ফিলিস্তিনি এই নারীর নাম আনহার আল-দিক। ২৫ বছর বয়সী একজন গর্ভবতী নারী তিনি। চলতি মাসেই তার সন্তান প্রসব করার কথা রয়েছে। কিন্তু তিনি এখন বন্দী অভিশপ্ত ইসরায়েলের অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে। গর্ভবতী অবস্থায় তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ইহুদি সেনারা। দ্যা প্যালেস্টাইন কমিশন অফ ডিটেইনস অ্যান্ড প্রি-ডিটেনিজ অ্যাফেয়ার্স এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংস্থাটি জানায়, আনহারের যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি।
আনহার তাঁর আইনজীবীকে জানিয়েছেন যে, এখানে বন্দী সেলের ভিতরের অবস্থা খুবই খারাপ। এটি যে কোন মানুষের জন্য অনুপযুক্ত। এখানে আমার সন্তান প্রসবের কথা চিন্তাও করতে পারছিনা।
আনহার তার সন্তানকে জেলে আটকে রেখে বড় হওয়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
তিনি জানান, ইসরায়েলি কারাগার সন্তান জন্মদান এবং লালন -পালন করার জন্য প্রস্তুত নয়। জেলের অবস্থা খুবই খারাপ। আমি চিন্তা করতে পারছিনা কিভাবে একটি নবজাতক শিশুকে জন্মের পর আটকে রাখা হবে?
দখলদার কারাগারে ৪১ জন ফিলিস্তিনি নারী বন্দী রয়েছেন, তাদের মধ্যে ১২ জনের শিশু সন্তান রয়েছে। আন্তর্জাতিক কুফরি আইনে আছে, দখলকৃত এলাকার বন্দীদের এলাকার মধ্যেই রাখতে হবে। অথচ সন্ত্রাসী ইসরায়েল তাদের হাশারন এবং ড্যামন নামক কারাগারে বন্দী রেখেছে। এ দুটি কারাগার পশ্চিম তীরের বাহিরে।আন্তর্জাতিক কুফরি আইনের অধীনে ইসরাইলের কারাগারে এই নিয়ম অবৈধ। এছাড়াও অনেক বন্দি ফিলিস্তিনি নিজের পক্ষের আইনজীবী এবং পারিবারের সদস্যদের সাথেও সাক্ষাৎ করতে পারে না।
তাছাড়া, হাশারন এবং ড্যামন নামের দুটি কারাগারেই মেয়েদের জন্য মারাত্মক সমস্যা রয়েছে। মহিলা বন্দিরা কারাগারে কঠোর আচরণের শিকার হন। যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা অবহেলা, শিক্ষা প্রত্যাখ্যান, পারিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে না দেয়া,৷ ছোট বাচ্চাদের এবং মায়েদের জন্য নির্জন কারাপ্রকোষ্ঠ, উপচে পড়া ভিড় এবং তাদেরকে এমন প্রকোষ্ঠে রাখা হয় যা পোকামাকড় এবং ময়লা দিয়ে ভরা থাকে। তাছাড়া সেখানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক ও বাতাসের অভাব রয়েছে।
বন্দিদের স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি খুব কমই ইসরায়েলি কারাকর্তৃপক্ষ দ্বারা সমাধান করা হয়, এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের আটকে রাখার ক্ষেত্রেও।
অধিকন্তু, অধিকাংশ ফিলিস্তিনি নারী বন্দীরা তাদের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া চলাকালীন নানা ধরণের মানসিক নির্যাতন এবং অসদাচরণের শিকার হয়। যেমন মারধর, অপমান, হুমকি, ধর্ষণ এবং প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি।
গ্রেফতারের পর নারী বন্দীদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় তা জানানো হয় না এবং জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের অধীকারের কথা চিন্তা করা হয় না।
নির্যাতন ও দুর্ব্যবহারের এই কৌশলগুলি শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি নারী বন্দীদের ভয় দেখানোর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় না বরং ফিলিস্তিনি নারীদের অপমানিত করতে এবং তাদের স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। সন্ত্রাসী ইসরায়েলের কারা কর্তৃপক্ষ এবং সামরিক বাহিনী নারী বন্দীদের গ্রেফতার এবং এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তরের সময় মহিলা সৈনিক নিয়োগ করে। এক্ষেত্রে মহিলা সৈন্যরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় ফিলিস্তিনি বন্দীদের প্রতি কোনোক্ষেত্রেই কম সহিংস নয়।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে অ্যাডামির পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ফিলিস্তিনি মহিলা বন্দীদের প্রায় ৩৮% বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলেও, কারাকর্তৃপক্ষ তাদের কোনোরকম চিকিৎসাসেবা প্রদান করে না।
নিম্নমানের খাবার এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে বন্দীদের ওজন হ্রাস পাওয়া , সাধারণ দুর্বলতা, রক্তাসল্পতা এবং প্রয়োজনীয় শক্তি সামর্থের অভাব দেখা দেয়। তারা পুরুষ ও মহিলা কারারক্ষী উভয়ের কাছ থেকেই নিয়মিত কঠোর আচরণের মুখোমুখি হয়। বন্দীরা অসুস্থ বা গর্ভবতী থাকা সত্ত্বেও অভিশপ্ত ইহুদি সৈনিকরা তাদের সুস্থতা বা বিশেষ চাহিদার প্রতি নজর দেয় না।