ইসরাইলি কারাগারে বন্দী মায়ের ছয় বছর : মিলছে না প্রয়োজনীয় জরুরী চিকিৎসা!

0
970
ইসরাইলি কারাগারে বন্দী মায়ের ছয় বছর : মিলছে না প্রয়োজনীয় জরুরী চিকিৎসা!

সম্প্রতি ইসরাইলি অন্ধকার কারাগারে বন্দীত্বের ছয় বছর পূর্ণ করেছেন অসহায় ফিলিস্তিনি মা ইসরা জাবিস। কারাগারের প্রথম দিন থেকেই তাঁর জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হলেও বর্বর ইসরাইলিরা তার চিকিৎসার অনুমতি দেয়নি।

৩৭ বছর বয়সী এই মা’কে ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর দখলদার ইসরাইল গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। জেরুজালেমের একটি চেকপয়েন্টে ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণ চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল তাঁকে।

সুত্রে জানা যায়, তিনি এবং তাঁর পরিবার জেরুজালেমে নিজ বাড়ি দখলদার ইসরাইলের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত রাখার জন্য অন্য বাড়ি থেকে মালপত্র নিয়ে আসছিলেন। এ সময় রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার চেকপয়েন্ট থেকে ৫০০ মিটার দূরে ফেটে আগুন ধরে যায়। এতে তিনি ও তাঁর ১৪ বছরের ছেলে গুরুতর আহত হন। তাঁর শরীরের প্রায় ৬৫ শতাংশ পুরে গিয়েছিল, যার মধ্যে মুখ এবং হাতের ক্ষত বেশি ছিল।

ঐ অবস্থায় গ্রেফতারের পর তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হলে ৮ টি আঙুল কেটে ফেলা হয়। আর বর্বর ইসরাইলি আদালতও গুরুতর আহত এই মাজলুম মাকে মুক্তি না দিয়ে উল্টো ইহুদি সেনাদের হত্যা চেষ্টার নামে মিথ্যা মামলায় ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

বর্তমানে তাঁর শারিরীক অবস্থা খুবই করুণ। তাঁর পোড়া হাতটি নিচের চামড়ার সাথে আটকে থাকায় ঐ হাত সব দিকে উঠানামা করতে পারে না। ডান কান প্রায় অস্তিত্বহীন এবং সার্বক্ষণিক এতে ব্যাথা থাকে। নাকের একপাশে অল্প একটু ফাঁকা হয়ে থাকায় বেশিরভাগ সময় তাকে মুখ দিয়ে নিশ্বাস নিতে হয়। আর বাতাসের সংস্পর্শে আসলেই তার চোখ থেকে পানি পড়ে। এসব শারীরিক সমস্যা ছাড়াও তিনি আরও কিছু গুরুতর রোগে ভুগছেন।

বেশ কয়েকবার ইসরা জাবিসের মুক্তি ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার আবেদন করা হলেও দখলদার কর্তৃপক্ষ না তাঁর মুক্তির ব্যাপারে কোন সাড়া দিয়েছে, আর না তাঁর চিকিৎসার কোন পদক্ষেপ নিয়েছে।

ইসরা জাবিসের মতো এরকম আরও ৯ জন ফিলিস্তিনি মা রয়েছেন, যারা তাদের পরিবার, সন্তান ও একটি সম্মানজনক জীবন-যাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ইসরাইলি কারাগারে বন্দী আছেন বছরের পর বছর ধরে। তাদেরকে তাদের নিজ এলাকা পশ্চিম তীরে থেকে অনেক দূরে হাশারণ ও ড্যামন নামক কারাগারে রাখা হয়, যা ১৯৬৭ সালের ৪র্থ জেনেভা কনভেনশনের ৭৬ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। উক্ত ধারাতে বলা আছে যে, কোন দখলকৃত এলাকার বন্দীদেরকে তাদের নিজ নিজ এলাকার কারাগারে রাখতে হবে।

তাছাড়া হাশারন এবং ড্যামন উভয় কারাগারেই নানা সমস্যা রয়েছে। মহিলা বন্দীরা প্রায়শই কঠোর কারাবাসের শর্ত ভোগ করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা অবহেলা, শিক্ষা প্রত্যাখ্যান, আত্বীয় স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে বাধা প্রদান, নির্জন কারাবাস, পোকামাকড় এবং ময়লা দ্বারা নোংরা কক্ষ এবং প্রাকৃতিক আলোর অভাব।

অধিকন্তু, ফিলিস্তিনি নারী বন্দীদের বেশিরভাগই গ্রেপ্তার ও আটকের সময় শারীরিক-মানসিক নির্যাতন ও অসদাচরণের শিকার হয়। যার মধ্যে মারধর, অপমান, হুমকি, দেহ অনুসন্ধানের মতো হীন কর্মকাণ্ড সাধারণভাবেই ঘটে। আর গ্রেফতারের পর নারী বন্দীদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা তাদেরকে জানানো হয় না।

এখানে উল্লেখ্য যে মিডিয়া, পশ্চিমা মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসঙ্ঘ – এই কথিত মানতার ফেরিওয়ালারা আফগানিস্তানের মতো মুসলিম দেশগুলোতে নারী অধিকার নিয়ে মেকিকান্না কাঁদে; অথচ দখলদার ইসরাইলের নিয়মিত বর্বর কর্মকাণ্ডে ফিলিস্তিনি বন্দী নারীদের এমন করুণ অবস্থার পরেও তারা অন্ধ ও বধির সেজে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে।

তথ্যসূত্র :
——-
Israa Jaabis: Six years passed in Israeli jails while her burns still bleeding –
https://qudsnen.co/?p=30256&amp

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধহিন্দুত্ববাদের ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ব এবং হলুদ মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব : প্রেক্ষিত কুমিল্লায় কোরআন অবমাননা
পরবর্তী নিবন্ধউগান্ডায় মানবরচিত আইনের প্রতি অনিহার বিপরীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইসলামি শরিয়াহ আইন