বিচারহীনতার কারণে অপরাধ প্রবণতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে আইনের উপর থেকে। এতে করে অপরাধ এবং দুর্ঘটনা দুটোই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনই এক দুর্ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশে।
এমপির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের এক তরুণী দেশটির সুপ্রিমকোর্টের বাইরে ফেসবুক লাইভে এসে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করেছে। এ সময় তার এক বন্ধুও তার সআত্মহত্যা করেন। খবর এনডিটিভির।
এমপির বিরুদ্ধে মামলা করায় তাদের বিরুদ্ধে এমপির ভাই মিথ্যা মামলা করার প্রতিবাদে গত ১৬ আগস্ট দিল্লিতে সুপ্রিমকোর্টের সামনে তারা ফেসবুক লাইভে এসে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ সময় পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে। এমপির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা ২৪ বছরের ওই নারীর শরীরের ৮৫ শতাংশ এবং তার ২৭ বছর বয়সি ছেলে বন্ধুর শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে যায়। হাসপাতালে এক সপ্তাহ পর গত শনিবার চিকিৎসাধীন মারা যান ওই তরুণীর বন্ধু। তার পর দিন রোববার ওই তরুণীও মারা যান।
এ ঘটনার পর ২০২০ সালের নভেম্বরে ওই এমপির ভাই ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় প্রতারণার মামলা করে। এ বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে আদালত জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এ ঘটনার প্রতিবাদেই তার ছেলে বন্ধুকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া’ ২০১৯ রিপোর্ট বলছে দেশে মেয়েদের প্রতি সংঘটিত অপরাধে উত্তরপ্রদেশ রয়েছে শীর্ষে। গড়ে দিনে ৮৭ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। কন্যা শিশুর প্রতি অপরাধেও শীর্ষে রয়েছে রাজ্যটি। আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।
অতি সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে সংঘটিত গণধর্ষণ ও নৃশংস অত্যাচারে ১৯ বছরের এক দলিত তরুণীর মৃত্যুর অভিযোগে প্রায় নির্ভয়া হত্যার প্রতিবাদের মতোই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ । উন্নাও সহ হাথরাসের আগে ও পরে আরও বেশ কিছু ধর্ষিতার ওপর নৃশংস অত্যাচার ও হত্যার ঘটনা যেভাবে ঘটেই চলেছে, তাতে ধর্ষণকারীরা যে ক্রমশই রাজ্যে অকুতোভয় হয়ে উঠছে তাতে আর সন্দেহ নেই। দেখা যাচ্ছে শুধু সেপ্টেম্বরেই উত্তরপ্রদেশে ধর্ষণের ৯টি ঘটনা ঘটেছে যার মধ্যে ৮ বছরের শিশুকন্যা থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধাও আছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত যে ক্রমশ ধর্ষণের মৃগয়া ক্ষেত্র হয়ে উঠছে, তাতে বোধহয় আর সন্দেহের অবকাশ থাকছে না। এবং মনে হচ্ছে পতিতা ট্যুরইজম বা যৌন পর্যটনের মতো যদি লুকিয়ে চুরিয়ে এবার রেপ ট্যুরইজম বা ধর্ষণ পর্যটনও চালু হয়ে যায়, তাহলে ভারত বোধহয় হয়ে উঠবে পৃথিবীর অন্যতম গন্তব্য