আসামের মন্দিরে শিশুর মাথাকাটা মরদেহ; ভারতে চর্চা হয় নরবলির

1
2030
আসামের মন্দিরে শিশুর মাথাকাটা মরদেহ; ভারতে চর্চা হয় নরবলির

একুশ শতকেও বর্বরতার চিত্র দেখা গেল ভারতের আসামে। নরবলির অভিযোগকে ঘিরে ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। আসামের চরাইদেউ জেলার টিঙালিবামে কালীমন্দিরের পাশের একটি নালা থেকে গত সোমবার (২৩ আগস্ট) এক শিশুর মাথাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

স্থানীয় মানুষের সন্দেহ, শিশুটিকে বলি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আগস্ট মাসেই আসাম রাজ্যের চরাইদেউ জেলায় দুটি শিশু বলির ঘটনা ঘটেছে। শিশু বলির পাশাপাশি ডাইনি সন্দেহে হত্যার ঘটনা নিয়েও সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ বাড়ছে।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নরবলি বা শিশুবলির মতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রথা এখনও চলেছে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঝাড়ফুঁক, মন্ত্রতন্ত্র, জলপড়া বা তান্ত্রিকদের দাপট চলছে দিব্যি৷ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে এই কুসংস্কারের বলি হচ্ছে অনেক জীবন৷ সহজ নিশানা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নাবালক-নাবালিকারা৷

সাম্প্রতিক ঘটা এই ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে ওই শিশুকে বলি দেওয়া হয়েছে বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। কেননা মরদেহের পাশ থেকে তন্ত্র সাধনার উপকরণ পাওয়া গেছে।

এর আগে একই জেলাতে গত ১০ আগস্ট সাফ্রাই চা বাগানের সিংলু নদীর চর থেকে লাল শাড়ি পরা, ছাইমাখানো মাথাকাটা শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেই শিশুর মরদেহের পাশ থেকেও তন্ত্র সাধনা উপকরণ পাওয়া যায়।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৯ জুন গৌহাটির বিখ্যাত কামাক্ষা মন্দিরের কাছ থেকে চল্লিশ বছর বয়সী এক নারীর মাথাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশে পূজার সামগ্রী ও মাটির প্রদীপ দেখে তখনো নরবলির অভিযোগ ওঠে।

এই রাজ্যেরই উদালগুড়ি জেলার গণকপাড়ায় ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই নিজের তিন বছরের শিশুকে বলি দিতে গিয়ে ধরা পড়েন স্থানীয় শিক্ষক যাদব সহরিয়া ও তান্ত্রিক রমেশ সহরিয়া। শিশুটিকে হাঁড়িকাঠে ঢুকিয়ে উলঙ্গ নৃত্যে মেতে উঠেছিল তারা।

সেই সময় স্থানীয় মানুষ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পরে পুলিশ এসে গুলি চালিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। আসামে এ ধরনের মধ্যযুগীয় বর্বরতা বন্ধ হয়নি। ২০১৫ সালে রাজ্য সরকার এ ধরনের বর্বরতা থেকে মানুষকে বাঁচাতে কড়া আইন তৈরি করেছিল। তবে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি। মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠেনি সচেতনতাও।

ভারতে কুসংস্কার এশিয়ার যেকোনো দেশের তুলনায় আছে প্রবলভাবে।  সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পর্যন্ত ডাইনি সন্দেহে ১০৭ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কুসংস্কার রোধে সঠিক সরকারি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অভাবকেই দায়ী করছে কংগ্রেস।

এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা পার্থরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, বিজেপি সরকারে থাকায় মানুষের মধ্যে কুসংস্কার আরও বাড়ছে। এ ধরনের জঘন্য অপরাধ বন্ধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সবের বড় কারণ অশিক্ষা আর দারিদ্র৷ অন্ধবিশ্বাসে চালিত হয়ে এরা ভাগ্যের ওপর সব কিছু ছেড়ে দেয়৷ আর সেই সুযোগটাই নেয় তান্ত্রিকরা৷ নানা রকমের ঝাড়ফুঁক, কবজ-তাবিজ, পশুবলি, এমনকি নরবলি কিংবা শিশুবলি দিয়ে ভাগ্য ফেরাবার অথবা গুপ্তধন পাবার পরামর্শ দিয়ে থাকে তারা৷ এটা এখনও চলছে৷ পুলিশ প্রশাসন এটা বন্ধ করতে তেমন গা করছে না৷

এই নরবলি প্রথা শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই ছিল; তবে অতীতে৷ প্রাচীন গ্রিসে দেবতা জিউসের সামনে শিশুবলি দেবার প্রমাণ পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা৷ খরস্রোতা নদীর ওপর বাঁধ ও সেতু নির্মাণের আগে কিংবা ঘরবাড়ি তৈরির আগে অশুভশক্তিকে তুষ্ট করতে নরবলি দেওয়ার প্রথা ছিল জাপানে৷

মিশরে ফারাওদের কবরের সঙ্গে বেশ কিছু ক্রীতদাসকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হতো৷ দক্ষিণ এশিয়াতেও বড় বড় রাজা-মহারাজা বা জমিদারেরা বিশেষ কামনা পূরণের জন্য নরবলি দিত৷ নরমুণ্ড মালিনী, জিবে রক্তধারা, হাতে খাঁড়া নিয়ে দেবি কালীর বা দেবি চামুন্ডার বিগ্রহে অথবা বেদীতে নরবলি ছিল মর্যাদার প্রতীক৷ কালক্রমে এ প্রথাই মোষবলিতে বা পাঁঠা বলিতে নেমে আসে৷ হিন্দু পুরাণেও অশ্বমেধ যজ্ঞের মতো নরমেধ যজ্ঞের উল্লেখ আছে৷ কিন্তু এই একবিংশ শতকে এসে এই বর্বরতার চর্চা মেনে নেয়া যায় না।

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধইমারাতে ইসলামিয়া’র বিজয়ে আল-কায়েদার বিভিন্ন শাখার মোবারকবাদ ও শুভেচ্ছা বার্তা
পরবর্তী নিবন্ধপাকিস্তান | টিটিপির সফল বোমা বিস্ফোরণে ৪ মুরতাদ সেনা হতাহত