আহমদি ও নেজরাবি পরিবার দুটি তাদের সব মালামাল নিয়ে কাবুল বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। যেকোনো মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ক্ষণগণনা করছিল তারা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এর বদলে যে বার্তাটি পাঠাল তা হলো একটি রকেট তাদের বাড়িতে আঘাত হানল।
রোববার বিকেলের ওই ড্রোন হামলায় দুটি পরিবারের ১০ জন নিহত হয়। তাদের বয়স ২ থেকে ১০ বছর। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, আইএস সদস্যদের টার্গেট করে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।
নিহতদের মধ্যে আইমাল আহমদির ভাতিজারাও রয়েছে। ঘটনাটি তিনি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না। তার ভাই, ভাতিজি আর ভাতিজাদেরকে যে মিডিয়া চিনতে পারেনি, তাতে তিনি আরো ক্রুদ্ধ।
তাদের মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পরও মিডিয়ায় তিনি ও তার পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্যরা শুনছিলেন যে সন্দেহভাজন আইএসকেপির সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিহতদের বেশির ভাগই মাসুম বাচ্চা, অসহায় শিশু। এদের মধ্যে দুই বছরের মালাইকাও রয়েছে। ড্রোন হামলায় আহমদিও নিহত হতে পারতেন। তিনি তখন কিছু কেনাকাটা করতে মুদি দোকানে গিয়েছিলেন। নইলে নিহতদের তালিকায় তার নামও ওঠে যেত।
তিনি বলেন, তার ভাই, ৪০ বছর বয়স্ক জেমারাই সবেমাত্র কাজ শেষে বাড়ি ফিরেছিলেন। তার পরিবার দুটি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে চাচ্ছিল, তাই জেমারাই তার এক ছেলেকে গাড়িটি তাদের দোতলা বাড়ির ভেতরে পার্ক করতে বলেছিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন, তার অপেক্ষাকৃত বড় ছেলেরা যেন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগেই ড্রাইভিংটা শিখে নেয়।
কয়েকটি শিশু দ্রুত গাড়িতে চড়ে বসে। তারা তাদের পারিবারিক বাড়ির বাগান থেকে সামান্য একটু রাস্তা ঘুরে বেড়াতে চেয়েছিল।
আহমদি আল জাজিরাকে বলেন, গাড়িটি থামামাত্র রকেট তাতে আঘাত হানে।
দেয়ালগুলো রক্তে লাল
এরপর যা ঘটল, তা আফগানিস্তানের সাধারণ দৃশ্য : স্বজন আর প্রতিবেশীরা দৌড়ে চলে এলো। কেউ আনল পানি, কেউ আগুন উপেক্ষা করে টয়োটা সেডান গাড়ির ভেতর থেকে বাচ্চাদের বের করার চেষ্টা করতে লাগল।
প্রতিবেশীরা আল জাজিরাকে জানায়, ছোট শিশুরা মাত্র কিছুক্ষণ আগেও খেলছিল। দেয়ালে মানুষের গোশতের দলায় তখন ভীতিকর দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। কোথায় হয়তো হাড় দেখা যাচ্ছে। আর দেয়ালসহ সবজায়গা রক্তে লাল।
এই দৃশ্য যখন সবাই দেখছিল, তখন সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্র তার বক্তব্য প্রচার করেই যাচ্ছিল : একটি ড্রোন আজ কাবুলে একটি গাড়িতে আঘাত হেনেছে, আইএসআইএস-কের হুমকি নির্মূল করা হয়েছে। একবারের জন্যও বেসামরিক নাগরিক হত্যার কথা স্বীকার করেনি তারা।
সন্ধ্যায় অবশ্য মার্কিন সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ঘটনা তদন্ত করছে।
প্রতিবেশী আবদুল মতিন বলেন, আমরা সবাই আফগান। তাই কিছুইতেই ওয়াশিংটনের ভাষ্য বিশ্বাস করতে পারছি না।
তাদের জন্য কষ্টকর ব্যাপার হলো, মার্কিন-সমর্থিত সরকারের বিভিন্ন পদে এই পরিবার দুটির অনেক সদস্য কাজ করেছেন। অথচ তাদেরই শুনতে হলো যে তারা সন্ত্রাসী।
সূত্র : আল জাজিরা