক্ষকতা করেন, তাঁরা তালিবান কাবুলে আসার পরে কাজ করে চলেছেন।

তালিবানদের সাহায্যেই দেশে ফেরা

তমাল জানিয়েছে, তালিবানদের তিনরকমের পদ রয়েছে। তালিবান অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, তালিবান ফাইটার্স এবং তালিবান ল অ্যান্ড ফোর্সেস। এদের সাহায্যেই দেশে ফেরা বলে জানিয়েছেন তিনি। যাঁদের কাছে পাসপোর্ট নেই, হারিয়ে গিয়েছে, তাঁদেরকেও বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে তালিবানরা। তাঁদেরকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে বাড়তি বন্দোবস্ত করা হয়েছিল তালিবানদের তরফে। খাবার থেকে জল সবই দেওয়া হয়েছে। তালিবানদের সম্পর্কে যা প্রচার করা হয়, তা একেবারেই ঠিক নয় বলেই দাবি করেছেন তিনি। তালিবানদের গুলিতে মৃত্যুর অভিযোগ প্রসঙ্গ তমাল বলেছেন, যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তা একেবারে অন্য কারণে। তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে বারবারই বলতে চেয়েছেন, তালিবানদের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা তৈরি করা হয়েছে। কেননা তাঁরা তালিবানদের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছেন, অন্য কিছু নয়।

কোলকাতা বিমানবন্দরে প্রশ্নবানে জর্জরিত, কাবুল থেকে ফিরে আসা এক বাঙ্গালী বিজ্ঞান শিক্ষক তমাল ভট্টাচার্য।  এর সাথে মিলিয়ে দেখুন মুসলিম বিদ্বেষী পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের অনুবাদভৃত্য বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার তরজমাজীবীরা আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কি লিখছে ও বলছে?
https://www.facebook.com/watch/?ref=external&v=818973795449230

১টি মন্তব্য

  1. এভাবে মন্তব্য করতে ও সাহস লাগে,হিন্দু হয়েও তিনি এভাবে বলেছেন। তাই তার জন্য,, হিদায়াতের দোয়া করছি

    আমাদের প্রিয় নবী (সঃ) এর চরিত্রের এবং শত্রুদের সাথেও সদাচরণ এর বিষয় যেমন কেউ অভিযোগ তুলতে পারেনি,,,,ঠিক-তালেবানদের বিরুদ্ধেও কেউ কখনও এমন অভিযোগ তুলে কথা বলতে পারবে না -ইংশা___আল্লহ।

Leave a Reply to Abu Ahmad Abdulloh প্রতিউত্তর বাতিল করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধহিন্দু পাড়ায় চুড়ি বিক্রি করায় এক মুসলিম বিক্রেতাকে গণপিটুনি
পরবর্তী নিবন্ধতল্লাশির নামে নারী ক্যান্সার রোগীর টাকা হাতিয়ে নিলো পুলিশ