সিলেটের কানাইঘাট ভারত সীমান্তে ৩ দিন ধরে পড়ে থাকা দুই হতভাগা বাংলাদেশীর অর্ধগলিত লাশ হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক শেষে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের দায় কার, এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে বিজিবি-বিএসএফ। বিজিবির এক কর্মকর্তারা জানায়, পতাকা বৈঠকে হত্যার দায় অস্বীকার করেছে বিএসএফ। এমনকি মরদেহগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। যদিও বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মরদেহগুলো ভারতের অভ্যন্তরে রয়েছে।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ জানিয়েছে, নিহতের দু’জনকেই কপালে গুলি করা হয়েছে। যে ধরনের গুলি ব্যবহার করা হয়েছে তা সাধারণত সীমান্তরক্ষী বাহিনী ব্যবহার করে।
গুলি ঐ দুই মুসলিমের কপাল দিয়ে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। একজনের মাথায় একটি ও অপরজনের মাথায় দুটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
নিহতের পরিবারের এক সদস্য জানায়, স্থানীয় লালবাজারে যাওয়ার কথা বলে বিকেলে আরিফ ও আসকর বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। ডোনা সীমান্ত এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে তারা শুনেছেন আসকর ও আরিফ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উখিয়াং এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছিলেন। এ সময় তাদের ওপর গুলি করে বিএসএফ। ঘটনাস্থলেই দুজন মারা গেলে তাদের মরদেহ সীমান্তের ১৩৩১ মেইন পিলারের পাশে ফেলে রেখে যায় বিএসএফ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে এমন তিন রাজ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের ক্ষমতা বাড়িয়েছে ভারত। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, পাঞ্জাব, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ডে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় বিএসএফ গ্রেপ্তার, তল্লাশি ও বাজেয়াপ্ত করার কাজ করতে পারবে।
বিশেষ ক্ষমতা লাভের পর থেকে অন্তত ডজন খানেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সীমান্তে।
এসব ঘটনায় ভারতের রাজ্যসরকার প্রতিবাদ জানালেও বাংলাদেশ সরকার ছিল একেবারে নীরব।
দালাল সরকারের অযোগ্য মন্ত্রীদের নীরবতায় বিএসএফকে আরও বেশি উদ্ধত করে তুলেছে। এজন্যই তারা ঐ দুই মুসলিমকে গ্রেফতারের পর ঠান্ডা মাথায় কপালে গুলিতে হত্যা করে এবং সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এনে ফেলে যায়।
অথচ এ ঘটনায় সরকারের উর্ধতন কোন কর্মকর্তা ভারতের বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি। অন্যদিকে তথাকথিত সুশীল সমাজ ও মানবতাবাদীরাও ছিলেন নিরব। কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মুসলিমরা এই ঘটনা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই আক্ষেপ করে বলছেন, সরকার ভারতকে টনকে টন ইলিশ উপহার দিচ্ছে, বিপরীতে ভারত আমাদের লাশ উপহার দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিএসএফ এখন মাদক কারবারিদের ধাওা করার নাম করে সীমান্ত পেরিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশি মুসলিমদের বাড়ি ঘরে হামলা চলাচ্ছে, এমনকি করছে অপহরণও, যার মধ্যে অনেকেরই পরবর্তীতে কোন হদিস পাওয়া যায় না।
ইংরেজ জামানার আগে মারাঠা বর্গিরা যেমন সাধি মুসলিম নবাবদের সীমান্ত এলাকার মুসলিমদের উপর হামলা লুটপাট ও হত্যাযজ্ঞ চালাত, বিএসএফ সন্ত্রাসীরা সেই ধারাকেই পুনরায় ফিরিয়ে এনেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তথ্যসূত্র:
======
১। দুজনকেই কপালে গুলি করে হত্যা
https://tinyurl.com/scnx9wz9