মার্কিন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্থায়ী আর্থিক সঙ্কটের মুখমুখি হয়েছে মার্কিন জনগণ ও তাদের অহংকারী সরকার।
দুর্নীতিবাজ নীতিনির্ধারক আর অযোগ্য নেতৃত্বের একের পর এক অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের খেসারত দিচ্ছে এখন তাদেরই নীরব সমর্থক মার্কিন জনগণ। মাথা গোঁজার ছাদ আর নিত্যজীবনের গৃহস্থালি খড়চের সহায়তা হারিয়ে এখন উভয় সংকটে পড়েছে মার্কিন মধ্যবিত্তদের এক বিরাট অংশ।
৬৪ লক্ষ মার্কিন পরিবার নিয়মিত বাড়িভাড়া দিতে পারছিলনা; ‘ভাড়া দিতে না পাড়া লোকদের উচ্ছেদ করা যাবেনা মর্মে’ নির্দেশ জারি ছিল হোয়াইট হাউজের তরফ থেকে। তবে গত শুক্রবার এই নির্দেশনা বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
পাশাপাশি বেকারত্ব বীমার সুবিধাও কমে আসছে; কংগ্রেস বার বার চাপ দিলেও চলমান মেয়াদের পর বাইডেন প্রশাসন এই সাপ্তাহিক সুবিধা আর নবায়ন করতে আগ্রহী নয়। বরং রাজ্য সরকারগুলোকে ফেডারেল সরকার চাপ দিচ্ছে এব্যপারে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। খবর – ওয়াশিংটন পোস্ট।
উল্লেখ্য, এই বেকার ভাতার সুবিধার মেয়াদ ৬ সেপ্টেম্বর শেষ হতে যাচ্ছে। এটি নবায়ন না করা হলে প্রায় ৭৫ লক্ষ মার্কিনী সরাসরি হুমকিতে পরতে যাচ্ছে, যাদের অনেকেই আবার বাড়িভাড়া সহায়তা প্রকল্পের আওতায়ও ছিল।
আমেরিকান সেন্সাস ব্যুরোর এক জরিপে দেখা যাচ্ছে যে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এক-চতুর্থাংশ মার্কিনী তাদের নিত্যদিনের গৃহস্থালি খরচ নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে; আর এক-তৃতীয়াংশ বলছে যে তারা তাদের বাড়িভাড়াও নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছেনা। এই পরিস্থিতিতে বাড়িওয়ালাদের দ্বারা ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের হিরিক আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে অনেক মার্কিন বিশ্লেষক ও আইনপ্রণেতা।
দুনিয়াজুড়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মত্ত মার্কিনীরা এখন আর্থিক অনটনে পড়ে জনগণের বরাদ্দ সুবিধাগুলো একের পর এক কেটে নিতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতির পেছনের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা কয়েকটি দিকের কথা উল্লেখ করেছেন।
প্রথমত, অন্যান্য পশ্চিমা সরকারের মতো মার্কিন সরকারও অন্য দেশে অবৈধ হস্তক্ষেপ আর তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করেই নিজ জনগণকে উন্নত সুবিধা দিয়ে আসছিল। লাতিন আমেরিকা আর মুসলিম বিশ্ব থেকে লুট করে আনা সম্পদ দিয়েই তারা তাদের চাকচিক্যময় পাপের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। আর অনেক দেশেই মুজাহিদদের উত্থান ও তাদের পুতুলদের পতনের ফলে তাদের এই লুটের জোগান বন্ধ হয়ে গেছে; তাই তারা এখন জনগণকে এসব সুবিধা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, লুটের মালে গড়ে উঠা চাকচিক্য দেখিয়েই তারা বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে এসেছে এতদিন; এর ধোঁকাও বিশ্ববাসী বুঝে ফেলেছে। অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি অনেক সম্পদশালী মার্কিন নাগরিকরাও মার্কিন মুলুক থেকে মুখ ফিরিয়র নিচ্ছে। গত বছর করোনা শুরুর পরপরই বিবিসি এমন খবর প্রকাশ করেছিল যে, আমেরিকার সবচেয়ে ধনাঢ্য ও প্রভবশালী রকফেলর পরিবার তাদের সকল সম্পদ ধীরে ধীরে যুক্তরাজ্যে স্থানান্তর করতে যাচ্ছে।
তৃতীয় যে কারণটি বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন তা হল, এসব ঘটনাপ্রবাহের জেরে বিশ্বময় ডলারের আধিপত্যের সম্ভাব্য পতন। আরব বাদশাদের ডলারের টোপ গিলিয়ে মার্কিন ডলারের পেট্রোডলার হয়ে উঠা এবং ডলারের সাদা কাগজে রঙিন কালির খরচ দিয়েই আরবের তেল ভাণ্ডারের উপর প্রায় একছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা মার্কিনীদের সেই ফাঁকিও এখন প্রকাশের অপেক্ষায়।
কারণ আরও আছে। মার্কিন আর্থিক দৈন্য আর সক্ষমতার পতন টের পেয়ে তাদের অনেক মিত্রই এখন সরাসরি আর তাদের আধিপত্য মেনে নিচ্ছে না; অনেকেই আবার চীনের প্রতি সুর নরম করে দিয়েছে। এই বিষয়গুলোও মার্কিন প্রভাব খর্ব করতে ভূমিকা পালন করেছে কিছুটা।
সবদিক মিলিয়ে আমেরিকার চতুর্দিকেই এখন শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। ইরাক-আফগান থেকে বয়ে নিয়ে আসা এই অন্ধকারই হয়তো আমেরিকার চূড়ান্ত পতন নিশ্চিত করবে – এমনই আশা ব্যক্ত করছেন উম্মাহদরদি মুসলিম বিশ্লেষকগণ।
আমেরিকাকে, আমেরিকার অর্থনৈতিক মেরুদন্ডকে বাঁচিয়ে রেখেছে শয়তান পুজারীদের গুলাম সৌদীর বর্তমান রাজবংশ। সৌদী আমেরিকার কাছে ডলারে তেল বেঁচে ও অন্য দেশগুলোর কাছেও ডলারে তেল বেঁচে আ্মেরিকার অর্থনৈতিক মেরুদন্ড বাঁচিয়ে রেখেছে। ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধের পরে আমেরিকার অর্থনৈতিক অস্তিত্ত নিশ্চিন্ন হয়ে যেত যদি সৌদী ডলারে তেল না বেঁচে স্বর্ন দিয়ে চেল বেঁচতো। এখনো যদি সৌদী স্বর্ন দিয়ে তেল বেঁচা শুরু করে আমেরিকার অর্থনৈতিক অস্তিত্ত নিশ্চিন্ন হয়ে যাবে।