কাশ্মীরি এক হতভাগ্য পিতা মুশতাক ওয়ানি।
গত ১২টি মাস ধরে মুশতাক ওয়ানি ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত তার ১৬ বছরের ছেলের লাশ ফেরত চাইছেন। ছেলে আতহার মুশতাকের জন্য তিনি ১২ মাস আগে থেকে কবরও খুঁড়ে রেখেছেন, সেই কবরে ছেলেকে দাফন করতে চান তিনি।
আতহার মুস্তাক ও তার ২ বন্ধুকে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভুয়া এনকাউন্টারে হত্যা করে বর্বর ভারতীয় দখলদার বাহিনী।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরা এক ভিডিওতে তিনি বলছিলেন –
“ভারতের সৈনিক, পদবি পাওয়ার জন্য কাকে খুন করে.?. ঐ ছোট ছোট বাচ্চাদের। ঐ বোনদেরকে আমি মোবারকবাদ জানাই, গোটা হিন্দুস্তানকে মোবারকবাদ জানাই…
মিডিয়ায় যা দেখায়- আমরা এনকাউন্টার করেছি, এটা তো শুধু এমনই, ভুয়া এনকাউন্টার। … এখন আমি ইনসাফ চাই। আমাকে এখন আমার ছেলের লাশ ফেরত দিন। এখন আমি ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করব, যতক্ষণ আমি জিবিত থাকবো।”
তিনি আরও বলেন, “আর আমি কালকে শ্রীনগরেও যাচ্ছি, ওখানে যদি আমার ছেলের লাশ না পাই, তাহলে আমি আত্মহত্যা করে ফেলব, ওখানেই। ব্যস, আর কিছু বাকি নেই…
আমি অপেক্ষা করব।”
অসহায় এই পিতা এমন আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে ভাবছেন, এভাবে বুঝি তিনি তার ছেলের লাশ ফেরত পাবেন। কিন্তু অসহায় পিতা এটা জানেন না যে, দখলদার হিন্দুত্ববাদী সেনাদের মন এভাবে গলানো যাবে না।
একদিকে কাশ্মীরি মায়েরা বন্দী ছেলেকে দেখার আক্ষেপ নিয়ে দিনাতিপাত করেন। আর অন্যদিকে কাশ্মীরি পিতারা, সন্তানের লাশ ফেরত চেয়ে মিছিলে শ্লোগান তুলেন; আবার ঘরে থাকা কন্যাদের আব্রুর নিরাপত্তা চিন্তায় উদ্বেগে দিন কাটান।
উদ্বিগ্ন হবার কারণও যথেষ্ট।
উপত্যকায় প্রতি ১০ জন কাশ্মীরি মুসলিমের জন্য নিয়োজিত রয়েছে একজন করে সশস্ত্র রক্তপিপাশু ভারতীয় সৈনিক… এই নিষ্ঠুর হিন্দুত্তবাদী সন্ত্রাসী বাহিনী যখন ইচ্ছা, যাকে ইচ্ছা হত্যা করতে পারে। এই দখলদারদের পাশবিকতার বলি হয়ে গত ৩০ বছরে ১১ হাজার কাশ্মীরি মুসলিম নারী ধর্ষিতা হয়েছেন
এভাবেই রক্ত ঝরছে কাশ্মীরে, আর এভাবেই নিশ্চুপ হয়ে আছি আমরা, যেন কিছুই শুনছি না, কিছুই দেখছি না, আর কিছু বলছিও না।
একসময় কাশ্মীরি মুসলিমরা স্যেকুলার পাকিস্তানের গাদ্দার সেনাদের ফাঁদে পা দিয়েছিল, ঐ গাদ্দাররা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যই কাশ্মীরি মুসলিমদের প্রতিরোধ যুদ্ধকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইতো। কেউ কেউ আবার নিজেদের আন্দোলন সংগ্রামকে স্যেকুলারদের বেঁধে দেওয়া ছকে আটকে রেখেছিল।
তবু তারা রক্ত দিয়েছে অনেক, অনেক ত্যাগ স্বীকারের পরেও তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা বা ইনসাফভিত্তিক শরয়ি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি।
কিন্তু সময় এখন পালটেছে; তাওহীদবাদী কাশ্মীরি মুসলিমরা নতুন উদ্যমে তাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছেন। এখন তারা আর শুধু রক্ত দিচ্ছেন না, জালেম ভারতীয় দখলদারদের শিবিরে পাল্টা আঘাতও হানছেন।
ইসলামি চিন্তাবীদগণ তাই এখন বলছেন, বিশ্ববাসীর এখন উচিৎ কাশ্মীরি মুসলিমদের এই সংগ্রামে পাশে দাঁড়ানো, তাদের পক্ষে কথা বলা, নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং তাদের উপর ভারতীয় আগ্রাসী বাহীনির এই জুলুম নিপীড়নের চিত্র স্পষ্ট করে তুলে ধরা।
আর ভুলে যাওয়া কাশ্মীরের জুলুম-নিপীড়নের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করে তোলা।
তথ্যসূত্র :
——
১। For 12 months, Mushtaq Wani has been waiting for the body of his 16-year-old son to be returned to him so he can bury his son in a grave he dug 12 months ago –
https://tinyurl.com/bddxjse5