হিন্দুত্ববাদীরা ভারতকে কথিত গণতন্ত্রের বৃহৎ দেশ দাবি করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে ইসলাম ও মুসলিমদের নিয়ে কটূক্তি ও বিদ্বেষ ছড়াতে থাকে। অথচ হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধ গণমাধ্যমে তুলে ধরায় তাদের আক্রোশের বলি হতে হয় নিরপেক্ষ গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদেরকে। তবে যারা হিন্দুত্ববাদের পা-চাটা দালাল হয়ে হলুদ সাংবাদিকতা করে তাদের কদর অনেক বেশি। তাদের কাজই হল মিথ্যাকে সত্য আর তিলকে তাল বানিয়ে প্রভুদের খুশি রাখা।
রাইটস অ্যান্ড রিস্কস অ্যানালাইসিস গ্রুপ (আরআরএজি) ইন্ডিয়া প্রেস ফ্রিডম রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে, বিগত এক বছরে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা কমপক্ষে ৬ সাংবাদিককে হত্যা করেছে। ১০৮ জন সাংবাদিকের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। এবং ১৩ টি মিডিয়া হাউসকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সাংবাদিক/মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালানো হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে ২৫ টি। তারপরে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ত্রিপুরা, দিল্লি, বিহার, আসাম, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও মণিপুর, কর্ণাটকসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১০০ টি হামলা চালানো হয়েছে।
নিহত ছয় সাংবাদিকের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে একজন করে সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। আটজন মহিলা সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত ২০১৯ সালে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বাতিল করার পর থেকেই সাংবাদিকদের উপর হিন্দুত্ববাদী ভারতের নিপীড়ন বেড়েছে। মুসলিম দমনের উদ্দেশ্যে রচিত তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তদন্তের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। অসংখ্য সাংবাদিককে গ্রেফতার ও মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের একজন সাংবাদিক আল-জাজিরাকে জানায়, ভারতীয় গোয়েন্দা, পুলিশ এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযান, হয়রানি এবং জিজ্ঞাসাবাদ কাশ্মীরে একটি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি সরকার কাশ্মীরে সাংবাদিকতাকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।
তিনি আরও জানায়, এখানে সাংবাদিকতা পুরোপুরি অপরাধমূলক। সাংবাদিকরা শুধু নিজেদের জীবন নিয়ে নয়, পরিবারের জন্যও ভীত, কারণ তারাও এখন হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমাদের সবকিছুই এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।’
এসব কারণে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-এর ২০২১ সালের বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স ভারতকে ১৮০ টি দেশের মধ্যে ১৪২-এ স্থান দিয়েছে। এটিকে “সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলির মধ্যে একটি” বলে অভিহিত করেছিল। কারণ “মিডিয়ার উপর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার প্রচুর চাপ বাড়িয়েছে।”
অপশাসনের প্রশ্ন বা সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের উপর ক্রমাগত আক্রমণ হয়েছে। চাকরির নিরাপত্তাহীনতা সহ সাংবাদিকদের নিয়মিতভাবে হুমকি দেওয়া হয়, ভয় দেখানো হয়, গ্রেপ্তার করা হয়, মামলা করা হয়—এবং রাষ্ট্র কর্তৃক অভিযোগের মাধ্যমে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের মধ্যে যারাই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয় বা UAPA-এর মতো কঠোর আইনের অধীনে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যাতে প্রমাণ সরবরাহ করার প্রয়োজন ছাড়াই একতরফাভাবে ব্যক্তিদের সন্ত্রাসী হিসাবে আখ্যায়িত করে। ফলে সাংবাদিকতার জন্য ভারত সত্যিই একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক জায়গা হয়ে উঠেছে।