বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে হিন্দুত্ববাদী ভারতের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফিরিস্তি

মাহমুদ উল্লাহ্‌

0
1430
বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে হিন্দুত্ববাদী ভারতের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফিরিস্তি

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য নাগাল্যান্ডে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১২ জন গ্রামবাসী নিহত হয়েছে। অতিমাত্রায় মুসলিম বিদ্বেষে কারণে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ‘ভুল করে’ নিজেদের লোকদেরই হত্যা করেছে হিন্দুত্ববাদী বিএসএফ।

এপ্রিল মাসে আসাম-মিজোরাম সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর আবারো অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো ভারতে।

তারা জানিয়েছে, নাগাল্যন্ডের মন জেলায় ওটিং গ্রামে ’সন্ত্রাসদমন অভিযান চালানোর সময় নিরাপত্তাবাহিনী গুলি চালায়। তাতেই মারা যান গ্রামবাসীরা। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় এক জওয়ানেরও মৃত্যু হয়েছে। গ্রামটি মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত।

স্বরাষ্ট্র কমিশনার অভিজিৎ সিংহ সোমবার রাতেই দাবি করেছিলেন, নাগাল্যান্ডের ওটিংয়ে গত শনিবারের ঘটনার জন্য দায়ী সেনা কমান্ডোদের ‘ভুল খবর’ ও ‘নিয়ন্ত্রণহীন গুলিচালনা’।

পরে টিজিট পুলিশ তাদের এফআইআরেও লিখেছে, ‘পুলিশকে কোনো খবর না দিয়েই কমান্ডোরা গ্রামবাসীদের আসার পথে ওঁত পেতে ছিল। গ্রামবাসীদের গাড়ি দেখেই তারা বিনা প্ররোচনায় গুলি করে লোক মেরেছে। গ্রামবাসীদের হত্যা বা জখম করাই ছিল সেনার উদ্দেশ্য।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য উল্লেখ করে পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম দফায় কমান্ডোরা ছয়জনকে গুলি করে মারে। এর পর তাদের লাশ আনতে গেলে সাত গ্রামবাসীকে হত্যা করে তারা। জখম করে ২২ জনকে। এর পরে কমান্ডোরা যথেচ্ছ গুলি চালাতে চালাতে আসামের দিকে পালায়।

জখমদের আরো একজন মারা যাওয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ছয় সপ্তাহের মধ্যে ওটিংয়ের ঘটনার রিপোর্ট দিতে বলেছে কেন্দ্র ও নাগাল্যান্ড সরকারকে।

রোববার সন্ধ্যায় সহিংসতায় সেখানে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। আসাম রাইফেলসের ঘাঁটিতে আক্রমণ করতে গিয়ে প্রাণ হারায় ওই গ্রামবাসী।

আসাম রাইফেলসের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, ‘গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়েই সন্ত্রাসবাদীদের ধরতে ওটিং গ্রামে অভিযান চালায় সেনা জওয়ানরা।

তবে এই ব্যাপারে সর্ব মহল একমত যে, সেখানের নিহতরা হিন্দু না হয়ে মুসলিম হলে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের নিশ্চিত সন্ত্রাসী বলে চালিয়ে দিত। যা বর্তমানে কাশ্মীরী মুসলিমদের সাথে হচ্ছে।

অন্যায়ভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করার মত জঘন্য ঘটনা যেন জানাজানি না হয়, সে কারণে মন জেলাজুড়ে ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা আগেই বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। নির্দেশে বলা হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের মাধ্যমে যাতে কোনো খবর বা ছবি ছড়াতে না পারে সে কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ঠিক একাজটাই এতদিন কাম্মীরি মুসলিদের সাথে হয়ে আসছিল বিভিন্ন ট্যাগ লাগিয়ে তাওহিদবাদি মুসলিদের হত্যা করে, যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অকেজো করে দিত।
যাতে তাদের অপকর্মের কথা ছড়িয়ে না পড়ে।

তবে পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতে মিডিয়া ও কর্তৃপক্ষ যত বাহানাই প্রচার করুক না কেন, হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ আসাম ও খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগাল্যান্ড রাজ্যের মধ্যে যে আন্তঃকোন্দল ও সীমানা বিরোধ চলে আসছে, এই ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

পূর্ব ভারতের খ্রিস্টান প্রধান রাজ্যগুলোর দীর্ঘদিনের স্বাধীনতা অর্জনের যে স্বপ্ন, তার প্রতিক্রিয়া হিসেবেও এই ঘটনা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘতান হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

তথ্যসূত্র :
—–
১। ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ, এফআইআর দায়ের নাগাল্যান্ড পুলিশের
https://tinyurl.com/yckzhwpu
২। নাগাল্যান্ডে অভিযানে কেন গিয়েছিল সেনা
https://tinyurl.com/mrxdz93b
৩। ফের উত্তেজনা নাগাল্যান্ডে, সেনা ঘাঁটিতে আক্রমণ গ্রামবাসীদের
https://tinyurl.com/2p9d7p9k

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিহত হলো কাশ্মীরি মুসলিমদের হত্যাকারী নেতা বিপিন রাওয়াত
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ সীমান্তে গুলিবর্ষণ : কোনো সদুত্তর দেয়নি হিন্দুত্ববাদী বিএসএফ